ঔরঙ্গাবাদে ১৬ জন পরিযায়ী শ্রমিকের রেল দুর্ঘটনায় মৃত্যু নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা ” আখতারি খাতুন

আলম সেখ, নতুন গতি : দেশের পরিস্থিতির উপর প্রতিনিয়ত কবিতা লিখে যান মালদহ জেলার কালিয়াচক কলেজের ছাত্রী আখতারি খাতুন । কালিয়াচক বইমেলা কমিটির মেম্বার এই লেখিকা বড় বড় বিষয় কে কবিতা আকারে প্রকাশ করে দেই, ওনার লেখা শত শত কবিতা বেরিয়েছে অনেক পত্রিকায়, ওনার এই কলমের প্রতিবাদের জন্য মানুষের কাছে খুব প্রিয় এই লেখিকা, জেলার বিভিন্ন উৎসবে উচু সন্মানে সম্মানিত হয় ইনি। শুধু জেলায় নয় সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অনেক সুপরিচিত হয়ে গেছেন বাংলায়। কিছুদিন আগে ঔরঙ্গাবাদে রেলের চাকার তলে কাটা পড়ে মারা যান ১৬ জন পরিযায়ী শ্রমিক। এই ঘটনাকে সামনে রেখে আবারও কবিতা লিখলেন তিনি, কবিতার নাম দিয়েছেন ” ফিরে গেলাম।

    “ফিরে গেলাম”
    -আখতারি খাতুন

    ফিরে আসতে চেয়েছিলাম,
    আমার সেই সুন্দর সাজানো সংসার মাটির রাজ প্রাসাদে।
    অপেক্ষায় ছিল জন্ম দাত্রী মা,প্রাণ প্রিয়া স্ত্রী,আর আমার সেই ছোট্ট পাঁচ বছরের ফুট ফুটে মেয়েটি।
    আর কিছুটা পথ এগিয়ে গেলেই হয়তো
    পৌঁছে যেতাম।
    কিন্তু খিদের ক্লান্ত শরীর নেতিয়ে পড়ে ছিলাম ওই রেললাইনে,
    এ হয়তো না ফেরার দেশের ঘুম।
    মাল বাহী ট্রেন শুকনো রুটি খাওয়া দেহ টাকে করলো খন্ড।
    না, আর ফিরে আসা হলো না,
    ফিরে গেলাম না ফেরার দেশে,
    কিছু স্মৃতি রেখে গেলাম,আমাদের হাতে তৈরী ওই রাজ প্রাসাদ, শহরের অট্টালিকা,বিচারের আদালত।
    তবে এবার ফিরে গেলাম পায়ে হেঁটে নয়,সরকারের দেওয়া লাল-নীল বাতির গাড়িতে।
    গোটা দেহে নয়, খন্ড দেহে।আর হাতে কোদাল-সাবল-গাইথি এর দরকার নেই পেটে খিদেও নেই।
    পায়ে হেঁটে আসলে হয়তো পরিবার ছাড়া কেউ জানতোনা।ফিরে গেলাম তাই জানলো স্বজন, মেম্বার, প্রধান থেকে মন্ত্রী মহল এমন কি গোটা বিশ্ব।
    রাজ প্রাসাদের দু পাশে থৈ থৈ মানুষ।লাল-নীল বাতির গাড়িটা,আস্তে আস্তে পৌঁছে দিল ওই না ফেরার দেশে।
    ফিরে গেলো, তবে মুখোশ ধারী গরীব বিদ্বেষী নির্লজ্জ সরকার নামে হায়নার মুখোশ করলো উন্মোচন।
    কু-কীর্তি দেখো রাজা হয়েছে উলঙ্গ।
    বেঁচে থাকতে দু মুঠো ভাত জোটেনি। পরিযায়ীদের, মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য একটা গাড়ি জোটেনি।ছি সরকার ছি,গরীবের রক্তে এতো স্বাদ?আর কতো রক্ত লাগবে বলো সরকার বলো?তুমি বলবে না, বলতে পারবে না।চুরি করে তুমি গরীবের রক্ত করবে শোষণ। ওত পেতে বসে আছো রাত জাগা পেঁচাদের মতো?
    সময় বেশি দূরে নয়,যেদিন তোমার ওই বিষদাঁত ভাঙবে বেঁচে থাকা শ্রমিকের দল, শুধু অপেক্ষা।

     

    লকডাউনের কারণে সব চাইতে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত পরিযায়ী শ্রমিকেরা, হাজার হাজার কিলোমিটার পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরছেন তারা, কেউ আবার রাস্তায় মারা যাচ্ছেন, কিছুদিন আগে আমারা দেখেছি দিল্লির যমুনা নদীর ধারে শত শত শ্রমিক অসহায় ভাবে পরে আছে, রাজধানীর এই ঘটনা নিয়ে সমালোচনা হয়েছে দেশ ব্যাপী, সেই দিল্লির হৃদয় কাঁপানো ঘটনা নিয়েও থেমে থাকেনি এই লেখিকার কলম। সেই ঘটনাকেও কবিতায় প্রকাশ করে দিয়েছেন, কবিতার নাম দিয়েছেন ” সব মনে রাখবো ।

     

    “সব মনে রাখবো”
    -আখতারি খাতুন

    আমার ভারত শুয়ে আছে যমুনার তীরে,
    খিদের জ্বালায় করছে ছট্ফট্
    শাসক তুমি চোখে ঠুলি পড়ে বসে আছো গদির ‘পরে।আমার রক্ত পানি করা মেহনতের সিংহাসন নিয়ে করছো তুমি বাহাদুরি।
    মুরোদ নেই তোমার দু মুঠো ভাত দেবার, পুলিশ-প্রশাসন দিয়ে করাও লাঠির আঘাত।
    আমাদেরও আসবে সুদিন,ভুলে যাবো না এই দুর্দিন।সব,সব মনে রাখবো তোমার ওই কু-কীর্তি।
    নর-পিশাচ,নর-খাদক,
    এই দুর্দিনেও করছো তুমি জাত-বিচার,
    খিদা যে মানেনা ধর্ম-বর্ণের রঙ।
    তোমার ঘুষ খাওয়া মিডিয়া দালাল করছে মিথ্যা প্রচার,গদিতে বসে দেখছ তুমি তামাশা।
    সব, সব মনে রাখবো তোমার ওই কু-কীর্তি।
    আমি হিন্দু, মুসলিম,জৈন নয়,নয় খ্রিস্টান। আমি শুধু মানুষের জাত, চাই দুবেলা দু বেলা দু মুঠো ভাত।

    যদি বেঁচে থাকি এই ধরার মাঝে, লিখবো তোমার বিরুদ্ধে ক্ষুধার লেখুনী। কেড়ে নেবো তোমারও চোখের ঘুম,যেমন করে কেড়ে নিয়েছ আমাদের চোখের ঘুম।
    আছি সেই সুদিনের অপেক্ষায়।

    আমি মানবতার কবি,আমার কলোমাস্ত্র টি চলে মানবতার হয়ে।যদি ঈশ্বরের ডাকে দিতে হয় সাড়া, সাক্ষী হয়ে থাকবে এই কবিতা,যমুনার তীর,যমুনার ব্রিজ,
    সব, সব মনের রাখবো তোমার ওই কু-কীর্তি।