|
---|
মহিউদ্দীন আহমেদ, আউসগ্রাম: পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্ৰাম থানার অমরপুর অঞ্চলের বিষ্ণুপুর গ্ৰামে গত ১৫ জুলাই বৃহস্পতিবার ভোর রাতে চুরি হয় দু’শো বছরের প্রাচীন শিবলিঙ্গ ও একটি মনসার মূর্তি।
শিবলিঙ্গটি পাললিক পাথরের তৈরি বলে জানা যায়। যদিও গবেষকেরা জানান, মনসার মূর্তিটি ধাতব। বিষ্ণপুরের ওই শিবমন্দিরের পুরোহিত স্থানীয় হেদগড়া গ্রামের দীননাথ চ্যাটার্জী শুক্রবার সকালে পুজো করতে যাওয়ার সময় তার চুরির বিষয়টি নজরে আসে। জানা যায়, বর্ধমান রাজ পরিবারের পারিবারিক চিকিৎসক ছিলেন সারদাপ্রসাদ রায়। তাঁর আদি বাসভবন ছিল আউশগ্রামের বিষ্ণুপুর গ্ৰামে। পরবর্তীকালে বর্ধমান রাজ পরিবারের আর্থিক সহায়তায় মন্দির সহ শিবলিঙ্গটি প্রতিষ্ঠিত হয় বিষ্ণপুরে। বর্তমান সেবায়েত রায় পরিবার হলেও গ্ৰামের যে কোনো শুভ কাজে ওখানে পুজো দেওয়ার চল রয়েছে এখনও। একেবারে ভগ্নপ্রায় মন্দিরে কোনো দরজা ছিল না। সেই সঙ্গে অরক্ষিত অবস্থায় ছিল মন্দিরটি। বর্তমান মন্দিরের সেবাইত সুদীপ কুমার রায় দীর্ঘ দিন বাইরে থাকেন। ঘটনার পর তদন্তে নেমে পুলিশ তাঁকে খবর দিয়ে ঢেকে আনে। সুদীপ বাবু আউশগ্রাম থানার ডাকে এসে শুক্রবারে বেলা ১০ টা নাগাদ আউশগ্রাম থানা এলাকার ছোড়া পুলিশ থানায় এসে লিখিত অভিযোগ করেন। সেবায়েত রায় পরিবার বর্তমানে দুর্গাপুরের বাসিন্দা। সেদিনই রাতে পুলিশ তদন্তে নেমে বিষ্ণুপুর বাসস্টপ থেকে আলমগির মোল্লা (২৫), এবং সুভাষ মোল্লা (৩৩) নামের দুই দুষ্কৃতিকে গ্রেফতার করে। শনিবার বর্ধমান জেলা আদালতে তোলা হলে বিচারক তিন দিন পুলিশী হেফাজতের নির্দেশ দেন ওই দুই দুষ্কৃতিকে। সেই মতো শনিবারের পুলিশী জেরায় ছোড়া থানার পুলিশ দুষ্কৃতিদের নিয়ে তদন্তে নেমে ফের শনিবার সন্ধ্যাবেলা চুরি হয়ে যাওয়া মূর্তি দুটি উদ্ধার করে বিষ্ণুপুর গ্রাম থেকেই। চুরি যাওয়া শিব মূর্তিটি উদ্ধার হয় সুভাষ মোল্লার গোয়ালঘর ও মনসার মূর্তিটি থেকে উদ্ধার হয় সেখ শাহিনাওয়াজের ঘর থেকে বলে জানায় তদন্তকারী অফিসার এস আই অরিত্র আচার্য। তিনি আরও বলেন, সরিষা খারি ঢাকা দিয়ে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। শনিবার বিকেলবেলা সেই সঙ্গে ছোড়া থানার ও সি রণজিৎ মুখোপাধ্যায়ও তল্লাশিতে গিয়ে চুরিতে জড়িত থাকার অপরাধে আরও এক অভিযুক্ত সেখ শাহিনাওয়াজ ওরফে মুক্তা (৩১) কে এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। যদিও ওসি জানান, মূল অভিযুক্ত কেরিম সেখ ফেরার। কেরিমের সঙ্গে একটি বৃহৎ প্রাচীন মূর্তি চুরি চক্রের যোগ রয়েছে।
পুলিশের এই সাফল্যে সুদীপ রায় খুব খুশি। তিনি বলেন, প্রাচীন এই শিবলিঙ্গ চুরি অত্যন্ত দুঃখজনক ও অনভিপ্রেত ছিল। দীর্ঘদিনের একটি পুরাকীর্তি চুরি খুবই বেদনাদায়ক। তবে পুলিশের এই সাফল্য আমাদের আনন্দ দিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা ক্ষেত্রনাথ মণ্ডল জানান, সারদাপ্রসাদ রায়ের পরবর্তী প্রজন্ম অবনী রায়, দীপেন রায়, সুদীপ রায় এই শিবকে করে তোলেন সর্বজনীন। গ্ৰামের ঐতিহ্য ও পরম্পরা নষ্ঠ হবার হাত থেকে পুলিশ রক্ষা করেছে। ছোড়া থানার ও সি রণজিৎ মুখোপাধ্যায় জানান, সেখ শাহিনাওয়াজ ওরফে মুক্তা (৩১)কে রবিবার আদালতে তোলা হবে। আর তদন্ত শেষ হলে মঙ্গলবার আদালতে তোলা হবে ওই দুই অভিযুক্তকে। অমরপুর তৃণমূল কংগ্রেসের অঞ্চল সভাপতি গোলাম মোল্লা বলেন, “পুলিশের এই সাফল্যকে কুর্ণিশ জানাতেই হয়। আমাদের এই গ্রামে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির নজির আছে। দোষীদের কঠোর শাস্তি হোক।”