|
---|
নিজস্ব সংবাদদাতা : শুক্রবার শ্রীরামপুর টাউনহলে এক মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানে শ্রীরামপুর শহরের সার্বিক উন্নয়নের জন্য একটি আলোচনা হয়। শহরের উন্নয়নের জন্য কি কি প্রয়োজন, সেই বিষয়গুলি নিয়ে নগরের সুধীজনদের সঙ্গে কথা বললেন শ্রীরামপুরের বিধায়ক ডাক্তার সুদীপ্ত রায়। তার সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরাও এই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন।
প্রায় ৬০০ বছরের প্রাচীন এই শহরের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে নানা ঐতিহাসিক নিদর্শন। সেই সমস্ত নিদর্শনগুলোকে রক্ষা করার কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। ডেনমার্ক শাসনাধীন শ্রীরামপুরের বহু ইতিহাস প্রসিদ্ধ সৌধ এবং ভবনগুলিকে আবার সংস্কার করে পুরনো রূপ দেওয়া শুরু হয়েছে। এর বাইরেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বহু নিদর্শন। একই সঙ্গে কিন্তু রয়েছে প্রাচীন এই শহরের বহু সমস্যা। পুরাতন শহর হওয়ার দরুন এখানকার রাস্তা ঘাট সমস্তটাই তৈরি হয়েছিল তখনকার জনসংখ্যার ভিত্তিতে। যুগের তালে শহরে নানা বিবর্তন ঘটেছে।পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম ব্যস্ততম শহর হিসেবে শ্রীরামপুর আজ পরিণত হয়েছে। কিন্তু জনসংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তাঘাটের পরিসর না বাড়ায় প্রচুর সমস্যা রয়েছে এখানে। এই সমস্ত সমস্যাগুলো যেমন এদিনের অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন সুধীজনেরা, তার সঙ্গে সঙ্গে এই শহরের শিক্ষা, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক চর্চার কেন্দ্রগুলি যাতে আরো উন্নত হয় সে ব্যাপারেও তাঁরা নানা মত বিধায়কের সামনে তুলে ধরেন।শ্রীরামপুর শহরের সুসন্তান এবং দানবীর হিসেবে পরিচিত তুলসী চরণ গোস্বামীকে আজ ভুলে যেতে বসেছে এই শহর। ইংরেজ শাসনে ভারতীয় রাজনীতির অন্যতম স্তম্ভ ছিলেন তুলসী গোস্বামী। অথচ দুঃখের বিষয়, এই শহরে তাঁর একটি মূর্তি পর্যন্ত নেই। যাতে সম্মানের সঙ্গে তাঁর একটি মূর্তি শহরের প্রাণকেন্দ্রে বসানো যায় সে ব্যাপারেও স্থানীয়রা বিধায়ককে বলেন।
এই শহরের প্রচুর দেব দেউল আছে যা ইতিহাসে প্রসিদ্ধ কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হতে বসেছে। এই ব্যাপারগুলোও আজকের এই সুধীজনদের মুখোমুখি অনুষ্ঠানে তুলে ধরা হয়। এই শহরে জন্ম নিয়েছেন বহু পন্ডিত গুণী জ্ঞানী মানুষেরা। যাতে তাঁদের নামে শ্রীরামপুরের কিছু রাস্তার নামকরণ করা যায়, সেই বিষয়টাও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে তুলে ধরা হয়।শ্রীরামপুর শহর এক কালে বাংলার ফুটবল মানচিত্রে অন্যতম খেলোয়াড় জোগান বা সাপ্লাই দেবার কেন্দ্রবিন্দু ছিল। খেলাধুলার উন্নতি কল্পে প্রয়াত জননেতা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী ডাক্তার গোপাল দাস নাগের উদ্যোগে একটি স্টেডিয়াম গড়ে উঠেছিল। কিন্তু মাহেসের জন নগর রোডের প্রফুল্ল চন্দ্র স্টেডিয়ামটি আজকে ভগ্নদশায় পরিণত। সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা সত্ত্বেও কোনো রকম কোনো সুরাহা হয়নি। আজকের এই বৈঠকে এই বিষয়টিও উঠে আসে। এর সঙ্গে উঠে আসে হুগলি জেলার প্রথম রবীন্দ্রভবনের জীর্ণ অবস্থার কথা। এটিকে আবার পুনর্নির্মাণ করে সুন্দর রূপ দেওয়া যায় কিনা সে বার্তাও এখানকার সংস্কৃতি প্রিয় সুধীজনরা ডাক্তার সুদীপ্ত রায়র গোচরে আনেন।
সব মিলিয়ে এদিনে সন্ধ্যা শহরের বিদ্বজনদের উপস্থিতিতে মিলন মেলায় পরিণত হয়েছিল। শুধুমাত্র সমস্যার আলোচনা নয়, অভাব-অভিযোগ নয়, তার মাঝে মাঝে রবীন্দ্র সংগীত, নজরুল গীতি, আবৃত্তির মধ্য দিয়ে সন্ধ্যাটি আরও রঙিন হয়ে ওঠে। এদিনের এই মুখোমুখি অনুষ্ঠানে ডাক্তার সুদীপ্ত রায়ের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন শ্রীরামপুরের পুর প্রধান গিরিধারী সাহা, উপ পুর প্রধান উত্তম নাগ, চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল সন্তোষ সিং, প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল গৌরমোহন দে, কাউন্সিলর মিলন মুখার্জি, সমাজসেবী কাবুল মুখার্জি সহ অন্যান্য বিশিষ্ট জনেরা।