|
---|
নিজস্ব সংবাদদাতা : দেশের কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে বরিষ্ঠ নাগরিকদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। বিভিন্ন স্কিমও চালু করা হয়েছে। কিন্তু তা সত্বেও কোথায় যেন এই সমস্ত স্কিম বেমানান হয়ে উঠেছে বেশকিছু হতভাগ্য দরিদ্র প্রবীণ নাগরিকদের কাছে। এমনই এক ঘটনার নজির দেখা গেল আমাদের রাজ্যের নদীয়া জেলার শান্তিপুরে। শান্তিপুর শহরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের ডাবরে পাড়া এলাকার এক অসহায় অধ্যাপকের পরিবারের অভাব অনটন থেকে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা এমনই এক ঘটনার নজির। প্রয়াত অধ্যাপক পরমানন্দ মুখার্জির দুই মেয়ের মৃত্যুর পরে, বর্তমান রয়েছেন তিন অবিবাহিত ভাই বোন। দিদি নমিতা মুখার্জির বয়স ৭২ বছর মাধ্যমিক পাস, এক ভাই দেবাশীষ মুখার্জির বয়স ৭০ তিনি বিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক। ছোট ভাই বিশ্বজিৎ মুখার্জির বয়স ৬৫ বছর , পাস করেছিলেন বিকম। অধ্যাপকের মৃত্যুর পর তার ছেলে মেয়েরা উচ্চশিক্ষিত হলেও পায়নি কোনও চাকরি বা কাজের সুযোগ, মেলেনি পেনশনও। ছোট ভাই বিশ্বজিৎ মুখার্জির কথায়, ব্যাকডোর দিয়ে চাকরি হওয়ার কারণে যোগ্যতার প্রমাণ দেখানোর সুযোগ মেলেনি। বড় ভাই দেবাশীষ মুখোপাধ্যায় অবশ্য এক ডাক্তারের কেমিস্টের কাজ করে সামান্য অর্থ দিয়ে ভাই-বোনদের দুবেলা দুমুঠো খাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারতেন সে সময়। তবে বর্তমানে বয়সজনিত কারণে এবং শারিরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে, ছোট ভাই ছাড়া নড়াচড়া করতে পারেন না কেউই।দিদি এবং তার বার্ধক্য ভাতার দু হাজার টাকা গ্যাস এবং ইলেকট্রিকের বিল দিতেই লেগে যায়। তাই ১০ থেকে ১২ টাকা কেজি দরে খুদের চাল গূঁড়ো করে, ঘন ফ্যান নুন দিয়ে খান এক বেলা। দিনের পর দিন আধ পেটা খেয়ে থাকলেও, এত বড় পৃথিবীতে খোঁজ নেন না কেউই। তবে প্রতিবেশী প্রতাপচন্দ্র প্রামাণিক সাধ্য অনুযায়ী চেষ্টা করেন বলেই স্বীকারোক্তি ওই পরিবারের। দারিদ্রতা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সম্প্রতি তিন ভাই বোন একসাথে বিষ খেয়ে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা পর্যন্ত করেন বলে দাবি। কপালে দুর্ভোগ পোহানোর কারণেই হয়তো মৃত্যু হয়নি কারোরই এমনই আক্ষেপ এই হত দরিদ্র পরিবারের।বর্তমানে তারা কোনও এক সহৃদয় ব্যক্তির প্রতীক্ষায় রয়েছেন, শেষসম্বল বাড়িটুকু নিয়ে তাদের বাকি জীবনটুকু তিনটি পেট একবেলা কোনোমতে দুটো খেতে দিয়ে বাঁচিয়ে রাখেন সেই আশায়। তবে লকডাউনের মধ্যে সহযোগীতা করতে আসা দুটি এনজিও দু প্যাকেট বিস্কুট দিয়ে চারটি ছবি তুলে পাবলিসিটি বাড়িয়ে আর আসেননি কখনও। দিদি নমিতা মুখার্জি বলেন, শুনেছিলাম করোনা থেকে দেশ ও রাজ্য বাসীকে বাঁচানোর জন্য তিনবার বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে, তবে আমাদের তিনজনের জন্য ভাবেনি কোনও সরকারই। স্বাস্থ্য সাথীর কার্ড থাকলেও কিছুটা দুশ্চিন্তা মুক্ত হতাম চিকিৎসার ক্ষেত্রে, তাও জুটলো না কপালে।এ প্রসঙ্গে প্রতিবেশী মিতা প্রামাণিক বলেন একসময় সম্ভ্রান্ত এবং শিক্ষিত পরিবারের এই দুর্দশা দেখে খুব কষ্ট লাগে, নিজেদের সামান্য রোজগার থেকে কিছুটা সহযোগিতার চেষ্টা করি। স্থানীয় কাউন্সিলর দীপঙ্কর সাহা বলেন, অতীতে দুটো বার্ধক্য ভাতা করে দেওয়া হয়েছে, অপর একজনের কাগজপত্র জমা রাখা রয়েছে, শীঘ্রই তা চালু হবে। বা স্বাস্থ্য সাথী না যাওয়ার কারণে পাননি হয়তো, বাড়ি বাড়ি চালু হলে নিশ্চয়ই করে দেওয়া হবে।তবে গত কয়েকদিন আগে অনাহারে থাকা তিন সদস্য একই সাথে ইঁদুর মারার বিষ খেয়ে প্রাণ ত্যাগ করার চেষ্টা করেন তবে সেক্ষেত্রে সফল হননি তারা। বয়স্ক নাগরিকদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ সুযোগ সুবিধার কথা সরকারি বিজ্ঞাপনে ফলাও করে বলা হলেও এখনও যে অনেক পরিবার রয়েছে যেখানে এই সমস্ত সুযোগ সুবিধা পৌঁছতে ব্যার্থ হয়েছে প্রশাসন, এই অধ্যাপক পরিবারের ঘটনা তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।