|
---|
নিজস্ব সংবাদদাতা : মুসলিম সম্প্রদায় ভুক্ত মানুষের পবিত্র মাজারের খাদেম বা সেবাইত একজন হিন্দু ব্যক্তি। সারা রাজ্য জুড়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির স্থাপন করেছেন মেদিনীপুর শহরের বড় বাজারের বাসিন্দা চমক সেতুয়া। বিগত ৪৩ বছর ধরে তিনি মেদিনীপুর শহরের বল্লভপুর এলাকায় অবস্থিত সুফি চাঁদশা বাবার মাজারের সেবাইতের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। জানা যায় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ডেবরা ব্লকের গোলগ্রামের বাসিন্দা সুফি চাঁদশা বাবা গোটা জেলা জুড়ে ঘুরে বেড়াতেন পাগলের বেশে। যেখানে যা পেতেন খেতেন, যে কোনো আবহাওয়াতেও তিনি খোলা আকাশের নীচে থাকতেন। যেখানে যখন মনে হত সাধনায় বসে পড়তেন। এক অদ্ভুত অলৌকিক শক্তির অধিকারী ছিলেন তিনি। ১৯৮০ সালে মেদিনীপুরের বড় বাজার এলাকায় দেহ রেখেছিলেন তিনি। শেষ বয়স থেকেই সুফি চাঁদশা বাবার সানিধ্য লাভ করেছিলেন চমক সেতুয়া। তারপর থেকে চমক বাবু আর বাবাকে ছেড়ে যাননি। ১৯৮০ সালে দেহ রাখার পর তাঁর পরিবারের অনুমতিক্রমে মেদিনীপুরের বল্লভপুরে তার দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল। আর সেখানেই পরবর্তী সময়ে গড়ে ওঠে সুফি চাঁদশা বাবার মাজার। চাঁদশা বাবার সানিধ্যে এসে অনেকেরই মনস্কামনা পূরণ হয়েছে। প্রতি বছর ১৩ চৈত্র সুফি চাঁদশা বাবার বাৎসরিক উরুষ উৎসব পালন করা হয়। যেখানে দুর দুরান্ত বিভিন্ন জেলা এমনকি ভিন রাজ্য থেকেও ভক্তবৃন্দরা আসেন এই মাজারে প্রার্থনা করতে। মন্দিরের অন্য এক সেবক বলাই বসু বলেন, শুধু রাজ্যই নয় হয়তো গোটা দেশে এই ধরনের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মেল বন্ধন বিরল। যেখানে একজন হিন্দু ধর্মের মানুষ মাজারের সেবাইত। এটা মেদিনীপুরবাসী হিসেবে আমাদের কাছে গর্বের বিষয়। স্থানীয় এক বাসিন্দা সেখ বুলবুল বলেন, এখানে হিন্দু, মুসলীমের কোনো বিভাজন নেই। প্রতি বৃহস্পতিবার এই মাজারে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়। যেখানে হিন্দু মুসলীম উভয় ধর্মের মানুষ থাকেন। সুফি চাঁদশা বাবার মাজারের খাদেম বা সেবাইত চমক সেতুয়া বলেন, প্রথম প্রথম অনেকে অনেক কথা বলতো, কিন্তু আমি কারো কথা শুনতাম না। কারণ আমি মন থেকে বাবার সেবা করতাম, তাই কখনও নিজেকে ধর্মীয় টানাপোড়েনে ফেলিনি। কারণ হিন্দু বা মুসলীম ধর্মের থেকে লাখ গুন বড়ো মানব ধর্ম।