|
---|
খান আরশাদ, বীরভূম:
কিডন্যাপের গল্প ফেঁদে অবশেষে পুলিশের হাতে ধরা পড়ল রাজনগরের এক যুবতী।
গত ২৪ শে মার্চ রাজনগরের গাংমুড়ি-জয়পুর অঞ্চলের এক যুবতীকে তার বাবা বাসে চাপিয়ে দেয় নলহাটিতে কম্পিউটারের ক্লাস করার জন্য। এরপর ওই যুবতী আর বাড়ি ফেরেনি। ওই যুবতীর ফোন নাম্বারে ফোন করলে সুইচ অফ জানতে পারে। ফলে বাড়ির লোক দুশ্চিন্তায় পড়ে। নলহাটিতে ওই কম্পিউটার ইনস্টিটিউটে বাড়ির লোক ফোন করলে তারা জানায় ওই যুবতী সেদিন ইনস্টিটিউটে আসেনি। ফলে বাড়ির লোকের আরো দুশ্চিন্তা বেড়ে যায়। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজখবর নিয়েও ওই যুবতীর কোন সন্ধান পাওয়া যায় নি। ফলে বাড়ির লোকে অবশেষে গত ২৭ তারিখ রাজনগর থানায় দ্বারস্থ হয়ে একটি নিখোঁজ ডায়েরি করে।
এরপর ২৮ তারিখ দুপুরে হঠাৎই ওই যুবতীর ফোন আসে বাড়িতে। ওই যুবতী জানায় সে তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে দুমকা গিয়েছিল। দুমকা স্টেশনে বসে যখন তার বয়ফ্রেন্ডের জন্য অপেক্ষা করছিল সে সময়ই কয়েকজন দুষ্কৃতি তার মুখে কাপড় বেঁধে তাকে কিডন্যাপ করে কোনো এক অজানা অচেনা জায়গায় নিয়ে যায়। এরমধ্যে চারজন ছেলে ও একজন মেয়ে দুষ্কৃতি ছিল। ওই যুবতী যেসব কথাগুলো জানিয়েছে সেই কথাগুলোই রাজনগর থানায় ওসিকে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়। এরপর রাজনগর থানার ওসি ঝুমুর সিনহা বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করেন ও যুবতীর ফোন নাম্বার নিয়ে লোকেশন ট্রাক করে পুলিশ জানতে পারে ঝাড়খণ্ডের সীমান্তবর্তী এলাকা রামপুরহাট থানার অন্তর্গত বোনহাট অঞ্চলের একটি গ্রামে ওই যুবতীর ফোনের লোকেশন দেখাচ্ছে।
এরপর রাজনগর থানার পুলিশ রামপুরহাট থানার পুলিশের সাথে যোগাযোগ শুরু করে। রাজনগর থানার পুলিশ মাত্র ঘন্টা দেড়েকের মধ্যেই অত্যন্ত তৎপরতার সাথে ওই যুবতীর লোকেশন ট্রাক করে ফেলে। এরপর রাজনগর থানার ওসি ঝুমুর সিনহার নির্দেশে এসআই কাজল বাগদি সহ পুলিশ রামপুরহাট থানার পুলিশের সহযোগিতায় ওই বাড়িতে গিয়ে পৌঁছায়। সেখানে গিয়ে পুলিশ দেখে ওই যুবতী তার এক বান্ধবীর বাড়িতে গিয়ে বসে আছে।
রাজনগর থানার পুলিশ অভিযোগ পাওয়ার মাত্র ২৪ ঘন্টার প্রচেষ্টায় ওই যুবতীকে রাজনগর থানায় নিয়ে আসে।
এরপর ওই যুবতী তার নিজের বাড়ি ফিরতে চায় এবং তার সম্মতিতেই তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয় রাজনগর থানার পুলিশ।
যুবতী নিজের বাড়ীতে ঝামেলা করে এই কিডন্যাপের গল্প ফেঁদে যেভাবে পুলিশকে বিভ্রান্ত করল , সেটা ভালো চোখে দেখছে না পুলিশ।
ওসি ঝুমুর সিনহা জানিয়েছেন এর আগে গত দু সপ্তাহের মধ্যে আরো দুই নাবালিকাকে উদ্ধার করা করেছে রাজনগর থানার পুলিশ। এবারও মাত্র ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে এই যুবতীকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
পুলিশ যেভাবে অত্যন্ত তৎপরতার সাথে কাজ করছে তার ভুয়সী প্রশংসা করেছেন এলাকাবাসীরা।
যেভাবে মেয়েরা বাড়ি থেকে পালিয়ে যাচ্ছে, তাতে অন্তত পরিবারের লোককে এ ব্যাপারে খুবই সচেতন থাকা জরুরী। বাড়ির মেয়ে বাইরে পড়াশোনা করছে, ট্রেনিং করছে বা কোন কাজে যাচ্ছে, ঠিকই আছে কিন্তু তাদের গতিবিধির উপর নজর রাখা বাড়ির লোকের একান্ত প্রয়োজন। তা না হলে এ ধরনের ঘটনা যে কারোর ক্ষেত্রেই ঘটতে পারে। এতে শুধু বাড়ির লোকেরই যে দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায় তা নয়, পুলিশও চরম সমস্যার মধ্যে পড়ে যায়।
পুলিশকে বিভ্রান্ত করে নতুন একটা সমস্যা খাড়া করা এটা নিশ্চয়ই কাম্য নয়।
পরিবারের সকলকেই এই বিষয়ে সচেতন থাকা জরুরি।
এই যুবতীটি সিনেমার মতো একটা গল্প ফেঁদে পরিবারের লোকজনসহ পুলিশকে যেভাবে বিভ্রান্ত করেছে তা অত্যন্ত নিন্দনীয়।