|
---|
নতুন গতি নিউজ ডেস্ক: তৃণমূলের যুবরাজ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় “অভিষেক” হলেন সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদকের পদে। ‘২১শের নির্বাচনে কঠিন পরিশ্রমের পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। দলনেতা থেকে জননেতা হয়ে উঠছেন তিনি। নবীন প্রজন্মের নেতা অভিষেক দলের সর্বভারতীয় পদ পাওয়ায় অনেক প্রবীন নেতা ভেবেছিলেন হয়তো তিনি আর দলের পুরোনো দিনের নেতাদের গুরুত্ব না দিয়ে নবীনদের নিয়ে আগামী ‘২৪ এর লোকসভাভোটে ঝাঁপাবে কিন্তু সেই ধারণা সমূলে উৎখাত করে তিনি আশীর্বাদ নিতে দলের মহাসচিব তথা মন্ত্ৰী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এর বাড়িতে উপস্থিত হলেন। শনিবার যখন এই দায়িত্ব তাঁকে দেওয়া হয় তখনও বিনয়ের সঙ্গে টুইট করেন তিনি। শনিবার টুইটারে অভিষেক লেখেন, “নতুন দায়িত্ব দেওয়ার জন্য আমি দলের কাছে কৃতজ্ঞ। সমস্ত প্রতিকূলতা সত্বেও দলের যে সমস্ত কর্মীরা বাংলাকে জেতাতে আমার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। ” তিনি ধন্যবাদ জানিয়েছেন দলের বর্ষীয়ান অভিজ্ঞ নেতাদেরও। তিনি লিখেছেন, “দলের সমস্ত অভিজ্ঞ বর্ষীয়ান নেতাদের ধন্যবাদ। যাঁরা দুর্দিনে দলের পাশে ছিলেন। দলকে সবথেকে বেশি মূল্য দিয়েছেন। আমি সকলকে কথা দিচ্ছি চেষ্টা কোনও ত্রুটি রাখব না। দেশের প্রতিটি কোণে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তা, কাজ পৌঁছে দেব।”
তৃণমূল কংগ্রেসের সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত নতুন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দলের প্রবীণ ও অভিজ্ঞ নেতাদের আশীর্বাদ নিয়েই সেই ‘গুরুদায়িত্ব’ সামলাতে চান। রবিবার ঘড়ির কাঁটায় তখন ঠিক বেলা ১২টা ৪০ মিনিট। পার্থবাবুর নাকতলার বাড়িতে মিষ্টির হাঁড়ি হাতে নিয়ে পৌঁছান অভিষেক। সুত্রের খবর, দেড় ঘণ্টারও কিছু বেশি সময় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাকতলার বাড়িতে ছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামীদিনে দল পরিচালনার রণকৌশল নিয়েও দু’জনের মধ্যে আলাপ আলোচনা হয়। এমনকী কিভাবে কাজ শুরু করবেন তার পরামর্শও গ্রহণ করেন তিনি।
আজকের সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় এটাকে সৌজন্য সাক্ষাৎ বলেছেন এবং সাংবাদিকদের বলেন, “অভিষেককে আমি ছোটবেলা থেকেই চিনি। আমার সঙ্গে সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো। নতুন করে আশীর্বাদে দেওয়ার কিছু নেই। ওর সঙ্গে আমাদের আশীর্বাদ আছে । দীর্ঘক্ষণ ধরে আমাদের কথাবার্তা হয়েছে। আগামী দিনে দলকে কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে, সাধারণ মানুষের আরো কি কি নতুন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া যাবে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর অভিষেক এখন অন্যতম মুখ। সাংগঠনিক বিষয়ে অনেক কথা হয়েছে। ও দলকে শক্তিশালী করছে। ”
শুধু মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ই নন, দীর্ঘদিন ধরে দলের যাঁরা প্রথম দিন থেকে লড়াইয়ের সঙ্গী একে একে তাঁদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করলেন অভিষেক। এদিন সন্ধ্যায় পৌঁছান দলের রাজ্য সভাপতি তথা সদ্য প্রাক্তন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সীর বাড়ীতেও।
অভিষেক বাড়িতে পৌঁছে তাঁর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতেই জড়িয়ে ধরলেন বক্সী বাবু। চোখের জলেই তৈরি হলো উত্তরাধিকারের মশাল বহনের এক অনন্য ছবি। বক্সী বাবু বলেন, যা আছে, যেটুকু আছে, তোকে উজাড় করে দেবো। ছোট থেকেই কোলে পিঠে বড় করেছেন তাঁকে। আজ সেই যুবকের ঘাড়েই দলের গুরুদায়িত্ব।
উল্লেখ্য, বিধানসভা ভোটের আগে এক ভার্চুয়াল বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হঠাৎই বলেন, অনেকে তাঁর মৃত্যুকামনা করছে। কারণ, তিনি মারা গেলে তারা তাঁর চেয়ারে (মুখ্যমন্ত্রীর পদে) বসতে পারবে! মমতা নিজেও খানিকটা আবেগতাড়িত হয়েই ওই কথাটি বলেছিলেন।নেত্রীর ওই কথা শুনে বক্সী বাবু বৈঠকের মধ্যেই সর্বসমক্ষে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলেন এবং কাঁদতে কাঁদতেই মমতাকে বলতে থাকেন, ‘‘আপনি এমন কথা বলবেন না। আপনি থাকবেন। আপনি আজীবন আমাদের নেত্রী থাকবেন। আমাদের রাস্তা দেখাবেন।’
দলের পুরোনো নেতার বাড়িতে অভিষেকের এই যাওয়া রাজনৈতিক মহলে যথেষ্ট তাৎপর্য পূর্ণ বলে মনে করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।কাজে নামার আগে তাঁর এই কর্তব্যবোধ আসলে দলের মধ্যে নবীন–প্রবীণ ভারসাম্য বজায়ের পক্ষে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।