অভিষেক ব্যানার্জীর ১৬ তম দিনে তৃণমূলের নব জোয়ার কর্মসূচিতে জনপ্লাবন বীরভূমে

খান আরশাদ, বীরভূম :বুধবার বীরভূমের ময়ূরেশ্বরে রোড শো এর মাধ্যমে তৃণমূলের নবজোয়ার কর্মসূচি শুরু করেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জি।

    এই রোড শোতে অংশ নেন অগণিত তৃণমূল কর্মী সমর্থকেরা। এরপর মোহাম্মদ বাজারে একটি প্রকাশ্য জনসভা করেন। এরপর শহীদ রাজেশ ওরাং এর মূর্তিতে মাল্যদান ও তার পরিবারের লোকের সাথে সাক্ষাৎ করে তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন।

    সেখান থেকে সিউড়ি করিধ্যা হয়ে তিনি পৌঁছে যান পাথরচাপুরি। পাথরচাপুরিতে হযরত শাহ মেহবুব শাহ ওলি যিনি দাতা বাবা নামে পরিচিত সেই দাতাবাবার মাজারে চাদর চড়ান।

    অভিষেক ব্যানার্জি সেখান থেকে চন্দ্রপুর , দুবরাজপুর হয়ে সাঁইথিয়ায় গিয়ে একটি জনসভা করেন। রোড শো চলাকালীন রাস্তার দু’পাশে হাজার হাজার তৃণমূল কর্মী সমর্থকেরা তাকে শুভেচ্ছা জানান। কর্মী সমর্থকদের তথা জনসাধারণের সমর্থন ও শুভেচ্ছা পেয়ে অভিভূত অভিষেক ব্যানার্জি।

    সাঁইথিয়ায় জনসভায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বলেন। তৃণমূলের এই নব জোয়ার কর্মসূচি বাস্তবে জনজোয়ারে পরিণত হয়েছে ।

    বর্তমান রাজ্য সরকারের বিভিন্ন জনমুখী প্রকল্পগুলি তুলে ধরার পাশাপাশি তিনি কেন্দ্রকে তীব্র কটাক্ষ করেন। তিনি বলেন সাইত্রিশ হাজার কোটি টাকা রাজ্য সরকার খরচা করে রাজ্যের দুই কোটি মহিলা কে লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা তাদের নিজস্ব ব্যাংক একাউন্টে পাঠিয়েছে।

    মমতা ব্যানার্জি বলেছিলেন ক্ষমতায় এলে প্রতিটি পরিবারের একজনকে লক্ষ্মীর ভান্ডারে টাকা দেওয়া হবে কিন্তু তার থেকে এক ধাপ এগিয়ে পরিবারের প্রতিটি মহিলাদের লক্ষ্মীর ভান্ডারের ৫০০ টাকা করে তিনি দিয়েছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি তিনি তার কথামতো পূর্বের কথামতো পরিবারের একজনকে লক্ষীর ভান্ডারের টাকা দিতেন তাহলে বারো হাজার কোটি টাকা রাজ্যের খরচা হতো এবং যে ২৫ হাজার কোটি টাকা বাঁচত তা দলের প্রচারের জন্য বিভিন্নভাবে খরচা করা যেত কিন্তু তা মুখ্যমন্ত্রী করেননি। তিনি পরিবারের সব মহিলার একাউন্টে সেই টাকা ঢুকিয়েছেন।

    সবুজ সাথীর যে সাইকেল দেওয়া হয় বা খুদে পড়ুয়াদের যে শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ করা হয় তারা কি কেউ ভোট দেয়? ভোটের কথা চিন্তা না করেই মমতা ব্যানার্জি সকলের জন্য উন্নয়ন করে যাচ্ছেন।

    আবাস যোজনার বাড়ির টাকা আটকে দেওয়া বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার দুর্নীতির যে অভিযোগ তুলেছে সে বিষয়ে অভিষেক ব্যানার্জি জানান ১১ লক্ষ৩৬ হাজার বাড়ি প্রাপকদের আবাস যোজনার প্রাপকদের তালিকা রাজ্য সরকার কেন্দ্রকে পাঠিয়েছে, কেন্দ্র সরকার যদি এর মধ্যে একটাও দুর্নীতি দেখাতে পারে, যার বাড়ির প্রয়োজন নেই অথচ বাড়ি তালিকায় তার নাম আছে, তাহলে রাজনীতির আঙ্গিনা ছেড়ে দেবেন। বীরভূমের মানুষকে মুখ দেখাবো না আজীবন বলেও তিনি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন কেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে। এ পর্যন্ত রাজ্যের ১০ লক্ষ মানুষ ১০০ দিনের কাজের জন্য রাজ্যকে চিঠি লিখেছে। বাংলার এক কোটি লোক যাতে চিঠি লিখে নিজেদের প্রাপ্য অধিকার বিষয়ে কেন্দ্রকে জানায় সেই টার্গেট নেওয়া হয়েছে তৃণমূলের তরফের বলে তিনি জানান।

    বিজেপির রাজনীতি বিষয় নিয়ে তিনি কটাক্ষ করে বলেন বিজেপি রাজে বিশ্বাস করে, নীতিতে নয় আর তৃণমূল নীতিতে বিশ্বাস করে, রাজে নয়।

    একদিকে মমতা ব্যানার্জি লক্ষির ভান্ডার করে ৫০০ হাজার টাকা করে দিচ্ছেন অপরদিকে নরেন্দ্র মোদি আধার কার্ড , প্যান কার্ড লিঙ্ক করতে হাজার টাকা করে নিয়ে নিচ্ছেন। একদিকে দিদি দিচ্ছেন, অপরদিকে মোদি নিচ্ছেন।

    সিপিএমকেও তিনি একহাত নেন। বলেন আগে সিপিএমের একটি পরিষেবা পেতে হলে লোকাল কমিটি জেনারেল কমিটির মেম্বারকে দিয়ে চিরকুটে লিখে নিতে হতো। তবেই সেই পরিষেবা পাওয়া যেত।

    বিজেপি যেখানে হেরে আছে,সেখানে টাকা বন্ধ। বিজেপির সেই নীতি নিয়ে চললে তৃণমূল তো দুবরাজপুরেও লক্ষীর ভান্ডার , কন্যাশ্রী ,রূপশ্রী, পথশ্রী বন্ধ করে দিতে পারতো। কারণ দুবরাজপুর তো বিজেপি জিতেছে।

    আগামীতে যদি তৃণমূল ৪২ টা আসনের মধ্যে ৪০ টা আসন জিততে পারে তাহলে রান্নার গ্যাসের দাম ১২০০থেকে ৬০০ টাকা করা হবে ঘোষণা অভিষেক ব্যানার্জির। আর বিজেপি যদি জিতে তাহলে রান্নার গ্যাসের দাম ১২০০ থেকে ২৪০০তে পৌছবে বলেও তিনি কটাক্ষ করেন।

    তৃণমূলের সরকার মানবিক আর বিজেপির সরকার দানবিক। প্রতি দুই তিন মাস অন্তর বীরভূমে আসবেন বলে বীরভূমের সাইথিয়ায় কথা দিয়ে গেলেন অভিষেক ব্যানার্জি।

    নির্দল প্রার্থীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন যিনি নির্দল প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়বেন চিরদিনের মত তৃণমূলের দরজা তার জন্য বন্ধ হয়ে যাবে।

    বীরভূমে বর্তমান রাজ্য সরকারের উন্নয়নের খতিয়ানও তিনি তুলে ধরেন । অভিষেক ব্যানার্জি জানান বীরভূম জেলায় ৮ লক্ষ ৪৫ হাজার মহিলা লক্ষ্মীর ভান্ডার এর টাকা পাচ্ছেন। ২০ লক্ষ ৫৪ হাজার ছাত্রছাত্রী ঐক্যশ্রী তে স্কলারশিপ পেয়েছে। ১০ লক্ষ ৯৪ হাজার মহিলা স্বাস্থ্য সাথীর কার্ড পেয়েছেন। ৩৬ লক্ষ ৩৩ হাজার লোক খাদ্য সাথী প্রকল্পে বিনামূল্যে রেশন পাচ্ছেন। সাড়ে পাঁচ লক্ষ লোক জাতিগত সংসার পত্র পেয়েছেন। ৩ লক্ষ ১২ হাজার যুবতী কন্যাশ্রী টাকা পেয়েছে।