অবশেষে গৃহবধূর লাশ উদ্ধার নিখোঁজ দুই পুত্র সাগরদিঘীতে

রহমতুল্লাহ ও মোঃ ইমরান হোসেন, মুর্শিদাবাদ : অবশেষে উদ্ধার হলো নিখোঁজ রেবিনা বিবির নিথর মৃতদেহ কাবিলপুর তেজরায়পুর ফেরিঘাটে এখনো নিখোঁজ তার দুই পুত্র। গতকাল ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ বর্ষের শেষ দিনটিতে রেবিনা বিবি এক মেয়ে দুই ছেলে সহ নদীতে ঝাঁপ দেয় বলে অনুমান করা হচ্ছে। যাদের বয়স যথাক্রমে খাদিজা খাতুন (৩) জসিম সেখ (৬)ও সায়ন সেখ(৩১ দিন) যা এলাকায় যথেষ্ট চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে কাবিলপুর তেজরায়পুর ফেরিঘাটে। কিন্তু কেন এই মর্মান্তিক আত্মহত্যা? এর রহস্য জানতে গিয়ে যে তথ্য বেরিয়ে এসেছে তা যথেষ্ট হাড় হিমকর।আজ থেকে সাত বছর পূর্বে কাবিল পুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে ভূপেন্দ্র নগর গ্রামের ওবায়দুর রহমান ওরফে আপেলের সাথে বিয়ে হয় একই গ্রাঃপঃ এর অধীনে কুলবুনা পাড়া গ্রামের বাসিন্দা রেবিনা খাতুনের।বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই আপেল তার স্ত্রী রেবিনা খাতুনের ওপর দফায় দফায় টাকার জন্য চাপ সৃষ্টি করে এবং অমানসিক শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন চালাতে থাকে। রেবিনা খাতুনের পরিবার দরিদ্র হলেও মেয়ের সুখের জন্য জামাইয়ের কোন দাবি অপূর্ণ রাখেনি। মৃতের পরিবারের দাবি খুনী জামায় মদ্যপান ও জুয়ার সাথে যুক্ত। মেয়ের সুখের জন্য জামায়ের পছন্দমত এক লক্ষ কুড়ি হাজার টাকা দিয়ে মোটর বাইক কিনে দেয় কিন্তু ছয় মাস যেতে না যেতেই সেই গাড়ি বিক্রি করে জুয়ার ঋণ পরিশোধ করে। অতঃপর টাকার জন্য আবার অত্যাচার শুরু করে। এমনকি মেয়েকে দেওয়া বিয়ের স্বর্ণের অলংকার যা ছিল সব কিছু বিক্রি করে মদ ও জুয়া খেলার মদপান ও লটারি খেলে নিঃশেষ করে দেয় ।রেবিনা খাতুন তার তিন সন্তানসহ নিজ সংসারের খরচ শুধু বিড়ি বেঁধেই চালাত।

    দীর্ঘ নয় মাস পর জামাই বাড়ি ফিরলে রেবিনা বড় আশা নিয়ে তার স্বামীর বাড়ি যায়। বাড়ি ঢুকতেই শুনতে হলো স্বামীর সেই রুক্ষ আওয়াজ, বাপের বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে ঢোক, বিদেশ থেকে শূন্য হাতে ফিরেছি। কথা শুনে তৎক্ষণাৎ রেবিনার প্রশান্ত মনটা নিমেষেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে । শুরু হয় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বাক-বিতণ্ডা।আপেল আবারো ক্রুদ্ধ হয়ে শুরু করে রেবিনার উপর পাশবিক অত্যাচার ও অশালীন গালিগালাজ।বাধ্য হয়ে রেবিনা ছুটে যায় বাবার বাড়ি টাকার খোঁজে, বাবার বাড়ি থেকে ২৫ হাজার টাকা নিয়ে স্বামী আপেলের হাতে তুলে দিলেও সে আরো টাকা দাবী করে বসে । শুরু হয় আবারও অশান্তি অত্যাচার। গত ৩১ ডিসেম্বর রেবিনা খাতুন তিন সন্তান সহ আপন যায়ের সাথে কাবিলপুর ব্যাংকে টাকা তুলতে আসে । তারপর থেকেই তারা তিন মা ছেলে একসাথে নিখোঁজ শুক্রবার দুপুর নাগাদ কাবিলপুর তেজ রায়পুর ফেরিঘাটে একটি বাচ্চা মেয়ের লাশ ভাসতে দেখা যায় সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই মেয়েটির মামা আব্দুস সামাদ চিনতে পারে এবং বাকি তিনজন জলের তলায় আছে বলে অনুমান করে এই ঘটনা এলাকায় যথেষ্ট চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে সাগরদিঘী পুলিশ মৃতদেহ পোস্টমর্টেমের জন্য নিয়ে যায় এবং আজ সকাল ন’টা নাগাদ সাগরদিঘী পুলিশ ডুবুরী বাহিনী নিয়ে আসে বাকি লাশগুলো উদ্ধারের জন্য। অবশেষে দীর্ঘ দুই ঘন্টা তল্লাশি চালিয়ে মা রেবিনা খাতুনের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য পাঠিয়ে দেয়, এখনো নিখোঁজ দুই পুত্রের লাশ খোঁজাখুঁজি করছে সাগরদিঘী থানার পুলিশ।পরিবার সহ এলাকাবাসীর দাবী এটি একটি পরিকল্পিত খুন সুতরাং এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি অর্থাৎ ফাঁসি হোক । যাতে ভবিষ্যতে কোনো মেয়ের প্রতি কোন কাপুরুষ পাশবিক নির্যাতন চালানোর সাহস না করতে পারে।