“আবুল ফজলের” “আইনী আকবর” পরলে দেখা যায় যে বর্ধমান কে বলা হত” শরীফাবাদ” বা “সরকার শরিফাবাদ”।

শেখ মনোয়ার হোসেন বর্ধমান ২১নভেম্বর :
১২০২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৫৭৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত টানা পৌনে চারশো বছর পাঠানরা রাজত্ব করেছেন এই “শরিফাবা”দে অর্থাৎ সমগ্র “সুবে বাংলা”তে।
১৫৭৪ থেকে ৭৬ খ্রিস্টাব্দে ভারত” সম্রাট আকবর” বাংলা অভিযান করেন এবং বাংলার “সুলতান সুলেমান কররানীর “পুত্র” দাউদ খাঁ”কে পরাজিত করেন এবং দাউদ খানের আত্মীয়-স্বজনসহ সকলকে বর্ধমানের নবাব বাড়িতে বন্দী করেন, এবং সন্ধি হলে” সুবে বাংলায়” ও” শরিফা বাদে” মুঘল রাজত্ব শুরু হয়। ১৫৭৪- ১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দে আকবরের বিশাল সৈন্যবাহিনীর মধ্যে অনেক ইসলামিক জ্ঞানী পন্ডিত যোদ্ধা ও ধর্ম গুরু উপস্থিত হয়েছিলেন। তাদেরই অন্যতম লস্কর গাজী। গাজী শব্দটি আরবি শব্দ অর্থাৎ যুদ্ধে বিজয়ী বীর ও পীর।
শরিফা বাদের” সড়ক এ আজম” অর্থাৎ জি টি রোড সংলগ্ন রাস্তার পশ্চিমে একটি বড় দিঘী ও সংলগ্ন বিশাল এলাকায় মুঘল সৈন্যগণ দীঘির চতুর্দিকে ছাউনি ফেলেন, হাতি ঘোড়া সৈন্য সামন্ত সিপাহী লোক লস্কর প্রয়োজনীয় পানি , ও ব্যবহার্য পানি ইত্যাদি সংগ্রহের জন্য এই অঞ্চলটি বেছে নিয়েছিলেন, এর অনতি দূরেই কাঞ্চননগর লাকুড্ডি এলাকায় “সুলতান সুলেমান কররানির”রাজধানী ছিল।
যুদ্ধে মুঘল সেনাবাহিনী জয়লাভ করলে ন, কিন্তু সেনাবাহিনীর একজন সুপ্রসিদ্ধ বিজয়ী বীর যিনি নিজে একজন পিরও ছিলেন, তিনি তেতুঁল বাগানের তলায় নিজের হুজরা বানিয়ে আধ্যাত্মিক কর্মে লিপ্ত হয়ে পড়লেন এবং ওখানেই মৃত্যু হলে তাকে কবর দেয়া হয়। তিনি ছিলেন লস্কর গাজী।
এই লস্কর গাজীর নাম অনুসারে দীঘিটির নাম হয়ে যায় লস্কর দীঘি, এবং এলাকার নাম হয় লস্কর দিদি মহল্লা।
এবং লস্কর গাজী র মাজার অর্থাৎ কবরটি যেখানে আছে সেই স্থানটির নাম হয়ে যায় “তেতুল তলা বাজার”যার ফার্সি শব্দ এর অর্থ কেনাবেচা করার স্থান।
” সম্রাট আকবর” বিভিন্ন সূফি পীর ওলি আউলিয়া গয়েস কুতুবদের খুবই সম্মান করতেন, তারই ফলস্বরূপ পুরো এলাকাটি তিনি লস্কর গাজীর নামে দান করে দেন। পরবর্তীকালে সমস্ত জায়গা হাতছাড়া হয়ে যায় অর্থাৎ বেদখল হয়ে যায়।
মসজিদের ভেতর একটি ধাতব পাতে (অতি মূল্যবান তামা জাতীয় বা অন্য কোন ধাতুর ফলক) ফার্সি ফারসি ভাষায় লিপি রয়েছে যাতে এই মসজিদটির নাম খয়রাতি মসজিদ অর্থাৎ দানের মসজিদ, সহজেই অনুমান করা যায় সম্রাট আকবরের দানে এই মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল কিন্তু অযত্নে ফলকের হরফ গুলি স্পষ্ট না থাকায় বোঝা যাচ্ছে না তবু এটুকুন অনুমান করা যায় পুণ্যের উদ্দেশ্যে এই মসজিদের নির্মাণ করা হয়েছিল কিন্তু কে করেছিলেন কোন সময় অস্পষ্ট অর্থ উদ্ধার করা যাচ্ছে না)
খয়রাতি মসজিদ পা তেতুলতলা জামে মসজিদ এর এসি নাম্বার ২৮৯২। বর্তমানে “তেতুলতলা ওয়াকআফ স্টেট “এর অন্তর্গত এই মসজিদ।
১৯০০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে এলাকার ধর্মপ্রাণ মাওলানা রাহাত আলী এই দরগা ও মসজিদের মতওয়ালি নিযুক্ত হয়েছিলেন।
১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গীয় ওয়াকফ আইনের আওতায় এই সম্পত্তি লিপিবদ্ধ হয়, এবং ওয়াকআফ কমিশনার জনৈক মুমিন সাহেবকে ওয়াকাপ কমিটির সভাপতি নিযুক্ত করেছিলেন।
১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে বর্ধমানের জমিদার “খান বাহাদুর নাজিরুউদ্দিন সাহেব সমিতির সভাপতি নিযুক্ত হন।
১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশ দুইভাগে বিভক্ত হয়ে গেল “খান বাহাদুর নাজিরুউদ্দিন”সাহেব বিভিন্ন কারণে পূর্ব পাকিস্তানে চলে যান।
১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন কংগ্রেস নেতা ও জননেতা আব্দুস সাত্তার অর্থাৎ বর্ধমান বাণীর সম্পাদক এই স্টেটের দায়িত্ব নেন।
১৯৬০-৭০ এর দশকে এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব” সৈয়দ বোরহান উদ্দিন আহমেদ” সভাপতি নির্বাচিত হন। পরবর্তীকালে এলাকার সমাজসেবী জনাব “আব্দুল মাজেদ “সাহেব কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হয়ে পুরাতন মসজিদ যা খুবই ভঙ্গুর হয়ে গিয়েছিল ও স্থান -সংকুলন না হওয়ায় ভেঙে নতুন করে কাজ শুরু করেন। এবং বহুমুখী জনসেবামূলক উন্নয়ন ও বহুমুখী কর্ম প্রকল্পে হাত দেন যেমন একটি পাইকারি বাজার, একটি মুসাফিরখানা, একটি জানাজাগার, বায়তুলমাল কমিটি, স্টেটের নিজস্ব অফিস ও মেসবাড়ি, ইত্যাদি।
শেখ মনোয়ার হোসেন বর্ধমান ২১/১১/২