রীতি অনুযায়ী মহালয়ার পরে প্রতিপদের দিন থেকেই কৃষ্ণনগর রাজ রাজেশ্বরীর হোমকুণ্ড জ্বলে ওঠে

নিজস্ব সংবাদদাতা : রীতি অনুযায়ী মহালয়ার পরে প্রতিপদের দিন থেকেই কৃষ্ণনগর রাজ রাজেশ্বরীর হোমকুণ্ড জ্বলে ওঠে। প্রচুর পরিমাণে ঘি, বেলকাঠ-সহ নানা সরঞ্জামে যজ্ঞ শুরু হয়। নদিয়ারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের প্রতিষ্ঠিত এই পুজোর হোমের আগুন জ্বলে নবমী পর্যন্ত। উল্টোরথের পরের দিন পাট পুজোর মাধ্যমে শুরু হয় প্রতিমা নির্মাণের কাজ। প্রচলিত দুর্গা প্রতিমার থেকে কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির রাজরাজেশ্বরীর মূর্তি একেবারেই আলাদা। এই মূর্তি তৈরি করতেন বিখ্যাত শিল্পী সাধন পাল।

    রাজরাজেশ্বরী মাতার সামনের দুটি হাতই বড়। পেছনের আটটি হাত অপেক্ষাকৃত ছোট। দেবীর গায়ে থেকে বর্ম। দেবী থাকেন এখানে যুদ্ধের বেশে সজ্জিত। পিছনে অর্ধ গোলাকৃতি সাবেক বাংলা চালির একদিকে আঁকা থাকে দশাবতার। অন্যদিকে থাকে দশমহাবিদ্যা। মাঝে থাকেন পঞ্চানন শিব। দেবীর বাহন পৌরাণিক সিংহ। সামনে থাকে ঝুলন্ত অভ্রধারা। এখানকার প্রতিমার সাজেও থাকে বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য। প্রচলিত ডাকের সাজের চেয়ে এই সাজ হয় আলাদা। একে বলা হয় ‘বেদেনি ডাক’।বর্তমানে কামান দেগে সন্ধিপুজো না হলেও আজও এই পুজোর অন্যতম আকর্ষণ হল সন্ধিপুজো। রাজবাড়ির সন্ধিপুজো দেখতে ভিড় করেন অসংখ্য মানুষ। প্রথা অনুযায়ী, ১০৮ পদ্মফুল ও ১০৮ প্রদীপ। আগে দুর্গাপুজোতে হত ছাগবলি। সেই প্রথা উঠে গিয়ে এখন অবশ্য আখ এবং চালকুমড়ো বলি হয়। পুজোর ভোগ মহালয়ার পর থেকেই শুরু হয়।খিচুড়ি, ভাজা, ছেঁচড়া-সহ একাধিক তরকারি, চাটনি, সুজি, পায়েস থাকে পুজোর ভোগে। সপ্তমীতে সাত রকমের ভাজা হয়। অষ্টমীতে পোলাও, ছানার ডালনার সঙ্গে ভাত, আট রকম ভাজা, মিষ্টি, ক্ষীর-সহ একাধিক পদ থাকে। নবমীতে নয় রকম ভাজা, তিন রকম মাছ, ভাত, মিষ্টি থাকে। দশমীতে গলা ভাত, সিঙি মাছ, খই, ফল, দই, চিড়ে ভোগ দেওয়া হয়। দশমী মানেই আকাশে বাতাসে বিষাদের সুর। সিঁদুরখেলায় মেতে ওঠেন রাজপরিবারের গৃহকর্ত্রী অমৃতা রায়।

    ২০০২ সালে তিনি সিঁন্দুর খেলা শুরু করেন। সকাল থেকেই রাজবাড়িতে ভিড় করেন অসংখ্য মহিলারা। রীতি মেনে চলে দেবী বরণ, এরপরই শুরু হয় সিঁদুরখেলা। সকলের মঙ্গল কামনায় এই সিঁদুরখেলা হয়। থিমের পুজোর রমরমা চালু হলেও আজও পুজোর পাঁচ দিন কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির দুর্গাপুজো দেখতে ভিড় করেন অসংখ্য মানুষ।