|
---|
নিজস্ব সংবাদদাতা, সিউড়ি : মাঝে কেটে গেছে দশ দশটা বছর। বাবা মা দিদি বোন কে হারিয়ে সে একা একা কাটিয়েছে। বহু কষ্টে দিন কেটেছে। অবশেষে সে ফিরে পেলো তার পরিবারকে। সৌজন্যে বীরভূম ডিষ্ট্রিক লিগ্যাল সার্ভিসেস অথরিটি। বীরভূমের মুরারই থানা এলাকার দশ বছর বয়সে নাবালিকাকে কাজের জন্য আসানসোলে পাঠিয়েছিল পরিবার। সঙ্গে ছিলো নিজের মাও। এক দালালের খপ্পরে পড়ে মা নিজের ৮ বছরের কন্যাকে পাঠিয়েছিলো অন্যের বাড়ীতে কাজ করতে। সেই দালাল কলকাতার বেলঘড়িয়া এলাকায় এক পরিবারে কাজে ঢুকিয়ে দেয়। মাঝে মাঝে ঐ বাচ্চা মেয়ে তার মা বাবার সাথে দেখা করতে চাইলেও তাকে সেই সুযোগ দেওয়া হয় নি। কিন্তু তারপর থেকে দীর্ঘ ১০ বছর কোন যোগাযোগ ছিল না। অবশেষে জেলা আইনী পরিষেবা কর্তৃপক্ষের সচিব বিচারক মহম্মদ রুকুনদ্দিন সাহেবের ব্যক্তিগত উদ্যোগে বাড়ি ফিরতে চলেছে সে। জেলা আইনী পরিষেবা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গিয়েছে, কাকুলি (কাল্পনিক নাম) জেলার মুরারই থানা এলাকার বাসিন্দা। তার বয়স যখন ৮ বছর তখন কাজের জন্য এক ব্যক্তির হাতে নিজের মেয়েকে তুলে দেন পরিবারের লোকজন। এরপর ওই লোকটি কাকুলিকে আসানসোলে আরেক জনের কাছে পাঠায়। সেখান থেকে তাকে কলকাতার বেলঘড়িয়ায় এক ব্যক্তির বাড়িতে পাঠানো হয়। সেখানে প্রায় বছর চারেক কাজ করার পর সে বাড়ি ফিরে আসার জন্য পালিয়ে যায়। কিন্তু ওই ছোট্ট নাবালিকা কন্যা ঠিকঠাক নিজের বাড়ির ঠিকানাও জানত না। কেবল জানত তাঁর বাড়ি বীরভূম। ঐ কন্যা জানায়, যে বাড়ীতে থাকতো তারা বাড়ীতে যোগাযোগ করতে দিতো না। সে একদিন বেলঘড়িয়া ষ্টেশনে পালিয়ে আসে। সেখানে এক অচেনা ব্যাক্তিকে আবেদন করেন তাকে বাড়ীতে পৌছে দিতে। সেই অচেনা ব্যাক্তি তাকে রেল পুলিশের হাতে তু্লে দেন। মেয়েটি বাড়ীর ঠিকানা বলতে না পারলেও সে শুধু বীরভূম কথাটি বলেছিলো। তাই কলকাতা থেকে তাকে শান্তিনিকেতনের হোমে পাঠানো হয়। মেয়েটির ঠিকানা জোগাড় করতে চাইল্ড লাইন অনেক চেষ্টা করেও ব্যার্থ হয়। এরপর মাসখানেক আগে এই জেলার আইনী পরিষেবা কর্তৃপক্ষের সচিব যোগদান করেন মহম্মদ রুকুনদ্দিন । তিনি হোমগুলির সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কাকুলির বিষয়ে অবগত হন। তিনি প্রথমে পুলিশকে বিষয়টি জানান এবং ঐ কিশোরীর বাড়ির লোককে খোঁজার নির্দেশ দেন। কিন্তু পুলিশ প্রথমে খুঁজতে ব্যর্থ হন। এরপর আইনী পরিষেবা কর্তৃপক্ষের সচিব ব্যক্তিগত উদ্যোগে খোঁজখবর শুরু করেন। বিচারক মহম্মদ রুকুনউদ্দীন জানান, ” আমি জানতে পারি যে বাড়িতে সে কাজ করত সেটা কলকাতার বেলঘড়িয়ায়। এরপর আমি নিজে সেখানে গিয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করি।” বেশকিছুদিন ওই এলাকায় খোঁজাখুঁজির পর তিনি অবশেষে ওই বাড়ি খুঁজে পান। তারপর ওঁদের সঙ্গে কথা বলে যার মাধ্যমে ঐ কিশোরী বেলঘড়িয়ায় এসেছিল তাঁদের সন্ধান পান। এরপর তাঁদের সঙ্গে কথা বলে তিনি জানতে পারেন ঐ কিশোরীর বাড়ি মুরারই থানা এলাকার একটি গ্রামে। এরপর তিনি স্থানীয় পঞ্চায়েত এবং গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে ওই কিশোরীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হন। মহম্মদ রুকুনুদ্দিন মোল্লার কথায়,” খুবই ভাল লাগছে। মেয়েটিকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে পেরে খুবই ভাল লাগছে।” শান্তিনিকেতনের হোমে ঐ কিশোরীর সঙ্গে তার পরিবারের মাসি, দিদি ও অনান্য আত্মীয়দের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাত করান ডিষ্ট্রিক লিগ্যাল সার্ভিসেস অথরিটির সচিব মহাশয়। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবি মোনালিষা বন্দ্যোপাধ্যায়, আইনী সহায়ক মহিউদ্দীন আহমেদ, শান্তনা খাতুন ও হোম কতৃপক্ষ। প্রথমে কিশোরী তার পরিবারের কাউকেই চিনতে পারেনি। তারপর তার পরিবারের মা সহ অনান্য আত্মীয়দের আধার কার্ডের ছবি দেখানো হয়। তখন সে তার দাদুকে চিনতে পারে । পরিবারের আত্মীয়দের সঙ্গে কিশোরীকে গল্প করার সুযোগ করে দেওয়া। ইতিমধ্যে ঐ কিশোরী তার মায়ের খোঁজ করে। তার মা ও বাবা দুজনেই মারা গেছে সেকথা তাকে এখনও জানানো হয় নি। শুধু বলা হয়, তোর মা অসুস্হ্য, তাই আসতে পারে নি। কিশোরীর মাসি যখন সেই দশ বছর আগে নানান গল্প করে তখন মেয়েটির সব কিছু মনে পড়ে। এতদিন পর আত্মীয়দের কাছে পেয়ে আবেগ ঘন মূর্হুতে কেঁদে ফেলে কিশোরী। চোখে জল এসে যায় স্বয়ং বিচারক সহ ডিএলএসএ এর প্রতিনিধি, আইনজীবিদেরও। দশ বছর পর, আবেগ ঘন মুর্হুতে ঐ কিশোরী তার পরিবার কে পেয়ে আনন্দে কেঁদে ফেলে। সে বাড়ীর লোককে পেয়ে এক অন্য জীবন পেল। সে জানায়, এবার সে নতুন করে স্কুলে ভর্তি হবে। শুরু করবে নতুন জীবন। সৌজন্যে- বীরভূম ডিষ্ট্রিক লিগ্যাল সার্ভিসেস অথরিটি।