|
---|
পরিযায়ীর ঘরে ফেরার পর কেন্দ্র বলছে আস্তানা গড়ে দুমাস খাওয়াতে! সকল রাজ্যের জন্য বরাদ্দ মাত্র ১১ হাজার ২ কোটি ! অর্থাৎ রাজ্যপিছু বরাদ্দ মাত্র চারশ কোটি। প্রথম প্রশ্ন, যাদের রাখা ও খাওয়ানোর কথা এতদিন পর, তারাই তো বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন এখন!! আর দ্বিতীয়ত, এই সামান্য বরাদ্দে কি হবে?
আজ অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা এরকমই। কিন্তু কাদের স্বার্থে?
আসলে কেন্দ্র চাইছে পরিযায়ী শ্রমিক বাড়ি না ফিরে থেকে যাক।তারা ফিরে যাক কর্মস্থলে।রিয়েল এস্টেট ও শিল্প মহলের দাবি সে রকম।নইলে যে কর্মস্থলের চাকা বন্ধ হয়ে যায়! একই সঙ্গে অর্থমন্ত্রী চাইছেন এই শ্রমিকদের কারা ঠিকাদারের চুক্তিতে ঘর ছেড়ে আসছে আর কারা নিজেরা স্বেচ্ছায় চারটি করবার জন্য ভিন রাজ্যে আসছে? নতুন সংজ্ঞা এনে এদের মধ্যে বিভাজন করে কেন্দ্র এখন চাইছে যারা ঠিকাদারের নেতৃত্বে আছে তাদেরকে শিল্প শ্রমিক হিসেবে দেখে পৃথকভাবে বিবেচনা করতে! পুঁজির সেবক হিসেবে তাদের যে বড় প্রয়োজন!
একই সঙ্গে এই শ্রমিকদের নিয়ে আবার শুরু হতে চলেছে কেন্দ্র আর রাজ্যসরকারের তরজা। কে নেবে তাদের দায়!
পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার নির্দেশ দিয়েছে আশ্রয় শিবির তৈরি করে সেখানে রেখে তাদেরকে তিনবেলা খাওয়ানোর। আগামী দুমাসের জন্য এটি করতে বলেছে। প্রতিটি রাজ্যসরকারকে বলেছেন যে, রাজ্যের ডিজাস্টার ফান্ডের টাকা থেকে তারা যেন খরচটা করে। কেন্দ্র পরে দিয়ে দেবে।নিজ রাজ্যে ফিরে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘর বানিয়ে রাখতে এই অর্থবরাদ্দ হবে কি নাস্ত নিয়ে কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশ নেই।
এর আগেও সরকার দু মাস আগে যখন লকডাউন শুরু হয়েছিল তখন একই কথা বলেছিল।বলেছিল রাস্তায় বিভিন্ন স্থানে আটকে যাওয়া শ্রমিকদের জন্য ব্যবস্থা নিতে। থাকা এবং খাওয়ার ডিজাস্টার ফান্ড থেকে করতে। কেন্দ্র এই টাকা পরে দিয়ে দেবে। বাস্তবের হিসেবে দেখা যাচ্ছে, কোন রাজ্য সরকার কত শ্রমিককে রেখেছে তার কোন হিসেব নেই।ডিজাস্টার ফান্ড থেকে শ্রমিকদের জন্য কত খরচ হয়েছে তার কোন হিসেব কোন রাজ্য সরকারের কাছে নেই ।একমাত্র কেরল সরকার পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য আলাদা করে শেল্টার তৈরি করেছিল এবং রাজ্য সরকারের উদ্যোগে তাদের প্রতিদিনের খাওয়া, স্বাস্থ্য পরীক্ষা ইত্যাদি সমস্ত কিছুর দায়িত্ব নিয়েছিল।দেশের অন্য কোন রাজ্যে সেই রকম ব্যবস্থা তৈরি হয়নি।
এখন বিভিন্ন রাজ্যে নিজেদের শ্রমিকরা ফিরে আসার পর কেন্দ্র অস্থায়ী শিবিরে যাদের রেখে খাওয়াতে বলছে তারা কারা? ভিন রাজ্যের সমস্ত পরিযায়ী এখন তাদের ঘরের দিকে রওনা দিয়েছে। আর যারা নিজের রাজ্যে ফিরে এসেছে তারা তো যে যার বাড়িতেই চলে যাচ্ছে, তাহলে আজকে অর্থমন্ত্রী যাদের জন্য অস্থায়ী শিবির তৈরি করে দুই মাস ধরে খাওয়াতে বলছেন, সেই অস্থায়ী শিবিরে থেকে খাবে কারা?
এর পাশাপাশি আরও একটি সমস্যা রয়েছে।সমস্যাটা হলো কান্দো যে পরিমাণ টাকা দিচ্ছে তাই নিয়ে। এর আগে কেন্দ্রীয় সরকার আড়াই মাস ধরে রাজ্য সরকার কে বলে আসছেন যে এই ডিজাস্টার ফান্ড থেকে তারা যেন রাজ্যের পরিস্থিতি অনুযায়ী খরচ করে যান। ইতিমধ্যে রাজ্যগুলির কেন্দ্রের কাছে বারবার টাকা চেয়েছে। কিন্তু পাইনি বলে অভিযোগ জানাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার যেমন টাকা পাইনি বলে জানাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি এটাও সত্য যে প্রতিটি রাজ্য কেন্দ্রের আশ্বাসে এখনো পর্যন্ত খরচ করে ফেলেছেন লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা।প্রায় আড়াই মাস পর এস এখন যদি তাদেরকে ১১ হাজার কোটি টাকা দিয়ে বলা হয় সমস্ত রাজ্যগুলিকে এই টাকা থেকে ভাগ করে দেওয়া হবে অস্থায়ী শিবির গড়ে দুমাস পরিযায়ীদের খাওয়ানোর জন্য, কোন রাজ্যের ভাগে কতটুকু পড়বে? তা দিয়ে কতটুকু সমাধান হবে! পরিযায়ী শ্রমিকদের নামে চাপান উতর তা চলতে থাকবে। ঘোষণা ঘোষনাই থেকে যাবে। আর পরিযায়ী শ্রমিকদের ঠিকানা যেমন যার যেখানে ছিল সেখানেই তারা ফিরে যাবে।নইলে হবে খোলা আকাশের নীচে সারি সারি গাছের তলায়। এটাই হলো পরিযায়ী শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ। আর তাদের জন্য ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার আর রাজ্যসরকার।