উত্তমকুমারের মৃত্যুর পর তার স্মৃতিচারণায় উঠে এসেছে এমনই কিছু স্মৃতি

নিজস্ব প্রতিবেদক:- মহানায়ক উত্তমকুমার। যাকে নিয়ে আজও এতটুকুও উন্মাদনা কমেনি বাঙালির মধ্যে। আজও উত্তমকুমারের অভিনীত সিনেমাগুলো দর্শকদের প্রথম ভালোলাগা। উত্তমকুমারকে কাছ থেকে দেখা বা সান্নিধ্য কেউ পেলে বিভোর হয়ে যেতেন। উত্তমকুমারের মৃত্যুর পর তার স্মৃতিচারণায় উঠে এসেছে এমনই কিছু স্মৃতি। শুধু সিনেমাপ্রমীরাই নন উত্তমকুমারের স্মৃতি আঁকড়ে আজও বয়ে চলছে উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুর এলাকার ছোট জাগুলিয়ার বহু বৃদ্ধ বাসিন্দারা। কারণ, ছোটজাগুলিয়ার হালহকিকৎ আজ পাল্টালেও, বেশ কয়েক বছর আগেও ছিল প্রত্যন্ত গ্রামের সেই ছবি।আর সেই প্রকৃতির টানেই বাঙালির মহানায়ক এসেছিলেন এই ছোটজাগুলিয়ায়। ভালোবেসে ফেলেন এখানকার মাটিকে। এখানে বারবার ফিরে আসার তাগিদে, তিনি ছোটজাগুলিয়ায় একটি বাগান বাড়িও কিনে ফেলেন। আর তারপর কলকাতা থেকে ফিয়েট গাড়ি চেপে তিনি শুটিংয়ের চাপ কম থাকলেই শনিবার করে ছুটি কাটাতে সোজা চলে আসতেন তার এই বাগানবাড়িতে। স্বাদ করে বাগান বাড়ির নাম রেখেছিলেন ‘ভ্রমর’। আজও সেই নামই রয়েছে বাগান বাড়িটির। যশোর রোড থেকে কয়েক কিলোমিটার ভেতরে গেলেই এখনো এলাকাবাসীরা যে কেউ দেখিয়ে দেবেন উত্তম কুমারের বাগান বাড়িটিকে। স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, দু-এক দিন অবসর সময়ে এই বাগান বাড়িতেই রাত কাটিয়েছেন মহানায়ক।শুধু উত্তমকুমার নন, সেসময়ের বহু নামীদামি ব্যক্তিত্বের আনাগোনা ছিল বলে জানা যায় এলাকার পুরোনো বাসিন্দাদের মুখে। কয়েকবার সেই সময়ের কলাকুশলীদের নিয়ে পিকনিকও হয়েছে এই বাগান বাড়িতে। জানা যায় , উত্তমকুমারের অভিনীত কোন একটি সিনেমার কিছু অংশের শুটিংও নাকি হয়েছিল এই বাগানবাড়িতেই। এখনো বাগানবাড়িটির চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য গাছ। লিচু, আম, বকুল সহ আরো নানা গাছের ছায়ায়, রয়েছে একটি ছোট্ট বাগান কুঠিরও। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য পিয়ালী দাস নানা কাহিনী জানালেন আমাদের। তিনি বলেন, আমার দাদুকে ধরম বাবা ডেকেছিলেন উত্তম কুমার। শুনেছি, আমাদের বাড়ির বাগানের গেটের কাছে উনি গাড়ি রেখে হাঁটতে হাঁটতে আসতেন এই বাগানে। যাওয়ার সময় কখনো কখনো পিয়ালী দেবীদের বাড়িতে গিয়ে বসতেন চা জল খাবারও খেতেন। মাছের ঝোল ভাত প্রিয় ছিল মহানায়কের।মাঝেমধ্যে নানা খাবারের আবদারও রাখতেন বলে জানালেন পিয়ালী দেবী। জানা যায়, এই গ্রামে গাড়ি থেকে এক সময় মহানায়ক উত্তম কুমারের পছন্দের কোট-টি চুরি হয়ে যায়। তারপর থেকেই এই বাগানে আশা বন্ধ করেন বাংলা চলচ্চিত্রের মহানায়ক। জানাযায় এরপরই বাগানটি তরুণ কুমারের কাছে বিক্রি করে দেন দাদা উত্তম কুমার। তবে তার পরেও শেষ একবার এখানে এসেছিলেন উত্তম কুমার। তবে তা পিয়ালী দেবীর দাদুর পারলৌকিক ক্রিয়ার নিয়ম রক্ষার্থে।বর্তমানে যদিও বাগানটির মালিকানা হস্তান্তরিত হয়েছে। তবে এখনো তা উত্তম কুমারের বাগান বলেই পরিচিত। তবে বদলায়নি বাগানটির নাম। এখনো শীতকালে বহু মানুষ পিকনিক করতে দত্তপুকুরের এই উত্তম কুমারের ‘ভ্রমর’ বাগানটিকেই পছন্দের তালিকায় উপরের দিকে রাখেন, বলে স্থানীয়রা জানান। বর্তমানে এই বাগানের দায়িত্বে রয়েছেন একজন কেয়ারটেকার। তিনিও নানা কাহিনীর কথা শোনালেন মহানায়ককে নিয়ে। স্থানীয় এলাকা বাসিন্দাদের থেকেও, তাদের ছোটবেলায় নায়ক কে দেখার নানান অভিজ্ঞতার কথা জানা যায়। সব মিলিয়ে, ছোট জাগুলিয়ার মানুষ আজও উত্তম কুমারকে নিয়ে এই বাগানকে ঘিরে নস্টালজিয়া অনুভব করেন।