ফের বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দালাল চক্র সক্রিয়

নিজস্ব সংবাদদাতা : ফের বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দালাল চক্র সক্রিয় থাকার প্রমাণ মিলল। রোগিনীকে সরকারি হাসপাতালের পরিবর্তে বেসরকারি নার্সিংহোমে নিয়ে যেতে সক্রিয় দালালরা।

    মেমারি থানার সাতগাছিয়া এলাকার এক বৃদ্ধার পায়ে সংক্রমণ হয়। তাঁর চিকিৎসার জন্য রোগীর পরিবারের লোকজন বর্ধমান মেডিক্যালের এমারজেন্সিতে নিয়ে আসেন। বৃদ্ধার মেয়ে রণিতা দাস অভিযোগ করেছেন, গত সোমবার তাঁর মাকে বর্ধমান হাসপাতালের এমারজেন্সিতে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হলে সেখানের চিকিৎসক তাঁর মাকে দেখে জানান, এখানে চিকিৎসা করালে তাঁর পা কেটে বাদ দিতে হতে পারে। তার জন্য কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসক।অভিযোগ, এরপর তিনি পরিবারের অন্যদের সঙ্গে যখন এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করছিলেন সেই সময় হাসপাতালের ভেতর সজল বাগ নামে এক ব্যক্তি তাঁকে এসে প্রস্তাব দেন যে তাঁর মাকে খোসবাগানের একটি নার্সিং হোমে নিয়ে গেলে সুস্থ করা যাবে। এমনকি তাঁর মায়ের পায়ের প্লাস্টিক সার্জারি করার ব্যবস্থাও সেখানে হয়ে যাবে। রণিতা দাস জানান, এরপর টোটোয় করে তাঁর মাকে খোসবাগানের সেই নার্সিংহোমে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করেন। অভিযোগ, সেখানে দু’দিন ভর্তি থাকলেও কোনও চিকিৎসা করা হয়নি। মায়ের পরীক্ষা নিরীক্ষা বাবদ খরচ থেকে ওষুধ কেনার সব খরচ তিনিই বহন করেছেন। অথচ নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ তাঁর কাছ থেকে চিকিৎসা বাবদ প্রথমে ৩৫ হাজার, পরে আরও ৪৫ হাজার টাকা নিয়ে নেয়। এদিকে মাকে কলকাতা নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করাবেন বলে বের করে নিয়ে যেতে চাইলে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ ফের আরও ৬০ হাজার টাকা তাঁর কাছ থেকে দাবি করেন বলে অভিযোগ।

     

    রণিতা দাস অভিযোগ করেছেন, বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে কলকাতা নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়ার পর তাঁর মাকে হাসপাতালেরই ওই কর্মী সজল বাগের পরামর্শে খোসবাগানের একটি নার্সিংহোমে নিয়ে এলেও সেখানে দুদিন ধরে কোনও চিকিৎসা না হওয়ায় মায়ের একটা পা থেকে আরেকটা পায়েও সমস্যা তৈরি হতে শুরু করে। এমনকি নানান অজুহাত দেখিয়ে তাঁর কাছ থেকে ৮০হাজার টাকা নিয়ে নেয় ওই নার্সিংহোম।

    এ ব্যাপারে রণিতা দাস বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্মী সজল বাগের খোঁজে বর্ধমান হাসপাতালে গিয়ে পুলিশ ক্যাম্পে অভিযোগ জানাতে গেলে তা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। আরও অভিযোগ, তাঁকেই ধমকে চুপ করিয়ে দেয় হাসপাতালের ক্যাম্পের কর্তব্যরত পুলিশ কর্মীরা। এরপর তিনি বর্ধমান থানায় এব্যাপারে অভিযোগ জানানোর জন্য আসেন। কিন্তু অভিযোগ, সেখানেও নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে অভিযোগ নেওয়ার পরিবর্তে বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এবং মিটেও যায়। পরে পরবর্তী আর কোনও টাকা না নিয়েই তাঁর মাকে ছেড়ে দেয় নার্সিংহোম। ফলে রণিতা দাস আর কোনও অভিযোগ দায়ের না করেই মাকে নিয়ে চলে যান। অভিযোগ, মাঝখান থেকে নার্সিংহোম কোনও চিকিৎসা না করেই ৮০ হাজার টাকা নিয়ে নেয় রোগীর পরিবারের কাছ থেকে বলে অভিযোগ।জানা গিয়েছে, এর আগেও খোসবাগানের এই নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে চিকিৎসার গাফিলতি, জোর করে রোগী আটকে রাখার অভিযোগ নিয়ে বর্ধমান থানার দ্বারস্থ হয়েছেন একাধিক রোগীর পরিবারের আত্মীয়রা। কিন্তু প্রতিবার নার্সিংহোমের কতিপয় অংশীদারের মদতে এবং বর্ধমান থানার এক শ্রেণীর অফিসারের বোঝাপড়ায় রোগীর পরিবারের অভিযোগ গ্রহণ করা হয়নি বলে অভিযোগ। আর এই ক্ষেত্রেও সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ায় ভুক্তভুগী মেমারির সাতগাছিয়া এলাকার বাসিন্দা রণিতা দাস আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েও কোনও অভিযোগ দায়ের করতে পারেননি বলে অভিযোগ।

    বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতলের সুপার তাপস ঘোষ বলেন, ‘‘রোগীর পরিবারের কাউকে হাসপাতালের ভেতর থেকে ভুল বুঝিয়ে অন্যত্র চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে আমাদের কাছে অভিযোগ জানাতে হবে। যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তার নাম জানিয়ে যদি কেউ অভিযোগ করেন আমরা দ্রুত বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এর আগেও এই ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে একাধিক অভিযুক্তকে টার্মিনেট করা হয়েছে। তবে এই ঘটনায় কোনও অভিযোগ আমার কাছে জমা পড়েনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই খোঁজ খবর নেওয়া হবে। আমরা নিয়মিত হাসপাতাল চত্বরে সর্বত্র রোগীর পরিবারের লোকজনকে সতর্ক ও সচেতন করার উদ্দেশ্যে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছি। পুলিশ ক্যাম্প থেকেও সতর্ক নজর রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে সংবাদ মাধ্যমের কাছে এই ঘটনার বিষয় জানার পর আমরা এব্যাপারে খোঁজ খবর নেব ৷ ’’