শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে

মালদা , ২৮ ডিসেম্বর: মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরেও শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম বিষয়ে উদাসীন মনোভাব দেখাচ্ছে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি এই নিয়োগ-প্রক্রিয়া একজনের চক্রান্তে হয়েছে এবং জনৈক একজন গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়কে পরিচালনা করছে সে ব্যাপারেও ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে মালদায় প্রশাসনিক বৈঠক করতে এসে কর্তৃপক্ষকে রীতিমতো সতর্ক করে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তড়িঘড়ি বৈঠক ডেকে সমস্ত তথ্য তুলে ধরার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি রাজ্য উচ্চ শিক্ষা দপ্তরের সচিব মনীষ জৈনকে বিষয়টি তদারকি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।

    এরপর গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় ২২ ডিসেম্বর ইসি বৈঠক ডাকা হলেও রহস্যজনকভাবে সেই বৈঠক স্থগিত করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এতেই প্রশ্ন উঠেছে যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির নির্দেশের পরেও গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেটি মানছে না। এমনকি অধ্যাপকদের সংগঠন ওয়েবকুপার এক নেত্রীর বিরুদ্ধেও বিশ্ববিদ্যালয় নিয়োগ প্রক্রিয়া এবং ইসি বৈঠক বানচাল করার অভিযোগ উঠেছে।

    গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে,  ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও আধিকারিক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। নিয়োগে পদ্ধতি শুরু হতেই

    বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগের ভিত্তিতে রাজ্য সরকারের উচ্চশিক্ষা দপ্তর নিয়োগ  স্তগিত রাখার সুপারিশ করে।  নিয়োগের পদ্ধতির শুরুতেই উচ্চ শিক্ষা দপ্তরের নির্দেশ দিলেও তৎকালীন উপাচার্য প্রফেসর চঞ্চল চৌধুরী ও তৎকালীন অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত নিবন্ধক বিপ্লব গিরি, এই নিয়োগ প্রক্রিয়া চালিয়ে যান। এই নিয়োগ প্রক্রিয়াতে  যে গলদ রয়েছে, তা একপ্রকার স্বীকার করে নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিক।

    তাঁর মতে , নিয়োগ প্রক্রিয়ার আবেদনের শেষ তারিখের আগেই স্ক্রিনিং সম্পূর্ণ হয়েছে এবং দু’দিন পর ইন্টারভিউ নেওয়া হয়েছে। যেদিন ইন্টারভিউ সেদিনই নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে। এমনকি হঠাৎ করে গৌড়বঙ্গের কলকাতা ক্যাম্প অফিসে জয়েন করানো ১১ জন শিক্ষককে। এছাড়াও জয়নিং রিপোর্টে কোনো রিসিভের কোনো সিলমোহর পর্যন্ত নেই। এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ১১ জন শিক্ষকের মধ্যে তিনজন নিয়োগপত্র পান। এর মধ্যে আবার  একজন দুবার ভিন্ন তারিখে কাজে যোগদান করেন। আর এক অধ্যাপক আগেরদিন নিয়োগপত্র পেয়ে, ওইদিন রিলিজ, লিয়েন নিয়ে পরেরদিন কলকাতায় গিয়ে পদে যোগদান করেন।

    গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক দেবব্রত দেবনাথ বলেন, মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশের পরও ইসি বৈঠক রহস্যজনকভাবে স্থগিত করে দেওয়া হল। আসলেই এই বৈঠকে বিভিন্ন বিষয়ে গুলি উঠে আসতো। এখানে অনেক কিছু বেনিয়ম ধরা পড়ার সম্ভাবনা ছিল। তাই রহস্যজনক কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বৈঠক স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে।

    বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে উপাচার্য তড়িঘড়ি ২২ ডিসেম্বর ইসির সভা ডাকেন ।  সেখানেই এই  নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এই আলোচনাকে ভেস্তে দিতে অধ্যাপকদের সংগঠন ওয়েবকুপার এক নেত্রী ইসির সদস্যভূক্তির একটি বিষয় নিয়ে উচ্চ শিক্ষা বিভাগে অভিযোগ জানান এবং ইসি বৈঠক আপাতত স্থগিত করতে বাধ্য করেন।  শিক্ষা মহলের ধারণা ওনার নির্দেশে নিযুক্ত  ওই ১১ জন অধ্যাপককে আড়াল করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে  ।

    গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য শান্তি ছেত্রী অবশ্য এই প্রসঙ্গ নিয়ে কোনো রকম মন্তব্য করতে চান নি। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দিকেই ঠেলে দিয়েছেন।