|
---|
নিজস্ব প্রতিনিধিঃ মোবাইল ফোন ছিনতাইয়ের অভিযোগ নিয়ে ১৭ই আগস্ট সন্ধ্যায় নিউ আলিপুর থানায় হাজির হন দেগলাল রাই নামের এক বৃদ্ধ। মেয়ের বিয়ের পর প্রথমবার মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে দক্ষিণ কলকাতায় চেতলা রোডে মেয়ের শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশ্যে কলকাতায় এসেছিলেন ঝাড়খণ্ডের গিরিডির বাসিন্দা দেগলাল বাবু।
অচেনা শহর, অজানা রাজপথ, সম্বল বলতে একটি মুঠো ফোন ও চিরকুটে লিখে আনা মেয়ের শ্বশুরবাড়ির ঠিকানা এবং মেয়ের ফোন নম্বর। কিন্তু ফোন ধরা ও কেটে দেওয়া ছাড়া ফোনের অন্য কোনও ব্যবহার অজানা ছিল সরল গ্রাম্য বৃদ্ধের।
শহরে ঘুরতে ঘুরতে দক্ষিণ কলকাতার মহাবীরতলা ক্রসিং -এ পৌঁছে যান দেগলাল বাবু, মেয়ের শ্বশুরবাড়ির ঠিকানা জিজ্ঞেস করেন একজন পথচারীকে। হঠাৎই বেজে ওঠে হাতে ধরা মুঠো ফোনটি। ফোন ব্যবহারে অপটু মানুষটি সরল বিশ্বাসে ফোনটি ধরিয়ে দেন সেই পথচারীকে যাতে মেয়ের সাথে কথা বলে ঠিকানাটি ভালো করে বুঝে নিতে পারেন তিনি। কিন্তু ঠিকানা বলা তো দূর অস্ত মোবাইলটি হাতে নিয়েই উধাও ওই পথচারী।
ঘটনার আকস্মিকতায় হতচকিত দেগলাল বাবু দু চোখে অন্ধকার দেখেন। ফোন না থাকায় মেয়ের সাথে যোগাযোগও করতে পারছিলেন না অসহায় বৃদ্ধ। রাস্তা হারিয়ে শহরের অলিগলি থেকে রাজপথ ঘুরছিলেন উদভ্রান্ত দেগলাল বাবু। সহৃদয় কিছু মানুষের পরামর্শেই তাঁর থানায় আগমন।
সারাদিনের শারীরিক ও মানসিক ধকল এবং ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট শীর্ণকায় বৃদ্ধের চোখেমুখে। নিউ আলিপুর থানার অফিসারদের বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে সারাদিন মানুষটি অভুক্ত রয়েছেন। প্রথমেই তারা ক্ষুধার্ত মানুষটির জন্য জল ও খাবারের ব্যবস্থা করেন। এতে কিছুটা ধাতস্থ হন দেগলাল বাবু। এরপর শুরু হয় খোয়া যাওয়া মোবাইল উদ্ধারের জন্য তৎপরতা। তাঁর হাতের চিরকুটে লেখা মোবাইল নম্বরে ফোন করে দেগলাল বাবুর মোবাইল ফোন নম্বরটি জোগাড় করেন নিউ আলিপুর থানার তদন্তকারী অফিসার, জেনে নেওয়া হয় তাঁর মেয়ের বাড়ির সঠিক দিক নির্দেশ। শুরু হয় ছিনতাইকারীর খোঁজ। সাহায্য নেওয়া হয় প্রযুক্তির। নিয়োগ করা হয় বিশ্বস্ত সোর্সদেরও। সাফল্য আসতে দেরি হয়নি, মাত্র এক ঘন্টার মধ্যেই বেহালার পি এন মিত্র লেনের বাড়ি থেকে পাকড়াও করা হয় ছিনতাইবাজ ছোটকা হালদারকে। উদ্ধার হয় ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোনটিও।
হারানো মোবাইল ফিরে পেয়ে হাসি ফোটে বৃদ্ধের মুখে। তাঁকে ফেরত নিয়ে যেতে নিউ আলিপুর থানায় এসেছিলেন তাঁর জামাই ধর্মেন্দর সিং। খুশি তিনিও।
অসহায় বৃদ্ধের মোবাইল ফোন উদ্ধারে নিউ আলিপুর থানার তৎপরতা সত্যিই প্রশংসনীয়। প্রশংসনীয় তাদের মানবিক আচরণও।
নিচে রইল উদ্ধার হওয়া সেই মোবাইল ফোন এবং ধৃত ছোটকা হালদারের ছবি। সাথে রইল দেগলাল রাই এবং নিউ আলিপুর থানার তদন্তকারী দলের ছবিও। তদন্তকারী দলের ছবিতে বাঁ দিক থেকে, সাব ইন্সপেক্টর দীপক সাম্বল এবং প্রবীণ সুব্বা, ওসি নিউ আলিপুর থানা, ইন্সপেক্টর অমিত শঙ্কর মুখার্জী, অ্যাডিশনাল ওসি নিউ আলিপুর থানা, ইন্সপেক্টর শৈবাল রায় এবং সাব ইন্সপেক্টর কল্লোল রায়।