|
---|
খান আরশাদ, বীরভূম:
অনুব্রত মণ্ডল-কাজল শেখ এখন প্রতিদিনই শিরোনামে। কাজল শেখ বা অনুব্রত মণ্ডল তাঁরা যে যাই বলুন না কেন বিতর্ক কিন্তু তাদের পিছু ছাড়ছে না।
বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে গরু পাচার মামলা ও আর্থিক তছরুপের অভিযোগে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে আটক হয়ে দীর্ঘ ২ বছর তিহার জেলে থাকতে হয়। সেই মুহূর্তে অনুব্রতর অবর্তমানে দলীয় সাংগঠনিক কাজকর্ম পরিচালনার জন্য স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বীরভূমে কোর কমিটি গঠন করে দেন। কোর কমিটি পরিচালিত পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচনে দলীয় ফলাফলে রাজ্য নেতৃত্ব কতৃক ভূয়সি প্রশংসিত হয়। এদিকে শারদীয়ার প্রাক্কালে জেলমুক্তি হয়ে জেলায় ফেরেন অনুব্রত মণ্ডল। তখন থেকেই শুরু হয় গুঞ্জন। তাহলে কি এবার অনুব্রত মণ্ডল তৃণমূল সভাপতি হিসেবে জেলা পরিচালনা করবেন? নাকি কোর কমিটি জেলা পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন? সম্প্রতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন আনুগত্য নয় পারফরম্যান্সই শেষ কথা।পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে তাদের ফলাফল যথেষ্ট ভালো। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আবার দেখা দেয় ধোঁয়াশা।জেলার প্রতিটি ব্লকে শারদীয়ার বিজয়া সম্মিলনী উপলক্ষে সভা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু কাজল-অনুব্রতকে বিজয়া সম্মিলনীর সভা গুলিতে কোথাও একমঞ্চে দেখা যায়নি। সে নিয়ে বিতর্ক জেলা জুড়ে। এদিকে কাজল শেখ দীর্ঘদিন কোর কমিটির মিটিং না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অন্যদিকে অনুব্রত মণ্ডলের বক্তব্য ছিল কোর কমিটি শুধু বোলপুর কেন্দ্রিক না হয়ে জেলার অন্যান্য প্রান্ত থেকেও সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে কোর কমিটিতে সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হোক।
শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে কোর কমিটির আহ্বায়ক তথা বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী ১৬ই নভেম্বর বোলপুর দলীয় কার্যালয়ে কোর কমিটির মিটিং ডাকেন। ১৬ নভেম্বরের মিটিং এ কাজল-অনুব্রত মণ্ডলের মুখোমুখি ঘিরে রাজনৈতিক মহলের পাখির চোখ ছিল। কি হয় কি হয় অবস্থা।
যদিও শেষ পর্যন্ত অনুব্রত মণ্ডল আর কাজল শেখের উপস্থিতিতেই কোর কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
যে অনুব্রত মণ্ডলের সিদ্ধান্তই ছিল শেষ কথা, সেই অনুব্রত মণ্ডল জেলে থাকাকালীন মুখ্যমন্ত্রী জেলা চালানোর জন্য কোর কমিটি তৈরি করে দেন। কিন্তু এখন অনুব্রত মণ্ডল ফিরে এসেছেন।
সকলের মনে প্রশ্ন ছিল!
কোর কমিটি জেলা চালাবে ?
না অনুব্রত মণ্ডল আগের মত এককভাবেই জেলা চালাবেন ?
অনুব্রত মণ্ডলের দাবি মেনে কি মুখ্যমন্ত্রী কোর কমিটির সদস্য সংখ্যা আরো বাড়াবেন ?
কি দায়িত্ব অনুব্রত মণ্ডলকে দেওয়া হবে ?
জেলা চালানোর ক্ষেত্রে কাজল শেখের ভূমিকাই বা কি থাকবে ?
অনুব্রত মণ্ডলকে মুখ্যমন্ত্রী যদি এককভবে দায়িত্ব দেন, তাহলে কোর কমিটির অন্যান্য সদস্যরাও তো দাবি করতে পারেন যে, অনুব্রত না থাকাকালীন তাঁরাই আগের নির্বাচনের জয়ের থেকেও বড় জয় এনে দিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে তাঁদের ভূমিকায় বা কি হবে ?
হাজারো প্রশ্নের মাঝে বৈঠক সেরে সাংবাদিকদের সামনে অবশেষে উপস্থিত হন কাজল শেখ, বিকাশ রায় চৌধুরী সহ অন্যান্যরা।
প্রায় এক ঘন্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে বলেন একসাথে চলতে হবে, সংগঠনকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। মিটিং শেষে কোর কমিটির আহ্বায়ক বিকাশ রায় চৌধুরী সাংবাদিকদের এক সাক্ষাৎকারে বলেন অনুব্রত- কাজলকে নিয়ে যে গান বাজছিল তার যবনিকা হল। সবাইকে নিয়ে মিটিং যথেষ্ট ভালো হয়েছে। সবার মুখেই হাসি। কারো মধ্যে কোন দ্বন্দ্ব নেই। অনুব্রত মণ্ডল আমাদের অভিভাবক, উনি তো চেয়ারপার্সন। আর বিকাশ রায় চৌধুরীর সেই ‘চেয়ারপার্সন’ বক্তব্য ঘিরে ফের শুরু হয়েছে জেলা জুড়ে বিতর্ক।
কাজল শেখ এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন এটা হয়তো আপনাদের শুনতে ভুল হয়েছে বা যিনি বলেছেন তিনি হয়তো ভুলবশত: বলেছেন।
কোর কমিটির সদস্য ৬ জন ছিল, সেখানে ৭ জন সদস্য হয়েছে। যদিও তিনি অনুব্রতকে অভিভাবক ও রাজনৈতিক গুরু এবং কোনো দ্বন্দ্ব নেই মুখে বলেন। তিনিও একজন সদস্য মাত্র এই কথাটি বারবার তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন আকারে ইঙ্গিতে। যা কিছু কমিটির করার মূল দায়িত্ব আহ্বায়ক বিকাশ রায় চৌধুরীর।
এদিকে রবিবার রামপুরহাট শহরে দলীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করার পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের তৃনমূল সাংসদ শতাব্দী রায় বলেন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়- অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিদ্ধান্তের উপরই দল চলে। তাঁদের সিদ্ধান্ত প্রত্যেকের মেনে কাজ করা প্রতিটা কর্মীরই দায়িত্ব। কোর কমিটিতে যুক্ত অনুব্রত মণ্ডলের প্রসঙ্গে বলেন সেটা ভালো। তবে অনুব্রত মণ্ডল কি চেয়ারপার্সন ? প্রশ্ন করাতেই শতাব্দি রায় বলেন এটা আমার জানা নেই। আমি জানি একটা সদস্য বেড়েছে। যেখানে কোর কমিটির ৬ জন ছিলেন সেখানে অনুব্রত মণ্ডলকে নিয়ে ৭ জন সদস্য হয়েছে। আর অনুব্রত মণ্ডল যদি চেয়ারপার্সন হয়ে থাকেন, তাহলে এটা তো নিশ্চয়ই দল ঘোষণা করবে বা দলগত ভাবে চিঠি দিয়ে হোক বা কোর কমিটি থেকে প্রেসমিট করে হোক সেটা জানাবে। এরকমই মন্তব্য করলেন সাংসদ শতাব্দী রায়। অনুব্রত মণ্ডলের চেয়ারপার্সন বিষয়ে কাজল শেখের পাশেই দাঁড়ালেন সাংসদ শতাব্দী রায়।
এ যেন কাজল-অনুব্রত দ্বন্দ্ব বিতর্কের যবনিকা পড়েও ফের বিতর্ক !