তিন কন্যার শুটিং-এ অপর্ণা সেন এসেছিলেন মুর্শিদাবাদের এই মন্দিরে

নিজস্ব প্রতিবেদন: মুর্শিদাবাদের প্রাচীন রাজবাড়ি মধ্যে অন্যতম নিমতিতা রাজবাড়ি। আজ থেকে ৩৫০ বছর আগে, গৌর সুন্দর চৌধুরী ও দ্বারকানাথ চৌধুরীর হাতে তৈরি হয়েছিল এই রাজবাড়ি। অতীতে প্রাসাদের আনাচেকানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতো রাজকীয় বৈভব। বর্তমানে বিবর্ণ দেওয়াল ও দাঁত বের করা ইটগুলোই আজ সার।

     

    নিষ্ঠুর কাল কেড়ে নিয়েছে তার যৌবন। জরাজীর্ণ কঙ্কালসার নিমতিতার রাজবাড়ি কোনওক্রমে দাঁড়িয়ে রয়েছে জানা-অজানা ইতিহাসের নানা সাক্ষী হয়ে। মুর্শিদাবাদ জেলার সুতি দুই নম্বর ব্লকের কীর্তিনাশা পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত এই রাজবাড়ি কালের নিয়মে আজ জরাজীর্ণ ধ্বংস স্তুপে পরিণত হয়েছে। আগে জাঁক জমকের সাথে দুর্গাপুজো হলেও আজ সে জৌলুশ অতীত। রাজ পরিবারের কেউ আর থাকেন না নিমতিতায়। পেশাগত কারণে থাকেন অন্যত্র।

    বাংলার নাট্যজগতের সাথে আত্মিক সম্পর্ক ছিল এই রাজবাড়ির। ক্ষিরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ, শিশির কুমার ভাদুড়ির নাটক মঞ্চস্থ হত এখানে। সত্যজিৎ রায় ‘জলসাঘর’, ‘দেবী’-র মতো ছবির শুটিং করেছেন এখানে। জলসাঘর সিনেমায় দেওয়ালে সবুজ রং এর যে কারুকাজ দেখা যায় সেগুলি ছবি বিশ্বাসের নিজের হাতে আঁকা।

    এছাড়াও তিন কন্যার শুটিং-এ অপর্ণা সেন এসেছিলেন এখানে। দেবী সিনেমার শুটিং এ র্শমিলা ঠাকুর পড়েছিলেন রানী মার গয়না। শুধু তাই নয় পালাগান, ঝুমুর, যাত্রা, মেলা এই সব ছিল রাজবাড়ির পুজোর অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। স্থানীয় বাসিন্দা কুমারেশ হালদার বলেন, এই বাড়ির এক পাশে রয়েছে ঠাকুর দালান। পুরনো জাঁকজমক আজ না থাকলেও পুজো কিন্তু চলে আসছে একই নিয়ম নিষ্ঠা মেনে। এক সময় এই অঞ্চলে শুধুমাত্র রাজবাড়িতেই পুজো হত। ১০১ঢাক সহযোগে পুজোর সুচনা হত। সেখানে অংশ নিত গ্রাম ছাড়িয়ে দূরদূরান্তের মানুষও। পুজোর ক’দিন নববধূর সাজে সেজে উঠত এই রাজবাড়ি। ষষ্ঠীর দিন হত মায়ের আবাহন। পুজোর ক’দিন গ্রামের মানুষের পাত পড়ত রাজবাড়িতেই। বিজয়াদশমীতে ওড়ানো হত নীলকণ্ঠ পাখিও। কালের নিয়মে আজ সবই ম্লান। এখন এই পুজোর দায়িত্ব গৌর সুন্দর চৌধুরীর চতুর্থ প্রজন্মের ওপর। পুজোর জন্যই তারা সুদূর কলকাতা থেকে নিমতিতা আসেন।

     

    ঐতিহ্য মেনে এখনও একচালার প্রতিমা তৈরি হয়। প্রতিমা শিল্পীও বংশ পরম্পরায় এই কাজ করে আসছেন। বারোয়ারি পুজো যতই হোক আজও এখানে রাজবাড়ির প্রতিমাদর্শন ছাড়া পুজো অসম্পূর্ণ। ইতিহাসের পাতা যেভাবে জীর্ণ হয়ে যায় ঠিক সেভাবেই কালের গর্ভে চলে যেতে বসেছে মুর্শিদাবাদের গৌরব নিমতিতা রাজবাড়ি। এই রাজবাড়ি কে কয়েক মাস আগেই হেরিটেজ ঘোষণা করেছে সরকার। তবে হেরিটেজ কবে অধিগ্রহণ হবে এবং কবে আবার রক্ষণাবেক্ষণ শুরু হবে তার দিকে তাকিয়ে আছেন স্হানীয় বাসিন্দা ও পরিবারের সদস্যরা।