কুলতলি বিট অফিসে APDR এর পক্ষ থেকে স্মারকলিপি জমা দিলেন সুন্দরবনের মৌলেরা

বাবলু হাসান লস্কর,দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা: আপনি নিশ্চয় অবগত আছেন যে গত বছর করোনা মহামারির জন্য প্রায় ৮ মাস ‘লকডাউন’ ঘোষণা করা হয়েছিল। পশুপাখির করোনা সংক্রমণ হওয়ার ভয়ে সুন্দরবনের মৎসজীবিদের মাছ ধরার BLC Pass দেওয়া হয়নি। সুন্দরবনের মৎসজীবিদের আলাদা কোন সরকারি সুযোগ সুবিধাও দেওয়া হয়নি। এই মার্চ মাসে সুন্দরবনের মানুষেরা মধু সংগ্রহ করে। তার জন্য বনদপ্তের অনুমতি নিতে হয়। আমরা সুন্দরবনবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি যে এবছর নাকি মধু সংগ্রহের জন্য মহুল পাস দেওয়া হবেনা। বনদপ্তের যুক্তি, আমফান ঝড়ে প্রচুর মৌমাছি মারা গেছে। তাই এই বছর মৌমাছির সংখ্যা বাড়াতেই নাকি এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমরা জানি, এই বৃহত্তম বদ্বীপে ‘কোর এরিয়ায়’ মৌলেদের যেতে দেওয়া হয়না। এবং গভীর জঙ্গলেও মৌলেরা ঢুকতে পায়না। তিন ভাগের এক ভাগ মধু সংগ্রহই করা হয়না।আইন আজ হয়েছে। অথচ যুগ যুগ ধরে এই সুন্দরবনের ভূমিপুত্ররাই জঙ্গল বাঁচিয়ে রেখেছে। আমরা জানি ফেব্রুয়ারিতে মৌমাছি উড়ে আসে, গাছ পছন্দ করে ও চাক তৈরি করে। মধুর চাক যদি না কাটা হয় তাহলে মৌমাছির সংখ্যা কমে যাবে। কারন মৌমাছি বসে বসে মধু খাবে ও অলস হয়ে যাবে। ফুলের মধু সংগ্রহ করবে না আর গাছের মিলন বন্ধ হবে যা বনের জন্য প্রচুর ক্ষতি। মৌলেদের বনে না যেতে দেওয়ার এই যুক্তি তাই মোটেই গ্রহনযোগ্য নয়।


    অথচ এই মধুগুলো তারা বাঘের মুখ থেকে সংগ্রহ করে এনে সস্তায় ১৩৫ টাকা লিটার মূল্যে বনদপ্তরের কাছে বিক্রি করে। মৌলেরা নিজেরা বেশি দামে বাইরে বিক্রি করতে পারবে না। আমরা দেখি শপিং মলে মধু বোয়েমজাত হয়ে বিক্রি হয় ৫০০,৬০০,৭০০, টাকা লিটার প্রতি। মৌলেরা এই মহুল পাস বছরে মাত্র দুই তিন মাসের জন্য পান। তাদের এই জীবিকা কেড়ে নেওয়ার অর্থ তাঁদের জীবনের অধিকার কেড়ে নেওয়া। এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে তাদের এই প্রতিবাদ ।

    দাবী গুলি

    ১/গতবছরের মহুল পাস না দেওয়ার জন্য মৌলেদের তিনমাসের আয়ের সমপরিমাণ টাকা প্রত্যেককে ক্ষতিপূরণ হিসাবে দিতে হবে।
    ২/একদিনও আর দেরি না করে ২০২১ এর মহুল পাস অবিলম্বে দিতে হবে।
    ৩/মধুর নুন্যতম ২০০ টাকা লিটার প্রতি মূল্য নির্ধারণ করতে হবে। এই সিজন থেকেই তা দিতে হবে।
    ৪/প্রতি বছর মধুর মূল্য উপযুক্ত হারে বাড়াতে হবে।
    ৫/মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে দূর্ঘটনা ঘটলে তৎকালীন ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
    ৬/মৌলেদের মধু সংগ্রহের জন্য উপযুক্ত ট্রেনিং দিতে হবে। কুলতলি ফরেস্ট অফিসারের নিকট – আমরা আশা করি সুন্দরবনের বিপুল সংখ্যক শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থে আপনারা এই দাবিসনদ মেনে নেবেন এবং কার্যকরী করার নির্দেশ দেবেন এই আশা মৌলেরা করছেন ।