|
---|
নতুন গতি নিউজ ডেস্ক: শনিবার, ২৩ অক্টোবর শুরু হয়ে গেল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্ব। প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি দক্ষিণ আফ্রিকা। যে ম্যাচকে এক সময় ধুন্ধুমার ক্রিকেটীয় দ্বৈরথ মনে করা হতো।
কিন্তু বিশ্বের তামাম ক্রিকেটভক্তদের কাছে যেন এখনও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরুই হয়নি। বরং যেন ওয়ার্ম আপ মোডে রয়েছে গোটা ক্রিকেট বিশ্ব। তাঁদের কাছে বিশ্বকাপের বোধন যেন রবিবার। যেদিন দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মুখোমুখি দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশ – ভারত ও পাকিস্তান।
কেমন থাকে এই ম্যাচের আবহ? শুনলে চমকে উঠবেন। মাঠের প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁঝ এমনই উচ্চতায় পৌঁছয় যে, ম্যাচের শেষে সৌজন্যমূলক করমর্দনের সময়েও চলে স্লেজিং! ভারত-পাক ম্যাচে যে ঘটনা নিজের চোখে দেখেছেন অশোক দিন্দা। বাংলার পেসারও সেদিন বুঝতে পেরেছিলেন যে, ক্রিকেট মাঠেও দুই চিরপ্রতিপক্ষের সমীকরণটা ঠিক কীরকম।
ঘটনাটি ১১ বছর আগের। ২০১০ সালের ১৯ জুন। শ্রীলঙ্কার ডাম্বুলায় এশিয়া কাপের ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল ভারত-পাক। সেই ম্যাচে না খেললেও ভারতীয় দলে ছিলেন দিন্দা। রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে পাকিস্তানকে এক বল বাকি থাকতে তিন উইকেটে হারিয়েছিল ভারত। দিন্দা বলছেন, ‘২০১০ সালের এশিয়া কাপ। শ্রীলঙ্কার ডাম্বুলায় খেলা হচ্ছিল। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের পরের ঘটনা। ম্যাচের শেষে যে দলই হারুক বা জিতুক, ক্রিকেটার থেকে শুরু করে সাপোর্ট স্টাফ একে অপরের সঙ্গে করমর্দন করে। সেটাই দস্তুর। সেদিন ম্যাচের শেষে হ্যান্ডশেক পর্বের সময়েও তুমুল স্লেজিং চলছিল। এ জিনিস মনে হয় একমাত্র ভারত-পাকিস্তানের মধ্যেই সম্ভব।’ যোগ করলেন, ‘ভারতের সেই দলে তারকার ছড়াছড়ি। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, হরভজন সিংহ, যুবরাজ সিংহ, বিরাট কোহলি, গৌতম গম্ভীর, কে নেই? আমি তখন নতুন ঢুকছি দলে। সামনে থেকে দেখেছি, ম্যাচে একটা ঝামেলা হলে গোটা দল এককাট্টা হয়ে যেত। ভারত-পাক মহারণের মজাই সেটা। একজনের সঙ্গে কারও কথা কাটাকাটি হয়ে গেলে তো গোটা দল তার পাশে দাঁড়িয়ে যায়।’
তবে ভারত-পাক শিবিরের মধ্যে সব সময় যে বৈরিতা থাকত, তা নয়। দিন্দা বলছেন, ‘মাঠে যতই প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকুক না কেন, মাঠের বাইরে অনেকের সঙ্গেই সুসম্পর্ক। একই হোটেলে থাকি, ব্রেকফাস্ট বা ডিনারে দেখা হতো। একই বিমানে যাতায়াত করেছি। সলমন বাট, উমর গুল, শোয়েব আখতার, মহম্মদ হাফিজদের সঙ্গে আমার ভাল বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল। কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে একসঙ্গে আইপিএল খেলেছি। তবে মাঠে কেউ কাউকে চিনতাম না। কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জায়গা ছাড়তাম না।’
দিন্দা নিজের পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তিনটি ওয়ান ডে ও দুটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলছেন, ‘ভারত-পাক দ্বৈরথ হাইভোল্টেজ ম্যাচ। দুই দলেরই ফোকাস থাকে কীভাবে ম্যাচ জিতবে। সবাই মনে মনে ভাবে যে, কোনওভাবেই এই ম্যাচ হারা চলবে না। কোটি কোটি মানুষের আবেগ জড়িয়ে থাকে এই ম্যাচের সঙ্গে। এরকমও অনেকে আছেন, যাঁরা ক্রিকেট দেখেন না বা খুব একটা আগ্রহ নেই। কিন্তু সেই সমস্ত লোকেরাও এই ম্যাচের ফল কী হল, খোঁজ নেন। এটাই এই ম্যাচের মাহাত্ম্য।’
আর ক্রিকেটারেরা? তাঁদের মধ্যে কী ধরনের আলোচনা হয়? ‘ক্রিকেটারেরাও এই ম্যাচটা নিয়ে বাড়তি উত্তেজিত থাকে। চাপও থাকে। কেউ কোনও ভুল করতে চায় না,’ বলছিলেন দিন্দা। রবিবারের ম্যাচে তিনি এগিয়ে রাখছেন ভারতকে। জাতীয় দলের প্রাক্তন পেসার বলছেন, ‘বিশ্বকাপে আজ পর্যন্ত পাকিস্তান ভারতকে হারাতে পারেনি। ভারতীয় দল এই মুহূর্তে দারুণ জায়গায় রয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা সদ্য আইপিএল খেলেছে সকলে এবং সেটাও সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতেই। ওখানকার পিচ, পরিবেশের সঙ্গে ভালমতো সড়গড়। মাঠগুলো নিয়ে স্পষ্ট ধারণা রয়েছে। জানে কোন মাঠে বাউন্ডারি কীরকম বা কতটা জোরে মারতে হবে। কোন পিচে কীভাবে বল করতে হবে। ভারতের সকলেই ভাল ছন্দে রয়েছে। ভারত এগিয়ে ৮০-২০।’
মহেন্দ্র সিংহ ধোনির মেন্টর হিসাবে অন্তর্ভুক্তিকে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মাস্টারস্ট্রোক বলে মনে করেন বাংলার প্রাক্তন পেসার। দিন্দা বলছেন, ‘আইসিসি টুর্নামেন্টে ধোনি বিরাট ব্যাপার। ওকে মেন্টর করা বোর্ড প্রেসিডেন্ট হিসাবে দাদির দারুণ পদক্ষেপ।’ প্রাক্তন ক্রিকেটার দিন্দা এখন বিধায়কও। তবে রাজনৈতিক কর্মব্যস্ততা থাকলেও রবিবার সন্ধ্যায় টিভির সামনে বসে পড়বেন। ভারত-পাক মহারণের উষ্ণতা উপভোগ করতে।