তপশিলি ফেডারেশনের ডাকে উচ্চ প্রাথমিকে নিয়োগে সহ তিন দফা দাবিতে রাজভবন অভিযান

নুর মোহাম্মদ, কলকাতা: ২৫শে ফেব্রুয়ারি তপশিলি ফেডারেশনের ডাকে তিন দফা দাবিতে রাজভবন অভিযান কর্মসূচি নেয়া হয়। দাবি ছিল উচ্চ প্রাথমিক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি মেনে সংরক্ষিত ক্যাটাগরিতে শূন্য পদে আনট্রেন্ড নিয়োগ করতে হবে, CAA ২০১৯ সংশোধন করে নিঃশর্তে নাগরিকত্ব, ভূমিহীন পরিবারকে জমির পাট্টা ও দলিল প্রদান। এদিন পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত উচ্চ প্রাথমিক সংরক্ষিত আনট্রেন্ড চাকরিপ্রার্থী সহ তপশিলি ফেডারেশন এর কর্মীগণ নিজেদের দাবি নিয়ে রাজভবনে ডেপুটেশনের উদ্দেশ্যে রামলীলা ময়দান থেকে শান্তিপূর্ণ ভাবে পদযাত্রার করে রাজভবনে রাজ্যপালের নিকট গন ডেপুটেশন প্রদান করে।

     

    এদিনের কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন তপশিলি ফেডারেশন এর সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় মল্লিক, কেয়া মুখার্জি, অমর রায়, রঞ্জিত বৈদ্য, তপন পাহাড়ী, গার্গী মোদি, নূর মোহাম্মদ খান, দেবাশীষ মোদি, ওয়াসিম আক্রাম, শহিদুল ইসলাম সহ উচ্চ প্রাথমিকের শতাধিক চাকরি প্রার্থী।

     

    মূলত সংরক্ষিত আনট্রেন্ডরা যে সব দাবিদাওয়া নিয়ে রাজ্যপালের নিকট ডেপুটেশন দিতে গেছিলেন সেইগুলি হল ১)২০১৬ সালের উচ্চ প্রাথমিকে নিয়োগ বিধি অনুযায়ী ২০১২ ও ২০১৫ টেট পাস বিশেষত সংরক্ষিত ক্যাটাগরিতে (st,sc,obc,ph)ট্রেন্ডহীন শূন্য পদে আনট্রেন্ড প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে হবে।

     

    ২)ট্রেন্ডহীন শূন্যপদে ট্রেন্ডপ্রার্থীদের সাথে সাথে সংরক্ষিত ক্যাটাগরীতে আনট্রেন্ড প্রার্থীদেরও একই সাথে ইন্টারভিউ ও কাউন্সেলিং করিয়ে নিয়োগ করতে হবে।

    ৩)ট্রেন্ডহীন শূন্যপদে আনট্রেন্ড প্রার্থীদের ১:১.৪রেশিওর মধ্যে এনে ট্রেন্ডপ্রার্থীদের সঙ্গেই নিয়োগ দিতে হবে।

     

    এ দিন রামলীলা ময়দান থেকে শান্তিপূর্ণ ভাবে পদযাত্রার পর পুলিশ প্রশাসনিক সহযোগিতাই প্রশাসনের পক্ষ হইতে যত্ন সহকারে আপারের আনট্রেন্ডদের দুই জন প্রতিনিধি গার্গী মুদি ও নুর মহম্মদ খান এবং তপশিলি ফেডারেশন এর কেয়া মুখার্জি এই তিনজনকে রাজ্যপালের কাছে নিয়ে গেছিলেন দাবিপত্র প্রদান করার জন্য। এবং রাজভবনে ডেপুটেশন কর্মসূচী খুব সুন্দর ভাবে সম্পূর্ণ হয় রিসিপ্ট কপি গ্রহণের মাধ্যমে।

     

    উল্লেখ্য কমিশন এর আগে আপারে সংরক্ষিত আনট্রেন্ডদের গেজেট নোটিফিকেশন অমান্য করে অনৈতিক ভাবে আনট্রেন্ডদের ট্রেন্ডহীন শূন্যপদে রেশিও মেনে ভেরিফিকেশন করালেও ইন্টারভিউ থেকে বঞ্চিত করে। কিন্তু পরবর্তী কালে বিচারপতি রায় দেন ২৩.০৯.২০১৬ নোটিফিকেশন অনুযায়ী নিয়োগ করতে। সেই নোটিফিকেশনে স্পষ্ট বলা আছে ট্রেন্ড ও আনট্রেন্ড উভয়ই আপার পরীক্ষার জন্য যোগ্য এবং ট্রেন্ডহীন শূন্যপদে আনট্রেন্ড নিয়োগ করতে হবে।

     

    কমিশন যদি পুনরায় সংরক্ষিত আনট্রেন্ডদের ইন্টারভিউ থেকে অন্যায় ভাবে বঞ্চিত করে তাহলে আনট্রেন্ডরা নিজেদের নায্য দাবি আদায়ের জন্য পথের আন্দোলন ও আইনি আন্দোলনকে অবলম্বন করতে বাধ্য হবে। খুব শীঘ্রই নবান্ন অভিযানের ডাক দেওয়া হবে, বলে জানিয়েছে উচ্চ প্রাথমিক টেট উত্তীর্ণ সংরক্ষিত ক্যাটাগরির আনট্রেন্ড চাকরিপ্রার্থীরা ।

     

    শুরুটা হয়েছিল সেই ২০১৫ সাল। ১৬ আগস্ট গোটা রাজ্যবাপী টেট পরীক্ষা হয়েছিল শিক্ষক নিয়োগের জন্য। পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির বিদ্যালয়ে শিক্ষক হওয়ার আশায় কয়েক লক্ষ বেকার চাকরিপ্রার্থী এই পরীক্ষায় বসে ছিলেন। সেখানে প্রশিক্ষিত চাকরি প্রার্থী হিসেবে ১ লক্ষ ২০ হাজার ও অপ্রশিক্ষিত চাকরি প্রার্থী হিসেবে ২ লক্ষ ২৮ হাজার প্রার্থী, সব মিলিয়ে অন্তত ২ লক্ষ ২৮ হাজার পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হন। সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত কোনও ইতিবাচক পদক্ষেপ না দেখে রাস্তায় নেমেছিলেন চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ।

     

    অভিযোগ ছিল ইন্টারভিউ নিয়েও সংরক্ষিত ক্যাটাগরিতে পর্যাপ্ত আসন থাকা সত্ত্বেও অপ্রশিক্ষণপ্রাপ্ত , পরে অপ্রশিক্ষণপ্রাপ্ত টেট পাস চাকরি প্রার্থীদের নথি যাচাই হলেও ইন্টারভিউ ডাকা হয়নি , কিন্তু গেজেটে বলা ছিল সংরক্ষিত ক্যাটাগরিতে আসন ফাঁকা থাকলে অপ্রশিক্ষণ সুযোগ দিতে হবে । এছাড়াও অনেক ক্ষেত্রে গেজেট বিধি মানা হয়নি । ওয়েস্টেজে নাম্বার বাড়িয়ে দেওয়া , ভালো ইন্টারভিউ হওয়ার পরেও প্রভিশোনাল মেরিট লিস্টে নাম নেই অনেক চাকরিপ্রার্থীর । এই সব অভিযোগ নিয়ে পাহাড় সমান অভিযোগ পত্র জমা পড়েছে স্কুল সার্ভিস কমিশনের কেন্দ্রীয় অফিস আচার্য সদন কলকাতায় । তাছাড়াও অভিযোগ জমা পড়েছে কলকাতা হাইকোর্টে ।

     

    গত বছর অর্থাৎ ২০২০ সালে ১১ ই ডিসেম্বর হাইকোর্টের একটি রায়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে উচ্চ প্রাথমিকে পুরো প্রক্রিয়া বাতিল করে দেয়া হয়। এবছর জানুয়ারি মাসে পুনরায় অনলাইন ভেরিফিকেশন হয়েছে সকল টেট পাস উচ্চ প্রাথমিক চাকরিপ্রার্থীদের। আবার নিঃশব্দ রাজ্য সরকার তথা স্কুল সার্ভিস কমিশন ।