ব্যবসায়ী সাফিকুলের উদ্যোগে বিনা পয়সায় হোটেল খাওয়াই রাস্তায় যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকদের।।

রেজাউল করিম, বৈষ্ণবনগর : হাজারে হাজারে পরিযায়ী শ্রমিক মালদার ওপর দিয়ে চলেছেন। কেউ বাসে কেউবা লরিতে। আবার কেউবা হেঁটেই। লকডাউনের জেরে কোথাও কোনও হোটেল খোলা নেই। খাবার দাবারের খুব সমস্যা তাঁদের। বিষয়টি ব্যথিত করে সংস্লিষ্ট এলাকার সাধারণ পরিবারের সদস্য তথা এক ব্যবসায়ী সাফিকুল আলমকে। নিজের উদ্যোগে বিনে পয়সার হোটেল খুলে বসেন তিনি। ফরাক্কা হয়ে মালদার দিকে দলে দলে পরিযায়ী শ্রমিকেরা রোজ আসছেন। তাঁরা শুধু মালদারই নয়, উত্তরবঙ্গের অন্যান্য জেলারও রয়েছেন। সড়ক পথে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক হয়ে বাসে, লরিতে ফিরছেন তাঁরা। দূর দূরান্ত থেকে ফিরছেন তাঁরা। গত ৪ দিন ধরে চলছে এই হোটেল। রোজ প্রায় ২০০০ পরিযায়ী শ্রমিককে খাওয়ানো হচ্ছে। দেশের কর্মযজ্ঞে শ্রমিকদের অবদানের কথা এই লকডাউনের সময় স্মরণ করেন। যতদিন পরিযায়ী শ্রমিকেরা এভাবে ফিরবেন, ততদিন বিনে পয়াসার হোটেল চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন ওই ব্যবসায়ী সাফিকুল আলম। সাফিকুলের বাড়ি কালিয়াচক-‌৩ নম্বর ব্লকের লক্ষ্মীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের আঠারো মাইলে। শুধুমাত্র এই কটা দিন তিনি বিনে পয়াসার হোটেল বসিয়েছেন ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে টাউনশিপ মোড়ে। বিভিন্ন সহৃদয় ৪০-‌৫০জন যুবক তাঁকে হোটেল চালানোর ব্যাপারে কয়েক দফায় তাঁরা সহায়তা করছেন। বাস, লরিতে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকদের ডেকে নিয়ে এসে খাওয়ানো হচ্ছে। তাঁরা কোন জেলার, পরিচয় না জেনেই নিখরচায় খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। রোজ মেনুতে থাকছে ভাত, ডিম, ডাল ও সবজি। জানা গেছে, শুধু রাস্তায় আসা পরিযায়ী শ্রমিকই নয়, কোয়ারেন্টিন সেন্টারগুলিতেও রান্না করা খাবার বিলি করে আসছেন তাঁরা। সাফিকুল আলম বলেন,‘‌আমি বাবা মৌলবী মহিবার রহমানের কাছে শিখেছি, ক্ষুধার্ত ও অন্নহীনকে অন্ন দিতে আর বস্ত্রহীনকে বস্ত্র দিতে। এখানে কোনও হোটেল খোলা নেই। পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশা দেখে আমি তাঁদের বিনে পয়সায় সারাক্ষণ হোটেলের ব্যবস্থা করেছি। মাস্ক পরে ও সামাজিক দূরত্ব মেনে খাবার পরিবেশন করা হয়। এই হোটেল এখন চলবে।এই কাজে স্থানীয় মানুষ, পুলিশ ও প্রশাসন ও সহযোগিতা করেন। আমি প্রতিদিন শ্রমিকদের খাবার তুলে দিতে পেরে খুব খুশি হচ্ছি। ’‌ তাঁর পাশে দাঁড়ানো যুবকদের মধ্যে সেলিম হোসেন, ফাজলে হকরা বলেন,‘ এই কাজে প্রায় 50 জন যুবক কয়েক দফায় সহযোগিতা করছি। এই কর্মযজ্ঞে সাফিকুল আলমের পাশে দাঁড়াতে পেরে আমরা নিজেদের গর্বিত মনে করছি।’‌ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(‌গ্রামীণ)‌ দীপক সরকার বলেন শ্রমিকরা শুকনো খাবার খেয়ে ও কখনো অভুক্ত অবস্থায় ফিরছে। শ্রমিকরা কার্যত দুর্বিষহ কষ্টের মধ্যে বাড়ি ফিরছে তা স্বীকার করেছেন তিনি। পুলিশ প্রশাসন পথচারী ও শ্রমিকদের কষ্টের সময় যতটুকু সম্ভব তাদের পাশে রয়েছে । এছাড়া ও সাফিকুল আলমের মত আরো কেউ এগিয়ে আসলে খুব ভালো , তাঁর উদ্যোগ খুবই প্রশংসনীয়। পুলিশ প্রশাসনও তাঁকে সহযোগিতা করছে। মাস্ক পরে ও সোসাল দূরত্ব মেনে খাদ্যদ্রব্য বিলি করছেন তিনি ।