বর্ধমান গাছ গ্রুপের তিনজন সদস্য শিক্ষক রাজ্যের দেওয়া শিক্ষা রত্ন পুরস্কার পেলেন।

লুতুব আলি, বর্ধমান, ৫ সেপ্টেম্বর : বর্ধমান গাছ গ্রুপের তিনজন সদস্য শিক্ষক রাজ্যের দেওয়া শিক্ষা রত্ন পুরস্কার পেলেন। ৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবসে পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমানের চারজন স্বনামধন্য শিক্ষক শিক্ষারত্নে ভূষিত হলেন। তাঁদের মধ্যে তিনজনই বর্ধমানের অগ্রজ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা গাছ গ্রুপের সদস্য। গাছ গ্রুপের পুরোধা জাতীয় শিক্ষক তথা গাছ মাস্টার নামে খ্যাত অরূপ চৌধুরীদের সঙ্গে সামাজিক বনসৃজন করে অনন্য ভূমিকা পালন করে চলেছেন। এদিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শিক্ষক দিবসের মূল অনুষ্ঠানটি কলকাতায় ভার্চুয়াল এর মাধ্যমে উদ্বোধন করেন ও পুরস্কার প্রদান করেন। রাজ্যে মোট এবার ৬১ জন শিক্ষক শিক্ষারত্ন পুরস্কার পেলেন। উল্লেখ্য বর্ধমান শহরের শ্রীরামকৃষ্ণ সারদা বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক পলাশ চৌধুরী ও খণ্ডঘোষের নিশ্চিন্তপুর হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মোঃ উজির আলীর হাতে শিক্ষা রত্ন পুরস্কার তুলে দেন পূর্ব বর্ধমানের জেলা শাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলা। এই অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা শাসক এডুকেশন সানা আখতার, পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শক স্বপন মন্ডল সহ পূর্ব বর্ধমান জেলা সর্বশিক্ষা মিশনের আধিকারিক বৃন্দ। এদিন অন্যদিকে পশ্চিম বর্ধমানের জামুরিয়া ১নং চক্রের অন্তর্গত তিলকা মাঝি আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয় এর প্রধান শিক্ষক রাধেশ্যাম ঘোষ এর হাতে শিক্ষারত্ন পুরস্কার তুলে দেন পশ্চিম বর্ধমানের জেলাশাসক অরুন প্রসাদ। এঁরা তিনজনে ই বর্ধমান গাছ গ্রুপের সদস্য। পশ্চিম বর্ধমানের রানীগঞ্জ হাই স্কুলের সহশিক্ষক ড. দেবাশীষ মন্ডল ও শিক্ষারত্ন পুরস্কার পান। ২০২২ এর শিক্ষারত্ন পুরস্কার প্রাপক পলাশ চৌধুরী সবুজায়ন, পঠন পাঠন ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের সামাজিক কাজের সঙ্গে তিনি ওতপ্রুত ভাবে যুক্ত হয়ে আছেন। তাঁর বিদ্যালয় নির্মল বিদ্যালয় পুরস্কার, শিশু মিত্র পুরস্কার ছাড় ও অনেক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে-কলমে কম্পিউটারের প্রশিক্ষক শিক্ষা প্রশিক্ষণ, ওপেন সোর্স সফটওয়্যার কে বাংলা ভাষায় রূপান্তর, দুয়ারে ভর্তি করণ কর্মসূচি গ্রহণ করা ছাড়াও জাতীয় স্তরে একাধিক সেমিনারে অংশগ্রহণ ও প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। মোহাম্মদ উজির আলী খণ্ডঘোষের মুসলিম অধ্যুষিত নিশ্চিন্তপুর হাই মাদ্রাসাটিকে একটি আদর্শ বিদ্যালয় রূপান্তরিত করেছেন। তাঁর বিদ্যালয় ও শিক্ষা দপ্তরের দেয়া প্রায় সমস্ত পুরস্কারই ছিনিয়ে নিয়েছেন। অন্যদিকে পশ্চিম বর্ধমানের জামুরিয়ার তিলকা মাঝি আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় প্রায় বিলীন হয়ে যেতে বসেছিল। ১৯৯৯ সালে ১৪ মে এই বিদ্যালয়টি সরকারি স্বীকৃতি পাওয়ার দিনেই রাধেশ্যাম ঘোষ একক শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেছিলেন। বসার তেমন কোন ঘর ছিল না বাঁশ গাছের নিচে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে তিনি ক্লাস করাতেন। বর্তমানে এই বিদ্যালয়টি একটি আদর্শ বিদ্যালয় হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। এই বিদ্যালয়টিও শিক্ষা দপ্তরের সমস্ত পুরস্কার ছিনিয়ে নিয়ে এলাকায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। অভিভক্ত বর্ধমান জেলায় ২০১৭ সালে মিড ডে মিলে প্রথম স্থান পায়। ২০১৯ সালে যামিনী রায় এপ্রিসিয়েসন পুরস্কার লাভ করে। ২০২২ এ স্বচ্ছ বিদ্যালয় পুরস্কার পায়। এক সাক্ষাৎকারে শিক্ষারত্ন পুরস্কার প্রাপক পলাশ চৌধুরী, মোঃ উজির আলী, রাধেশ্যাম ঘোষ জানান, এই পুরস্কার পেয়ে তাঁদের আরো দায়িত্ব বেড়ে গেল। এ ব্যাপারে গাছ মাস্টার অরূপ চৌধুরী বলেন, গাছ গ্রুপের পক্ষ থেকে প্রায় প্রতিবছরই রাজ্য জাতীয় স্তরে আমাদের সদস্য শিক্ষক কোন না কোন পুরস্কার পেয়ে থাকেন। ২০২২ সে গাছ গুরুপের যে তিনজন সদস্য শিক্ষক শিক্ষারত্ন পুরস্কার পেলেন তাতে গাছ গ্রুপ ও আমরা গর্বিত।