বর্ধমান শহরে প্রাচীন মহল্লার মধ্যে “নীলপুর” একটি প্রাচীন মহল্লা

শেখ মনোয়ার হোসেন বর্ধমান : ৫ডিসেম্বর, রবিবার বর্ধমান শহরে প্রাচীন মহল্লা গুলির মধ্যে “নীলপুর ” একটি প্রাচীন মহল্লা, এই মহল্লায় মধ্যযুগে অর্থাৎ শরিফা বাদের মুসলিম জনসংখ্যা যথেষ্ট পরিমাণে ছিল তার প্রমাণ ওই মহল্লায় আনুমানিক নটি মসজিদের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। যার মধ্যে বর্তমানে বড়নীলপুর বাজারে একটি মসজিদ এখনো বর্তমান। বাকি তিনটি মসজিদ ছোটনীলপুর মহল্লায় এখনো অবস্থান করছে।
“নীলপুর” নাম থেকে বোঝা যাচ্ছে ব্রিটিশ ভারতে বর্ধমানের এই অঞ্চলে নীল চাষ যেমন হতো, তেমনি নীল কর সাহেবদের কুঠি ও এই এলাকায় ছিল। এবং” নীল” বিক্রয় কেন্দ্র গড়ে ওঠায়, এবং নীল চাষীদের প্রয়োজনীয় দ্রব্য ক্রয় বিক্রয়ের জন্য বাজারের নাম নীলপুর বাজার। বলেই সহজে অনুমান করা যায়।

    ” ছোটনীলপুর “মধ্যপাড়ায় বেচু শেখ – পঞ্চু শেখ মসজিদ “অবস্থান করছে। এই মসজিদ স্থাপিত হয়েছিল ১২৩৭ বঙ্গাব্দে অর্থাৎ ইংরেজি ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দএ, এই মসজিদের পুরাতন তোরণে সিমেন্টের খোদাই করা আছে, যা বর্তমানে অস্পষ্ট হয়ে গেছে।
    ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে এই মসজিদ স্থাপিত হয়েছিল। আজ থেকে 192 বছর আগে এলাকার দুই গন্যমান্য ব্যক্তিত্বের অর্থাৎ “বেচু শেখ ও পঞ্চু শেখ “মহাশয়ের সম্পত্তির ওপর।১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে ২৬ জানুয়ারি বর্ধমান জেলার বন্তির গ্রামের জমিদার “আব্দুল হাকিম সাহেব “বেচু সেখ – পঞ্চু শেখ মসজিদ “নির্বাহের জন্য ৩ বিঘা ১০কাঠা সম্পত্তি দান করেন ,

    ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে “আবদুল হাকিম” সাহেব আন রেজিস্টার দলিল এ ওসিয়ত অর্থাৎ শর্ত করে নীলপুর এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব জোহাদ রহিম ,রহিম বক্স ,আব্দুল মান্নান,এবং জনৈক ব্যক্তি কে দায়িত্ব অর্পণ করেন।
    ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ গভমেন্টের আইন অনুযায়ী ওয়াকআফ্ বোর্ডের অন্তর্গত সম্পত্তিগুলিকে একই ছাতার তলায় নিয়ে আসেন অর্থাৎ ওয়াকআপ আইন তৈরি হয়।
    ওসিয়ত অনুযায়ী মাননীয় “জোহাদ রহিম ” ব্যতীত বাকি তিনজন মৃত্যুবরণ করিলে, জোহাদ রহিম সর্ত অনুযায়ী একক প্রচেষ্টায় উক্ত মসজিদ পরিচালনা করিতেন কিন্তু ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে, তারও মৃত্যু হয় ।

    ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দে “জোয়াদ রহিমের” পুত্র “কোরবান আলী”” রমজান আলী “লুৎফর রহমান” নতুন করে মতাওয়ালি মনোনীত হন। তাদের মৃত্যুর পর তাদের বংশধররা ওয়ারিশান সূত্রে মসজিদ দেখাশোনা করতেন।

    ২০২০-২১ খ্রিস্টাব্দে মসজিদের জরাজীর্ণ অবস্থা হয়ে গেলে এলাকাবাসী সাহায্য তুলে মসজিদটি নতুন করে সংস্কার করেন।

    দীর্ঘদিন ওয়াকফ বোর্ডে কোন মতো ওয়ালি না থাকায় ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে জোহাদ রহিম বংশের বংশধরদের নিয়ে পরিচালন কমিটি মাতওয়ালী গঠন হয়। যার মেয়াদ ২০২১ এ শেষ হয়েছে । নতুন কমিটি ওয়াকফ বোর্ড যত শীঘ্র সম্ভব ঘোষণা করবেন বলে ওয়াকফ চেয়ারম্যান জানালেন।
    ওয়াকফ বোর্ডের ই সি নাম্বার- ১২৩৪৬ এবং ১৩০৫৬, বহু সম্পত্তি বেহাত হয়ে গেছে বলে ওয়াকাপ সূত্রে জানা যায়। এই মসজিদের একটি নিজস্ব ছাত্রাবাস আছে, যেখান থেকে কিছু আর্থিক সহায়তা পাওয়া যায়। এবং একটি দোকানও ভাড়া দেওয়া আছে তার পয়সাও মসজিদে জমা হয়। ওয়াকফ স্টেট এর নাম “আব্দুল হাকিম ওয়াকফ স্টেট “