ভারতের আধুনিকতা আর দেশের সমাজ-সংস্কৃতি নিয়ে আন্তর্জাতিক আলোচনাচক্র কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে

ফারুক আহমেদ : দেশের স্বাধীনতার পরে কেটে গেছে পঁচাত্তরটি ঘটনাবহুল বছর। দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব। এরকম এক সময়ে ঐতিহাসিকদের দায় থেকে যায়, এই ফেলে আসা সময়কে বিচার বিশ্লেষণ করার। ভারত আধুনিকতার পথে কতটা পা হাঁটতে পারল? তার বিচার তো শুধু বছরের হিসেবে হবে না। ফিরে দেখতে হবে দেশের সমাজ সংস্কৃতিকে। ঠিক সেই কাজটা করার জন্য কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ আয়োজন করেছে দু’দিনের এক আন্তর্জাতিক আলোচনাচক্রের। এই আলোচনায় যোগ দিচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের সীমা ছাড়িয়ে অন্য রাজ্যের এবং বাংলাদেশের অধ্যাপক গবেষকরা। এই আলোচনাচক্রের উদ্বোধন হল ১৬ মার্চ, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যাসাগর সভাগৃহে। উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মানস কুমার সান্যাল এবং সহ-উপাচার্য অধ্যাপক গৌতম পাল। উপাচার্য ও সহ-উপাচার্য উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মূল্যবান বক্তব্য রাখেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন ইতিহাসের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক অলক কুমার ঘোষ। আলোচনাচক্রের প্রথম দিনে আমন্ত্রিত বক্তাদের মধ্যে ছিলেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিতেন্দ্রকুমার প্যাটেল, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মেঘালয়ের শিলং-এর নর্থ ইস্ট হিল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক শাহনুর রহমান। আলোচনাচক্রের বিষয় উপস্থাপন করতে গিয়ে আলচনাচক্রের আহ্বায়ক অধ্যাপক সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় বলেন, আধুনিকতার দিকে ভারতের যাত্রাকে বিভিন্ন দিক থেকে বিচার করা ঐতিহাসিকদের কর্তব্য। দীর্ঘ দুই শতাব্দীর ঔপনিবেশিক আমলের পর ভারত তার মুক্তি অর্জন করেছে। স্বাধীনতা অর্জনের এই লড়াইতে ভারতীয়দের সঙ্গে পরিচয় ঘটেছে পশ্চিমী ধারণার আধুনিকতার। আর তখনই দেশের মানুষ উপলব্ধি করেছেন, যে এদেশের ব্রিটিশ শাসক আদৌ মানে নি পশ্চিমি রাজনৈতিক দর্শনকে; কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের আদর্শকে শাসক আদৌ অনুসরণ করে নি। দেশের মুক্তি সংগ্রাম চেষ্টা করেছিল জাতি-প্রতিষ্ঠা করতে, যা ছিল আধুনিকতার দিকে যাত্রার এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। স্বাধীনতার পরে জাতি-রাষ্ট্র কতটা পারল তার নাগরিকদের কাছে স্বাধীনতার সুফল পৌছে দিতে? এইসব বিষয়ের ওপর আলোকপাত করা হচ্ছে এই আলোচনাচক্রে। দ্বিতীয় দিনে আমন্ত্রিত বক্তাদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক মহম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যযুগ ও আধুনিক ভারতের আশুতোষ অধ্যাপক অমিত দে। এরাজ্যের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং গবেষকরা আলোচনাচক্রে তাঁদের গবেষণা উপস্থাপন করছেন। বাংলাদেশ থেকেও এসেছেন একাধিক গবেষক যাঁদের মধ্যে রয়েছেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্বের অধ্যাপক মহম্মদ আজিম উদ্দিন।ভারতের বহুমাত্রিক সমাজ ও সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক এই আলোচনাচক্রে উঠে আসবে বলে বক্তারা সকলেই আশা প্রকাশ করেন। যেভাবে ক্ষমতায় আসীন লোকেরা এক ভাষা-এক ধর্ম- এক সংস্কৃতির ভারতের ধারণাকে তুলে ধরতে চাইছে তার বিপরীতে এই বহুমাত্রিক ভারতের আদর্শকে তুলে ধরা আজ সকলের কর্তব্য। সে-কাজে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ এক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করল।আলোচনাচক্রে যোগ দিয়েছেন কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপকেরাও। কর্মজীবন থেকে আনুষ্ঠানিক অবসর নিলেও জ্ঞানচর্চার জগতে তাঁরা সক্রিয়। বিভাগের সঙ্গে তাঁদের আত্মিক বন্ধনের কথা তাঁরা তাঁদের ভাষণে উল্লেখ করেন। এঁদের মধ্যে ছিলেন অধ্যাপক রাখালচন্দ্র নাথ, অধ্যাপক নিখিলেশ গুহ, অধ্যাপক স্মৃতিকুমার সরকার, অধ্যাপক অমল দাস এবং অধ্যাপক নির্বাণ বসু। আলচনাচক্রের প্রথম দিনের সমগ্র অনুষ্ঠানটি সুচারুভাবে পরিচালনা করেন ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপিকা সুতপা সেনগুপ্ত।