বেআইনী বালিলুট বন্ধ হতেই মঙ্গলকোটের রাজনৈতিক অস্থিরতা ‘হিমঘরে’

মোল্লা জসিমউদ্দিন : পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোট থানা এলাকায় বেশিরভাগ রাজনৈতিক খুনের অন্তরালে থাকে অজয় নদের বেআইনী বালি লুটের কারবার। আজাদ মুন্সি থেকে অসীম দাস একের পর এক খুনে উঠে এসেছে বালি লুটেরাদের গভীর ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল। সর্বশেষ লাখুড়িয়া অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি অসীম দাস খুনের মামলায় রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডি তদন্ত চালাচ্ছে। তদন্তে ঘুরেফিরে সেই বালিলুটের ইতিহাস সম্মুখে এসেছে। গত ২০১৫ সালে খন্ডঘোষে তিনজন তৃণমূল কর্মী খুন পরবর্তীতে বর্ধমানে শততম প্রশাসনিক বৈঠক পরবর্তীতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিআইডি কে পূর্ব বর্ধমান জেলায় দামোদর – অজয় নদের বালিলুট নিয়ে অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছিলেন। রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডি কে সেসময় পূর্ব বর্ধমান জেলায় সক্রিয়ভাবে দেখা যায়। এরপর বিষয়টি একপর্যায়ে ধামাচাপা পড়ে যায়।ঠিক এমতাবস্থায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত বৃহস্পতিবার নবান্নে কয়লা – বালি লুট নিয়ে সরব হন।সেইসাথে রাজ্য পুলিশের একাংশের অসহযোগিতা ও দুর্নীতি নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন। মুখ্যমন্ত্রীর এহেন অবস্থান রাজ্য পুলিশের পদস্থ কর্তাদের মধ্যে তৎপরতা দেখা যায়।ইতিমধ্যেই পশ্চিম বর্ধমান জেলার বারাবনির থানার এক ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক কে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোটে বিগত সাত – আট মাস ধরে স্থানীয় থানার পুলিশ যেভাবে অজয় নদের বালিলুট রুখতে কড়া দাওয়াই দিয়েছে। তাতে বালিলুটেরাদের দু চোখের ‘বিষ’ হয়ে উঠেছেন মঙ্গলকোট থানার নবাগত আইসি মধুসূদন ঘোষ মহাশয়। গত এপ্রিল মাস থেকে চলতি নভেম্বর মাস পর্যন্ত দশের কাছাকাছি মামলা রুজু হয়েছে বালি লুট নিয়ে।১৩ টির বেশি গাড়ি আটক করে ভূমি দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। যেভাবে গত লোকসভা নির্বাচন পরবর্তীতে মঙ্গলকোটের নুতনহাট এলাকায় ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের অফিস দখল অভিযান ঘিরে রাজনৈতিক উত্তেজনার পারদ চড়েছিল,তাতে হানাহানি একপ্রকার নিশ্চিত ছিল । এখনো অবধি ওই ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের অফিসে পুলিশ পিকেট বসতে দেখা যায়।।শাসক দলের বিবাদমান দুই গোষ্ঠীর শতাধিক ব্যক্তি যেভাবে মোটরবাইক নিয়ে একে অপরকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছিল।তাতে দুঁদে পুলিশ অফিসার মধুসূদন ঘোষ সর্বপ্রথম অজয় নদের বেআইনী বালিঘাট বন্ধে কড়া দাওয়াই দেন।কেননা শাসক দলের দু পক্ষের মোটরবাইক বাহিনীর অন্যতম রসদ ছিল বেআইনী বালিলুটের অর্থ। বর্তমানে মোটরবাইক বাহিনীর সদস্যরা ভিনরাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে পাড়ি দিয়েছে। মঙ্গলকোটের নুতনহাট বাইপাস এলাকায় বেশ কয়েকটি হোটেল বন্ধ হয়ে গেছে বেআইনী বালিলুটে যানবাহন চালকদের যাতায়াত কমে যাওয়ায়। যে মঙ্গলকোটে একসময় পুলিশ মহলে ‘শাস্তিমূলক’ বদলী হিসাবে বিবেচিত হত।সেই মঙ্গলকোট সময়ের বিবর্তনে ‘শাঁসালো’ থানা হিসাবে গণ্য হয়।সেইজায়গায় দাঁড়িয়ে টানা সাত-আট মাস অজয় নদের বালিলুট নিয়ে প্রতিটি সড়কপথে কড়া নজরদারি করতে দেখা যায় মঙ্গলকোট থানার পুলিশ কে।ধরপাকড় অভিযানে শাসক দলের স্থানীয় হেভিওয়েট এক পদাধিকারীর নিকটাত্মীয় কেও রেহাই দেয়নি পুলিশ। যেখানে মঙ্গলকোটের বিভিন্ন প্রান্তে ২০ থেকে ২৫ টি বেআইনী বালিঘাট চলতো দিনরাত জুড়ে। সেইজায়গায় চলতি মাসের ১৮ তারিখের পূর্বে সমস্ত বালিঘাট বন্ধ ছিল সংশ্লিষ্ট থানার আইসি মধুসূদন ঘোষের নির্ভীকতায়।এজন্য শাসক দলের একাংশ থানার পুলিশের প্রতি একপ্রকার অসহযোগিতাও করে থাকে বলে স্থানীয় সুত্রে প্রকাশ । বর্তমানে সরকারের অনুমতি নিয়ে মাত্র ৩ টি বালিঘাট অনুমতি পেয়েছে বলে জানা গেছে। লোকসভা নির্বাচন ফলাফল প্রকাশ পরবর্তী মঙ্গলকোটে যেভাবে শাসক দলের অভ্যন্তরে বিবাদ প্রকাশ্যে এসেছিল, তাতে বিবাদ ক্রমশ হানাহানিতে চলে যেত।দুপক্ষের সশস্ত্র লড়াইয়ের চালিকাশক্তি হিসাবে অজয় নদের বালিলুটের অর্থ যেভাবে থানার কড়া পদক্ষেপে বন্ধ হয়।তাতে মঙ্গলকোট থানার পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সাধারণ মানুষ খুবই খুশি।