ভাঙড় বইমেলায় অশ্লীল ছবি তোলায়, আক্রান্ত সাংবাদিক, প্রাণনাশের হুমকি

ভাঙড় বইমেলায় অশ্লীল ছবি তোলায়, আক্রান্ত সাংবাদিক, প্রাণনাশের হুমকি

    নতুন গতি, কুতুবউদ্দিন মোল্লা: ভাঙড় বারবার সেই ভাঙড়! দুস্কৃতিকারীদের সফ্ট টার্গেট সংবাদমাধ্যম। ভাঙড় যেন দুস্কৃতিকারীদের মুক্তাঞ্চলে পরিণত হয়েছে!। তারা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অপরাধ করেও! বেশ কিছুদিন আগে ঘটকপুকুর হাই স্কুলে রাজনৈতিক সভায় দুই সাংবাদিক আক্রান্ত হয়েছিলেন। এবার ভাঙড় মহাবিদ্যালয় মাঠে বই মেলায় অশ্লীল ছবি তোলায় প্রহৃত হলেন তিন সাংবাদিক।

    এবছর ১৫ ফেব্রুয়ারি চার দিনের বই মেলা শুর হয় ভাঙড় মহাবিদ্যালয়ের মাঠে। এবছর চতুর্থ বর্ষে পদার্পণ করেছে মেলা। বইমেলার শুরু থেকেই বিতর্কও শুরু হয়! অভিযোগ ওঠে বিকট শব্দে গান বাজানো ও উদ্যাম নৃত্য করতে। সেই অশ্লীলতার মাত্রা যেন দিনদিন বেড়েই চলেছে! এবছরের মেলা ঘুরে আরো দেখা গেছে ভয়ঙ্কর দৃশ্য! মেলা প্রাঙ্গণের ভিতরেই চলছে সিগারেটে টান। আশেপাশে চলছে খাজায় দম দেওয়া। কোথাও আড়ালে অন্ধকারে বসে চলছে যুগলদের ফূর্তি। অশ্লীলতার সব মাত্রা ধরা পরে সাংবাদিকদের ক্যামেরায়। তা টের পেয়ে অতর্কিত হামলা চালায় দুস্কৃতিকারীদের দল।

    বৃহস্পতিবার ছিল মেলার চতুর্থ তথা শেষ দিন। নোংরামি ও অশ্লীলতার ছবি সংগ্রহ করতে বার হন দৈনিকের সাংবাদিক সাদ্দাম হোসেন মিদ্দে ও অনলাইন সাংবাদিক রিঙ্কু ও রাশেষ। যাবতীয় কার্যকলাপের ভিডিও রেকর্ড হচ্ছে। তখন ভাঙড় মহাবিদ্যালয়ের সামনে বসে থাকা তিন ব্যাক্তি। সম্ভবত তারা কলেজ পড়ুয়া। তারা দাবি করে তাদের বাড়ী ভাঙড়েই। তাই ভাঙড়ে এসে এসব ছবি করা যাবেনা। তারপর তারা অকথ্য ভায়ায় গালিগালাজ করে বলতে থাকে ভিডিও মুছে দিয়ে। অকুতোভয় তিন সাংবাদিক তা করতে অস্বীকার করেন। তখন দুস্কৃতিকারীরা ফোনে আরো কয়েকজন গুন্ডাকে ডাকে তারপর তিন সাংবাদিকের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তারা। আছাড় মারা হয় মোবাইল ফোন। জোর করে মুছে দেওয়া হয় ওই অশ্লীল ভিডিও ও ছবিসহ। রিস্টোর করে দেওয়া হয় ফোন।

    সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাপারটি হল প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয়।! বলা হয় কোন ভাবেই যদি এই অশ্লীল ভিডিও প্রকাশ করা হয়, তাহলে পিটিয়ে মেরে ফেলা হবে! কেউ রক্ষা করতে পারবে না। বলা ওইসব প্রেস বুঝিনা! ভাঙড়ে আমরাই শেষ কথা। সাংবাদিক নিগ্রহ ভাঙড়ে নতুন ঘটনা নয়। তাই এর সঙ্গে রাজনৈতিক যোগ রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এদিনের ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত বলেও আক্রান্ত তিন সাংবাদিকরা সন্দেহ করছেন।

    ঘটনাস্থল থেকে কোনক্রমে প্রাণে বেঁচে চলে যান। আশ্রয় নেন ভাঙড় থানায়। তবে তাঁরা কোন অভিযোগ দায়ের করেননি। কারণ কিছুদিন আগেই ঘটকপুকুর হাই স্কুলে তৃণমূলের যুব কংগ্রেসের সভায় সুভাশীষ চক্রবর্তী ও স ওকাত মোল্লার উপস্থিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন এক দৈনিক ও এক অনলাইন সাংবাদিক। তখন পুলিশ উদ্ধার করলেও, দূরব্যাবহার করে ভাঙড় থানার পুলিশ। তাঁদের টেনে হিচড়ে গাড়ীতে তোলা ও থানায় এনে লকাপের সামনে বসিয়ে রাখার অভিযোগে ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। তাই এদিনের ঘটনা তাঁরা পুলিশকে জানাননি।

    ভাঙড়ে সাংবাদিক নিগ্রহ ও বইমেলায় অশ্লীল কার্যকলাপের তীব্র নিন্দা করেছে শিক্ষক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক সমাজসেবী, শিল্পীসহ সর্ব স্তরের মানুষ। প্রতিবাদ জানিয়েছে রাজনৈতিক দল গুলির নেতারাও। দুস্কৃতিকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করেছেন নিগৃহীত তিন সাংবাদিক সহ অন্যান্য সাংবাদিকরা।

    ভাঙড়ে গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ যখন ই সত্য উদঘাটনের চেষ্টা করছে তখনই নেমে আসছে আক্রমণ। বারবার নাম জড়াচ্ছে শাসক দল তৃণমূলের। তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র সাম্প্রতিক ‘দু পয়সার সাংবাদিক’ বলে কটাক্ষ করেন সংবাদ মাধ্যমকে। সংবাদ মাধ্যম সম্পর্কে মহুয়ার এই বিরুপ মন্তব্য কি তাহলে উদ্বুদ্ধ করছে তার ভাইদেরকে? যে কারণে সাংবাদিকদের সফ্ট টার্গেট করছে ওরা। যে কারণে ওরা সংবাদ মাধ্যম কে আক্রমণ করুক না কেন এর ফল ভালো ভোগ করতে হবে শাসক দলকে। তারা আসলে নিজের কবর নিজেই খুড়ছে।