|
---|
নিজস্ব সংবাদদাতা, পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোল মহকুমার জামুড়িয়া ব্লকের নিমশা’য় অনুষ্ঠিত হয় বিদ্রোহী কবির স্মরণে কবি নজরুল সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা। প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন জামুড়িয়ার বিধায়ক হরেরাম সিং, পান্ডবেশ্বরের বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী , কবি নজরুলের ভ্রাতুষ্পুত্র ও কবিতীর্থ চুরুলিয়ার নজরুল একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক কাজী রেজাউল করিম, সংস্কৃতি জগতের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব কাজী মোশারফ হোসেন। তাঁদের সহযোগিতায় ছিলেন অনুষ্ঠানের প্রধান উদ্যোক্তা লাল্টু কাজী । আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর কবির আবক্ষ মর্মর মূর্তিতে মাল্যদান করা হয়। উপস্থিত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মাল্যদানের পর উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন বিদ্রোহী কবির নাতনি সোনালি কাজী । অনুষ্ঠানে আলোচনাসভা ছাড়াও আবৃত্তি, স্বরচিত কবিতা পাঠ, সঙ্গীত, নৃত্য পরিবেশিত হয়। সরকারের কোভিড বিধি মেনে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে অনুষ্ঠান পরিচালনা করা হয়।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে নিমশার একটা নিবিড় সম্পর্ক আছে। হ্যাঁ, আজও আছে। কিশোর নজরুল অনেকবার এসেছেন এই নিমশা গ্রামে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম সেই স্মৃতি বহন করে চলেছে নিমশার মানুষ। কবির স্মৃতি বিজড়িত নিমশা হয়ে উঠেছে সংস্কৃতির পূণ্যভূমি। মুসলিম অধ্যুষিত নিমশার শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক চর্চা সুপ্রাচীন। একদা আর্থিক সামাজিক ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকা নিমশা আজও এলাকায়, মানুষের প্রেরণার উৎসমুখ । স্বাভাবিক ভাবেই, কবি নজরুল স্মরণে এই সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার অনুষ্ঠানকে ঘিরে নিমশার মানুষের মধ্যে দেখা গেল অন্তরের উন্মাদনা। ব্যাপক সংখ্যায় নিমশার মানুষ তো উপস্থিত ছিলেনই। নিকটবর্তী খোট্টাডিহি, আলিনগর সহ এলাকার বহু নজরুল অনুরাগী, সংস্কৃতি প্রিয় মানুষ সমবেত হয়েছিলেন। বৃষ্টি উপেক্ষা করে উপস্থিত হয়েছিলেন বিশিষ্ট সমাজসেবী সুকুমার ভট্টাচার্য, বিশিষ্ট নজরুল গবেষক শিক্ষারত্ন কাজী নিজামুদ্দিন, পান্ডবেশ্বর থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ দলুই, জেলা পরিষদের শিক্ষা, তথ্য, সংস্কৃতি কর্মাধ্যক্ষ বকুল মণ্ডল, পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি রেনুকা বাউরি। উপস্থিত ছিলেন সেখ হোসেন বসরী, হীরা কাজী, চঞ্চল কাজী, ডাবলু খান,বুলবুল কাজী, নন্টু কাজী, বাপ্পা কাজী, নূর হোসেন খান, সেখ ফজলে করিম , বিকি কাজী, খাসবার্তার পক্ষে জয়দীপ মুখোপাধ্যায়, বিশ্ব মানবাধিকার পরিষদের জেলার দায়িত্ব প্রাপ্ত কাজী হাসিকুল হক, বুলেট মণ্ডল প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে সদ্য বিজয়ী দুই বিধায়ক হরেরাম সিং ও নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীকে সংবর্ধনা জানানো হয়। আলোচনাসভায় অংশ নিয়ে বিধায়ক হরেরাম সিং এমন অনুষ্ঠান করার জন্য নিমশার মানুষ ও উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ জানান। বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বিদ্রোহী কবির সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির আদর্শ আজকের দিনে আরও বেশি প্রাসঙ্গিক বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। প্রশাসনিক আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ দলুই বিদ্রোহী কবির সমাজ চেতনার ওপর আলোকপাত করেন । বক্তব্য রাখতে গিয়ে সংস্কৃতি জগতের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব কাজী মোশারফ হোসেন বলেন, স্বাধীনতা আন্দোলনে যুবমনে কবি নজরুলের কবিতা গান আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। আজও বিদ্রোহী কবির কবিতা গান মানুষের মধ্যে উদ্দীপনা জাগায়। তিনি বলেন, সমাজ নির্মাণে কবি যে সংগ্রামের কথা বলেছিলেন তা আজও থেমে যায় নি। কবি নজরুল সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় কবির উদ্দেশ্যে স্ব-রচিত কবিতা পাঠ করেন কাজী মঞ্জুর কাদের। আবৃত্তি করেন বিশিষ্ট আবৃত্তিকার কাজী মোশারফ হোসেন ও কাজী হাসিকুল হক। নৃত্য পরিবেশন করেন কবিতীর্থ চুরুলিয়ার চাঁপা কাজী, আঁখি কাজী, ইসা কাজী, তৃপ্তি কাজী। সঙ্গীত পরিবেশন করেন আঁখি কাজী, শিল্পীকে তবলায় সহযোগিতা করেন কাজী হাসিবুল হক। বিদ্রোহী কবির ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’ গানে নেচে মানুষকে নাচিয়ে দেন খনি – শিল্পাঞ্চলের প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী গালিব কাজী। Mr. G. K নামে তিনি খ্যাত। হরবোলার মাধ্যমে মানুষকে আনন্দ দান করেন কাজী হাসিকুল হক।
কবি নজরুল সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা’র প্রধান উদ্যোক্তা লাল্টু কাজী জানান, কবি নজরুলের নামে নিমশার মানুষের মধ্যে একটা আলাদা আবেগ আছে। এখানে নজরুল অনুষ্ঠান নজরুল উৎসব হয়ে ওঠে। তিনি বলেন, মানুষের সহযোগিতা না পেলে এত বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা সম্ভবপর ছিল না। তিনি গ্রামবাসী ও আগত অতিথিদের নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। বস্তুত, বিদ্রোহী কবির স্মৃতিধন্য নিমশায় কবির নামে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা কার্যত উৎসবের আকার নেয়। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালন করেন প্রধান আয়োজক লাল্টু কাজী ।