বিনামূল্যে খেলাধুলার প্রশিক্ষ দেন খবরের কাগজ বিক্রেতা শ্যামল গোস্বামী

আজিজুর রহমান, গলসি : গলসি হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস। উচ্চমাধ্যমিক পড়ার সময় অভাবের সংসারে হাল ধরতে বন্ধ হয়ে যায় পড়াশোনা। তবুও বহু স্কুল কলেজ পড়ুয়াদের স্যার হয়ে গেছেন গলসির খবরের কাগজ বিক্রেতা শ্যামল গোস্বামী। তিনি বর্তমানে গলসির স্কুল কলেজ পড়ুয়াদের অ্যাথ্লেটিক্স এর প্রশিক্ষক। তিনি জানিয়েছেন, পেটের টানে নিত্য ভোর তিনটেতে ঘুম থেকে ওঠতে হয় তাকে। বর্ধমান থেকে খবরের কাগজ এনে এলাকার বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে পৌছে দেন। দুপুর প্রযন্ত বাজারে ফেরি করে খবরের কাগজ ফেরি করেন। সেখান থেকে অল্প আয় দিয়েই পরিবারের সকলের পেট চালান। এত পরিশ্রমের পরও সপ্তাহের চারদিন এলাকায় ছেলেমেয়েদের বিনামূল্যে অ্যাথ্লেটিক্স এর প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন তিনি। গ্রামাঞ্চলে অ্যাথ্লেটিক্সকে টিকিয়ে রাখতে তার ওই পরিশ্রম। পেশা নয় নেশার তাগিদে গলসিতে অ্যাথলেটিক এর প্রশিক্ষণ দেন তিনি। তার এমন সংগ্রামী জীবনের প্রশংসা করেছেন স্থানীয়রা। এলাকাবাসী সেখ মান্নান হোসেন, সভ্যসাচী সামরা বলেন, তাকে ফুটবল মাঠে কখনও লাইসম্যান, কখনও বাঁশি মুখে রেফারির ভুমিকায় দেখা যায়। সকালে পেপার বিক্রি করার পর বিকালে মাঠে অ্যাথ্লেটিক্স এর প্রশিক্ষণ দেন। তার ছাত্রছাত্রীরা ব্লক, জেলা, রাজ্যে পৌছে সাফল্য এনেছে। এমন কাজের জন্য গলসিবাসী হিসাবে গর্বিত তারা। এলাকার ক্রিড়া প্রশিক্ষক সেখ ফিরোজ আহম্মেদ জানিয়েছেন, গলসি হাইস্কুলে পড়াশোনা থেকেই স্কুলের খেলার মাঠ ছিল শ্যামল গোস্বামী খুবই প্রিয়। একটা সময় ক্রিকেট ফুটবল দুটোই খেলেছেন তিনি। তবে পরিবারে বাবা মা ও চার ভাইয়ের পেট চালাতে দাদা স্বর্গীয় প্রবীর গোস্বামী হাত ধরে সাথে যোগ দেন হকারিং ব্যবসায় আসেন। সেই থেকেই বাসে, বাজারে ও সাধারণ মানুষের গৃহে খবরের কাগজ পৌছে দেন তিনি। বিকালে খেলার মাঠে এলাকার স্কুল কলেজ পড়ুয়াদের বিনামূল্যে অ্যাথ্লেটিক্স এর প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। এরজন্য তাকে ধন্যবাদ জানান ফিরোজবাবু। অ্যাথলেটিক্স এর ছাত্রী সেখ সানিয়া বলেন, তারা ১৫ -২০ জন ছাত্রছাত্রী এখানে প্রশিক্ষণ নেন। তাদের বেশ কয়েকজন জন ছাত্রছাত্রী ব্লক জেলা ও রাজ্যে পৌছে সাফল্য এনেছে। সমাজে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে তারা প্রশিক্ষণ নেন। বিনামূল্যে তাদের শিক্ষা দেবার জন্য শ্যামল স্যারের কাছে কৃতজ্ঞ তারা।