ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া বন্ধুকে খুনের অভিযোগে শেখ সলমনকে গ্রেফতার করেছে বীরভূম জেলা পুলিশ

নিজস্ব সংবাদদাতা: এলাকায় শান্ত, ভদ্র ছেলে বলেই পরিচিত বছর বাইশের যুবক। কোনও রকম বিবাদে জড়াতে তাকে দেখেননি গ্রামবাসীরা। সেই ছেলেকে তাঁরই ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া বন্ধুকে খুনের অভিযোগে পুলিশ গ্রেফতার করেছে শুনে বিশ্বাসই হচ্ছে না খয়রাশোলের আহম্মদপুর গ্রামের।

     

    পাথর ব্যবসায়ীর ছেলে সৈয়দ সালাউদ্দিন ওরফে জয়কে নলি কেটে খুনের অভিযোগে শেখ সলমনকে গ্রেফতার করেছে বীরভূম জেলা পুলিশ। সলমন কী করে এই কাণ্ড ঘটাল, তা বুঝে উঠতে পারছেন না তার মা, নিহতের পরিবার কিংবা পড়শিরাও। এডিজি (পঞ্চিমাঞ্চল) সঞ্জয় সিংহ সংবাদধ্যমকে জানান, শুধুমাত্র টাকার লোভে সে বন্ধুকে খুন করেছে বলে জেরায় পুলিশকে জানিয়েছে সলমন। পুলিশের দাবি, খুনের ছক সে বেশ কিছু দিন ধরেই করছিল। এক সপ্তাহ আগেও সালাউদ্দিনকে ডেকেছিল সলমন। কিন্তু, তিনি আসতে পারেননি। শনিবার পিকনিকের নাম করে সলমন তার বন্ধুকে ডাকে। এ বার ‘ফাঁদে’ পা দেন ওই ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র।

    রবিবার গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, সকলেই সলমনকে নিয়ে আলোচনা করছেন। এক মহিলা বললেন, ‘‘ওরা দুই বন্ধুই ভাল ছেলে। কিন্তু, আজ সকাল থেকে যা যা শুনেছি, তার সঙ্গে আমাদের এত দিনের চেনা সলমনকে মেলাতে পারছি না।’’ গ্রামের লোক জানিয়েছে, লেখাপড়া বেশি দূর না এগোলেও সালাউদ্দিনের সঙ্গে সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল সলমনের। বন্ধুত্বও ছিল গলায় গলায়। গ্রামে এলে এক থালায় খাওয়া, এক সঙ্গে ঘোরা ছিল তাঁদের রুটিন। বাড়িতে ছোট বোন, বাবা ও মা রয়েছেন সলমনের। গ্রামেই ইটভাটার ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সলমন। স্থানীয়দের দাবি, ওই ভাটা চালাতে গিয়ে প্রচুর লোকসান হয় সলমনের। তা ছাড়া, নিজেও মোবাইল গেম খেলতে গিয়ে প্রচুর ধার-দেনা করে ফেলেছিল।

    এলাকা সূত্রে জানা গিয়েছে, এর আগেও বন্ধুর কাছে ১০ লক্ষ টাকা ধার চেয়েছিল সলমন। কিন্তু, সালাউদ্দিন রাজি হননি। সলমনের মা পাপিয়া বিবি বললেন ‘‘ ছেলে এমন করেছে, বিশ্বাস করতে পারছি না!’’ পাপিয়া জানান, সলমনের মোবাইল খারাপ। শনিবার বিকেল চারটে নাগাদ সে বেরিয়ে যাওয়ার পরে সালাউদ্দিন পাপিয়াকে ফোন করে জানতে চেয়েছিলেন, সলমন বেরিয়েছে কি না। পাপিয়ার কথায়, ‘‘এ দিন ভোরে খারাপ খবরটা পাই। কিন্তু, ওরা জঙ্গলে কেন গেল? আমাকে সালাউদ্দিন ফোনে বলেছিল ওরা বাজিতপুরে (কাছাকাছি গ্রাম) বিয়ে বাড়ি যাবে।’’

    ২০১৬ সালের এক রাতে বাড়িতে মজুত বোমা ফেটে মৃত্যু হয় সলমনের দুই কাকা শেখ হাফিজুল ও শেখ তারিকের। তৃণমূল নেতা খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত ছিলেন হাফিজুল। হাফিজুলদের দাদা শেখ জাবির সেই সময় খয়রাশোলের পাঁচড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য ছিলেন। ওই ঘটনার পর আর টিকিট পাননি জাবির। তবে সলমনের বাবা শেখ সাবির হোসেন নির্বিরোধী মানুষ হিসাবেই পরিচিত।