বীরভূমের নক্ষত্র কলকাতার সাহিত্যাকাশকেও ছুঁয়েছেন নিজস্ব আলোকে

 সৈয়দ মইনুদ্দীন হোসেন:-
তারাশঙ্কর, শৈলজা, ফাল্গুনী, শ্রীকুৃমারের পর বীরভূমে সাহিত্য করেছেন কিন্তু কলকাতার সাহিত্যাকাশে নিজস্ব আলোকে আলোকিত হতে পেরেছিলেন ডঃ সুুধীর করণ কবিরুল ইসলামের মতো দু’একজন কেউ কেউ।তবে সংখ্যাটি নিতান্তই কম।আরেকজন সাহিত্যসাধকের কথা বীরভূমে সেভাবে আলোচিত না হলেও তিনিও কিন্তু কলকাতার সাহিত্যজগতে একটি আলোচিত নাম।সাহিত্য বলতে পণ্ডিতেরা কবিতা গল্প উপন্যাস আর মৌলিক প্রবন্ধকেই বোঝেন। অনুবাদকে সাহিত্য বললেও এটাকে আলাদা সাহিত্য বলতেই তাঁরা পছন্দ করেন।কিন্তু সাহিত্যের ইতিহাসে অনুবাদের ভূমিকাও কম নয়।এটাও একটি মূল্যবান মাধ্যম। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের দিকে লক্ষ্য রাখলে আমরা দেখতে পায় সেসময় যদি কিছু বিখ্যাত মানুষ অনুবাদের দিকে না যেতেন তাহলে সংস্কৃতের গ্রাস থেকে বাংলাভাষা নিজস্বতা নিয়ে বেরিয়ে আসতে পারত না।যদি পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসগর অনুবাদ না করতেন তাহলে আমরা এমন অনুপম গদ্য পেতাম না।অনুবাদের ইতিকথা বলার উদ্দেশ্যে আমার এই লেখা নয় তবে আমি যাঁর কথা বলছি তাঁর মৌলিক গল্প কবিতা প্রবন্ধ ছড়ার সংখ্যা নেহাত কম না হলেও একজন অনুবাদক হিসাবেই তাঁকে আমরা বেশি করে চিনি।তিনিই রত্নপ্রসবা বীরভূমের রত্ন পুস্পিত মুখোপাধ্যায়।
জন্ম ১৯৫২ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি। সিউড়ি বেনীমাধব হাইস্কুলে পড়াশুনা। তারপর বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে স্নাতক।সরকারি কর্মকর্তা। বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত। খুব ছোটোবেলা থেকে সাহিত্যের প্রতি টান।বিশেষত উর্দু সাহিত্যের দিকে ঝোঁকটা ছাত্রাবস্থা থেকেই।নিজে উর্দুটা খুব ভালো জানেন।পড়তে লিখতে পারেন অনায়াসে। ছাত্রাবস্থাতেই উর্দু সাহিত্যের লেখক কবি- মির্জা গালিব, জোশ,ফিরাক,ফৈজ,মাজাজ,জামাল,খাজা আহমেদ আব্বাস, মান্টো প্রমুখের সৃষ্টি তাঁকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।তাই নিজে যখন সাহিত্য সাধনায় মগ্ন, যখন মৌলিক সাহিত্য সৃষ্টিতে তিনি বলিষ্ঠ কলমের অধিকারী তখনও তিনি অনুবাদকেও আঁকড়ে ধরে আছেন।ধরে আছেন মির্জা গালিব সাদাত হোসেন মান্টোদের সাহিত্যকে বাংলার পাঠককে উপহার দেবার জন্য।
আমি ধর্মীয় দিক থেকে বাঙালি মুসলমান। অনুবাদ না থাকলে আল কোরানের একবিন্দুও বুঝতে পারতাম না শুধু তোতা পাখির মতো পড়ে যেতাম না বুঝে যদি এর ইংরেজি বা বাংলা অনুবাদ না থাকতো।অনুরূপ ভাবে বেদ,পুরান, গীতার অনুবাদ না থাকলে সাধারণ মানুষের পক্ষে হিন্দু ধর্মের বাণী হৃদয়ঙ্গম হতো না।তাই অনুবাদের গুরুত্বকে আমরা অস্বীকার করতে পারি না।
সাহিত্যিক পুস্পিত মুখোপাধ্যায় অমর হয়ে থাকবেন তাঁর অনুবাদ সাহিত্যে।শুধু বীরভূম নয় কলকাতার কড়চাতেও বারবার চর্চিত হয়েছে তাঁর অনুবাদ।কী কী অনুবাদ করেছেন তিনি?
অনুবাদ করেছেব গালিবের দস্তুঁর, মির্জা গালিবের চিঠি,গালিবের পত্রাবলী, লিখেছেন গালিবনামা,গালিবের স্মৃতি, সদাত হোসেন মান্টোর শিরোনামহীন, সাদাত হোসেন মান্টোর নির্বাচিত গল্প,লিখেছেন মান্টো কথা,করেছেন কুর্তুল এন হায়দারের উর্দু গল্প সংকলনের অনুবাদ।অনুবাদ করেছেন উপমহাদেশের উর্দু গল্প,অনুনাদ করেছেন ইন্তিজার হুসেনের নির্বাচিত গল্প।
লিখেছেন উর্দু সাহিত্যের আকাশ,পুস্পিত রূবাই।শুধু অনুবাদেই নয় মৌলিক সাহিত্যেও বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন এই বলিষ্ঠ বীরভূমি লেখক।গল্পের বই আছে পাঁচটি, প্রবন্ধের বই তিনটি,লিখেছেন ছড়ার বই,তাঁর কবিতার বই “দুহাতে কুড়োয় আঁধার “। মোট ৩৬ টিরও বেশি বই লিখেছেন তিনি।
প্রথমেই লিখেছিলাম কলকাতার সাহিত্যাকাশকে ছুঁতে পেরেছেন আরেকজন বীরভূমি। হ্যাঁ সেই সাহিত্যাকাশকে ছুঁয়েছেন পুস্পিত।আজ পর্যন্ত বাংলা আকাদেমির পুরস্কার বীরভূমের কেউ পাননি।অমলেন্দু মিত্র রবীন্দ্র পুরস্কার পেয়েছেন তবে বাংলা আকাদেমি পুরস্কার সম্ভবত এই প্রথম আসতে চলেছে বীরভূমে।সেই কবে শুরু করেছিলেন সাহিত্যযাত্রা যে যাত্রা আজও অব্যাহত।তেমন প্রচার ছিল না,ছিল না আত্মপ্রচারের কোনো ইচ্ছা কিন্তু ছিল আত্মপ্রত্যয়। পথ ছিল কঠিন কিন্তু অদম্য জেদে সেই পথ তিনি অতিক্রম করেছেন।ফলে গন্তব্যে পৌঁছাতে পেরেছেন। সেখানে অস্মিতার আস্ফালন নয় বরং তাঁর লেখামালার মধ্যে এমনকিছু থাকে যা শুধু বীরভূম বা বাংলার পাঠককে নয় বাংলা আকাদেমির গবেষক দিকপাল পাঠক-মনকেও স্পর্শ করতে পেরেছে।
বীরভুমি কবিসাহিত্যিকদের লেখার সাধারণ পাঠক হিসাবে এই বীরভূম রত্নকে আমার অভিনন্দন আর আন্তরিক শ্রদ্ধা জানাই…