প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে দিল্লিতে আমন্ত্রিত বীরভূমের সেরপাই শিল্পী দম্পতি

 

    খান আরশাদ, বীরভূম:

    প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে দিল্লি পৌঁছলেন বীরভূমের সেরপাই শিল্পী দম্পতি।

    ২৬ শে জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসে কুচকাওয়াজ সহ কয়েকটি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে দিল্লিতে ইতিমধ্যেই দিল্লি পৌঁছেছেন রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত সের-পাই শিল্পী দম্পতি বীরভূমের খয়রাশোল ব্লকের লোকপুর গ্রামের ভোলানাথ কর্মকার ও তাঁর স্ত্রী রুমা কর্মকার । প্রাচীন ‘সের-পাই’ শিল্পের ধারক বাহক এই শিল্পী দম্পতি ৷ এক সময় প্রায় সব বাড়িতেই চাল,গম,আটা, এমনকি দুধ মাপার কাজেও ব্যবহৃত হত এই সের-পাই । এখন এই সের-পাই প্রায় বিলুপ্তির পথে। এখন খুব কম পরিবারই আছেন যাদের বাড়িতে এই সেরপাই এর প্রচলন আছে।

    বর্তমান ডিজিটালের যুগে প্রাচীন এই পরিমাপক যন্ত্র প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। তা সত্ত্বেও প্রাচীন এই সেরপাই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বীরভূমের লোকপুরের এই শিল্পীরা। ভারত সরকারের বস্ত্রমন্ত্রক দপ্তর থেকে চিঠি দিয়ে সের পাই শিল্পীদের অতিথি হিসেবে ডাকা হয়েছে ৷

    শনিবার দুপুরে দিল্লি থেকে ফোনে শিল্পী ভোলানাথ কর্মকার বলেন, সরকারি ভাবে প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে ডাক পেয়ে খুবই আনন্দিত ও উচ্ছসিত।

    স্থানীয়সূত্রে জানা গিয়েছে শিল্পী কার্তিক কর্মকারের হাত ধরে “সের-পাই” শিল্পের প্রসার ঘটেছিল৷ ১৯৬৫ সালে সের পাই শিল্পী কার্তিক কর্মকার রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেয়েছিলেন ৷ কার্তিক কর্মকারের ছাত্র তথা জামাই ভোলানাথ কর্মকার এই শিল্পের এখন ধারক বাহক হয়ে উঠেছেন এবং বর্তমানে এই দম্পতিই লুপ্ত প্রায় সের পাই শিল্পকে বাঁচিয়ে রেখেছেন বলা যায়। শিল্প বিকাশ এবং শিল্প সত্ত্বার জন্য ২০১৪ সালে ভোলানাথ কর্মকার রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেয়েছিলেন ৷ কার্তিক কর্মকারের কন্যা তথা ভোলানাথ কর্মকারের স্ত্রী রুমা কর্মকারও ২০১৭ সালে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পান ৷ ভোলানাথ ও রুমা কর্মকারের তিন মেয়ে রিয়া, মণীষা ও প্রিয়া তারাও তাদের বাবা মায়ের সঙ্গে শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ৷

    বহু গ্রামগঞ্জে এখন পর্যন্ত চাল, দুধ, ধান, গম পরিমাপের একক হিসেবে আধ পোয়া, ছটাক, সের পাই, আধ পাই, পোয়া ইত্যাদি নামে চলন রয়েছে। তবে আধুনিকতার ছোঁয়ায় এসব হারিয়ে যেতে বসেছে বা প্রচলন কমে গেছে। আম কাঠের মধ্যে কাঠামো তৈরি করে তার উপর পিতলের বিভিন্ন ধরনের নকশা তৈরি করে সের পাইয়ের গায়ে সাঁটানো হতো।

    কালের আবর্তে মাপের পরিমাপ হিসেবে ব্যবহৃত না হলেও অনেকের বাড়িতে সৌন্দর্যায়ন হিসেবেও এখন স্থান পাচ্ছে এই সের-পাই।