নির্দল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পত্র জমা দিলেন আদি বিজেপি নেতা তথা প্রাক্তন ভারতীয় সেনা কর্মী

নতুন গতি, ওয়েব ডেস্ক : মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরে বিজেপি প্রার্থী নিয়ে প্রার্থী ঘোষণার দিন থেকেই দেখা গিয়েছিল নেতা কর্মীদের মধ্যে বিক্ষোভ। জেলাস্তরের নেতাদের নির্দেশে সেই বিক্ষোভ থেমে গেলেও প্রার্থীকে সমর্থন করেন নি সকলে। সেই বিক্ষোভকারীদের একাংশের মধ্যে থেকে এক বিজেপি নেতা আজ নির্দল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন চাঁচল মহকুমা অফিসে। রিতিমত ডিজে, ব্যান্ড বাজিয়ে মিছিল বের করে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যান তিনি। ঘটনার পর তীব্র কটাক্ষ করেছে তৃণমূল, শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। যদিও বিজেপি বলেছে এই ঘটনার কোনো প্রভাব পড়বে না।

     

    প্রার্থী ঘোষণার পর থেকেই ক্ষোভে ফুঁসছিল বিজেপির বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা। হরিশ্চন্দ্রপুরের প্রার্থী মতিবুর রহমানের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন অনেকেই। পরবর্তীকালে বিক্ষোভ থেমে গেলেও ক্ষোভ থেকেই গেছিল নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার তারই প্রতিফলন স্বরুপ নির্দল প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন ছাব্বিশ বছর দেশের সীমান্তে সেবা করেছেন। তিনি বলেছেন ভারতীয় জনতা পার্টির উপর তাদের কোনো রাগ নেই কিন্তু যে ব্যক্তি প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছেন তিনি সংবিধানের কিছুই জানে না। তার পক্ষে হরিশ্চন্দ্রপুরের মানুষের সুবিধা অসুবিধা কোনো কিছুই দেখা সম্ভব নয়। মোদী অমিত শাহের সাথে কোনো ক্ষোভ নেই তাদের। কিন্তু হরিশ্চন্দ্রপুরের যে প্রার্থী হয়েছে তাকে মেনে নিতে পারছেন না। এই মিছিলে পোস্টার দেখা যায় “কানাইয়া লালের রক্ত হবে নাকো ব্যর্থ”। ২০১২ সালে কানাইয়ালাল খুন হন, আর আদী বিজেপির অভিযোগ এই খুনের সাথে বর্তমান প্রার্থীর যোগসূত্র রয়েছে। ঘটনার পর থেকে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে হরিশ্চন্দ্রপুরের রাজনৈতিক মহল। আজকের এই নির্দল প্রার্থীর মিছিলেও পোস্টার দেখা যায় ও স্লোগান ওঠে‌।

     

    বিক্ষুব্ধ বিজেপি নেতা তথা প্রাক্তন সেনা কর্মী মনোরঞ্জন কুমার দাস বলেন, “আমি নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়াচ্ছি।আমি এতদিন বিজেপি করে এসেছি, জেলা থেকে মোর্চা ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলাম। কিন্তু এখানকার প্রার্থী ৪৬ নম্বর বিধানসভার জন্য ভালো নয়। তাই আমি নির্দল হিসেবে দাঁড়াচ্ছি। ছাব্বিশ বছর আমি আর্মীতে থেকেছি। হরিশ্চন্দ্রপুরে যেভাবে গরীবদের উপর অত্যাচার হয় সেগুলো দেখা সম্ভব হচ্ছে না। জনতা যদি আমাকে সমর্থন করে তাহলে যেভাবে এতদিন দেশের সেবা করে এসেছি সেভাবেই হরিশ্চন্দ্রপুরের সেবা করব।”

     

    বিক্ষুব্ধ বিজেপি নেতা জিয়াউল হক জানান, “আজ আমরা হরিশ্চন্দ্রপুর বিধানসভার ভূমিপুত্র মনোরঞ্জন দাসের সমর্থনে চাঁচল মহকুমায় মনোনয়ন পত্র জমা দিতে যাচ্ছি। আমরা চেয়েছিলাম হরিশ্চন্দ্রপুর থেকে কোনো শিক্ষিত মানুষ প্রার্থী হিসেবে দাঁড়াক। কিন্তু যে নিজের নাম বলতে পারে না, ভারতের জাতীয় সঙ্গীত গাইতে জানে না তাকে কীভাবে হরিশ্চন্দ্রপুরের আদী বিজেপি মেনে নেবে? বিগত ২০১২ সালে হরিশ্চন্দ্রপুরে বিজেপির নেতাকে খুন করা হয়েছিল। সেই খুনিদের সাথে আমরা চলতে পারবো না। হরিশ্চন্দ্রপুরের জনগণ ব্যাপকভাবে আমাদের সমর্থন জানিয়েছেন।”

     

    হরিশ্চন্দ্রপুর ১ দক্ষিণের মন্ডল সভাপতি রূপেশ আগারওয়াল বলেন, “আমার মনে হয় মনোরঞ্জন দাসের বাড়ির যে ভোট মানে তার পরিবারের লোকজন তাকে ভোট দেবে কি না তাতেও সন্দেহ আছে। সেটা ২-রা মে প্রমাণিত হয়ে যাবে। হরিশ্চন্দ্রপুরের মানুষ বিজেপির সাথে ছিল এবং থাকবেও।”

     

    হরিশ্চন্দ্রপুর তৃণমূল-কংগ্রেসের চেয়ারম্যান সঞ্জীব গুপ্তা বলেন “হরিশ্চন্দ্রপুরে বিজেপি এমন একটা প্রার্থী মনোনিত করেছেন যে নিজের নাম ঠিক করে বলতে পারে না। ভারতের চতুর্থ স্তম্ভকে কুকথা বলে তার কাছ থেকে মানুষ কী বা আশা করতে পারে? কয়েকদিন আগে বিজেপির পার্টি অফিস ভাঙচুর হল। স্বাভাবিক ভাবেই মানুষ বিজেপির উপর বীতশ্রদ্ধ হয়ে আছে। মানুষ এর জবাব দেবে। মানুষ এবার ধর্মকে নয় উন্নয়নকে বেছে নেবে।”

     

    যদিও বিজেপি এই বিষয়টিকে প্রকাশ্যে গুরুত্ব দিতে চাইছে না, তবে তৃণমূলের দাবি এতে তৃণমূল-কংগ্রেসে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা না গেলেও বিজেপি এর ফল ভুগবে‌। ফলাফল জনগণের হাতে। মানুষ কাকে বেছে নেবে তা ২-রা মে জানা যাবে।