|
---|
নতুন গতি নিউজ ডেস্ক: চোখের পাতা আধ বোঝা হয়ে আসছে, দৃষ্টি টলমলে, কিছু পরেই অন্ধ। চিকিৎসকেরা রোগীর প্রাণ বাঁচাতে একটি চোখ কেটে বাদ দিতে বাধ্য হচ্ছেন। আক্রান্তদের বয়স ১৫- ২৫। মুম্বইতে ৪০ জন আক্রান্ত রোগীর ১০ জনের একটি করে চোখ কেটে বাদ দিলেন ডক্টর নায়ার। চলতি বছরের এপ্রিলেই। অর্থাৎ আগের মাসে। চোখ নয়, নাকের চারপাশে কালো দাগ ক্রমশ ঘন হচ্ছে, ঘ্রাণ শক্তির বিপর্যয়। এই সমস্ত রোগীর একটি মিল। এরা সবাই করোনা আক্রান্ত বা সদ্য করোনা থেকে সুস্থ। অশনি সংকেত টা কি? ব্ল্যাক ফাঙ্গাস, মিউকরমাইকোসিস। এই ছত্রাক থাকে মাটিতে, গাছে, পচা পাকা ফলে, এমনকি বাতাসেও। সেই ছত্রাক আজ মানুষের নাকে, চোখে। খুব সহজেই এরা আক্রান্ত করতে পারে সুগার রোগী, ক্যান্সার ও এইডস রোগীকে। যাদের ইমিউনিটি ক্লান্ত নিরন্তর লড়াই করতে করতে বা ওষুধ প্রয়োগের ফলে। সুগার আক্রান্ত রোগীদের সহজেই আক্রান্ত করতে বিশেষ ভাবে দক্ষ এই মিউকর।এই ছত্রাকে আক্রান্তদের মৃত্যুহার ৫০ শতাংশ। করোনা আক্রান্ত রোগীদের ফুসফুস সাংঘাতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে দিতে হচ্ছে স্টেরয়েড। আর স্টেরয়েডের ফলেও কমছে ইমিউনিটি। আর ভগ্ন ইমিউনিটি আটকাতে ব্যর্থ হচ্ছে এই ছত্রাককে। স্টেরয়েড ফুসফুসের ক্ষত সারাচ্ছে। বাড়িয়ে ফেলছে সুগারের পরিমাণ। সহজেই ফুলে ফেঁপে উঠছে নতুন আতঙ্ক। এর ফলে আক্রান্ত হতে পারে মস্তিষ্ক। রক্তে অতিরিক্ত সুগার শরীরের ইমিউনিটি কমায়, যা করোনা আক্রান্তদের আরও কমে। সেই সঙ্গে স্টেরয়েড প্রয়োগ আগুনে ঘি ঢালার কাজটি করে। ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের আখড়া হয়ে উঠে আমাদের শরীর।
ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারিতেই ৬০ জন রোগীর সন্ধান মেলে ভারতের পাঁচটি শহরে। যাদের বয়স্ ১৫-২৫ বছর। করোনা থেকে সদ্য সুস্থ হওয়ার পরেএ আক্রান্ত হয় সকলে। তারপরই মুম্বই, পুনে, হায়দ্রাবাদ, ব্যাঙ্গালোর থেকে একের পর এক ঘটনার খবর আসতে শুরু করে। দক্ষিণের এক রাজ্যের চক্ষু চিকিৎসক গত মাসেই ১১ জন আক্রান্তদের খোঁজ পেয়েছেন। কিছু আক্রান্ত আবার এতটাই অসুস্থ যে অপারেশন করার অবস্থাটুকুও নেই। মুম্বইয়ে ডক্টর নায়ারের খাতায় লেখা হিসেব বলছে। গত দু’বছরে সেই সংখ্যা ছিল মাত্র দশ। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ বয়ে নিয়ে এসেছে এই মারাত্মক ফাঙ্গাস।ব্যাঙ্গালোরের চক্ষু চিকিৎসক ডক্টর হেগড়ের কাছে রোগী আসছে নাকে রক্ত ক্ষরণ নিয়ে ও চোখে অস্বাভাবিক জ্বালা নিয়ে। বহু ক্ষেত্রেই এতটাই দেরি হচ্ছে যে অপারেশন ছাড়া উপায় থাকছে না। করোনা থেকে সদ্য সুস্থ হয়ে উঠা এক তরুণের রোগের তীব্রতার কারণে বাদ দিতে হয়েছে একটি চোখ। কিন্তু সুগার লেবেল স্বাভাবিক ছিল। বয়স সাতাশ। শুধু সুগীর রোগী নয়, সাবধানবাণী কিন্তু সবার জন্যই।