রেস্তোরার মধ্যে কেবিন। তার আড়ালে চলছে অশালীন কাজকর্ম 

মালদহের চাঁচল এ রেস্তোরার মধ্যে কেবিনের আড়ালে চলছে অশালীন কাজকর্ম

     

     

    নতুন গতি প্রতিবেদক, চাঁচল : রেস্তোরার মধ্যে কেবিন করে তার ভেতরে চলছে অশালীন কাজকর্ম। সেই কেবিনে যাওয়াটাই মূল উদ্দেশ্য হয়ে যাচ্ছে প্রেমিক যুগল থেকে শুরু অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলে মেয়েদের। যাদের মধ্যে অনেকেই ছাত্রছাত্রী। ফলে পরিবেশ এবং সংস্কৃতি খারাপ হচ্ছে এলাকার। এবার সেই রেস্তোরাগুলির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানালেন এলাকার সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিশিষ্টজনেরা। সমগ্র বিষয় খতিয়ে দেখার আশ্বাস প্রশাসনের।

     

    মালদা জেলার চাঁচল শহরের বেশ কিছু রেস্তোরাঁকে কেন্দ্র করে এমন অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, ঘন্টাপিছু ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। সেখানে হাজির হচ্ছে যুবক-যুবতী থেকে শুরু করে অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়েরাও। যাদের অনেকেই শহরে টিউশন পড়তে আসা ছেলেমেয়েও রয়েছে বলে অভিযোগ। খাওয়ার নাম করে প্রকাশ্যে সকলের সামনে রেস্তরাঁয় ঢুকে কেবিন ভাড়া নিয়ে তারা অশালীন কাজকর্ম করছে বলে অভিযোগ। দিনের পর দিন একাধিক রেস্তরাঁয়ায় এমন অবৈধ কাজকর্ম চললেও প্রশাসন কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে অনেকেই সরব হয়েছেন। অবিলম্বে রেস্তরাঁয় অশালীন কাজকর্ম বন্ধ করার দাবিতে সরব হয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও। সোশ্যাল মিডিয়ায় রেস্তরাঁ নিয়ে ক্ষোভের আঁচ পেয়েই অবশ্য নড়েচড়ে বসে পুলিশ। শুক্রবার সকালে রেস্তরাঁর মালিকদের ডেকে তাদের সতর্ক করেছেন পুলিশকর্তারা। তার আগে বৃহস্পতিবার রাতে তরল তলায় পিকক নামে এক রেস্তরাঁয় হানা দিয়ে পুলিশ দুজনকে ধরে থানাতেও নিয়ে যায়। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাদের অবশ্য সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়া হয়। যদিও ঘটনাকে ঘিরে ক্ষুব্ধ শহরবাসী। পুলিশ এতদিন কী করছিল সেই প্রশ্নও উঠেছে।

    শহরের বাসিন্দাদের একাংশের সূত্রে জানা গিয়েছে, তরলতলা এলাকায় কংগ্রেস পার্টি অফিসের উল্টোদিকে একটি রেস্তরাঁয় দীর্ঘদিন ধরেই অশালীন কাজ চলছে। সেখানে ঘন্টাপিছু কেবিন ভাড়া দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। রেস্তরাঁর খাবারের বদলে কেবিন ভাড়ি দেওয়াটাই ওদের মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু শহরের প্রাণকেন্দ্রে পুলিশের নাকের ডগায় কীভাবে রেস্তারাঁর আড়ালে এমন অশালীন কাজ চলছে তা নিয়ে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করতে শুরু করেন। অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়াতেও পোস্ট করে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সূত্রের খবর, তরলতলা এলাকার একটি রেস্তরাঁর মালিক বকলমে শাসকদলের এক নেতা। ওই রেস্তারাঁয় সকাল ১০টা থেকেই প্রেমিক যুগল থেকে শুরু করে নানা বয়সের ছেলেমেয়েদের ভিড় জমতে শুরু করে। কুপন হাতে নিয়ে ঘরের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে তারা বলে অভিযোগ। আবার জীবনবীমা অফিসের পাশে একটি রেস্তরাঁতেও একইভাবে কেবিন ভাড়া দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। সেখানকার কেবিন বেডরুমের মতো বলেও অভিযোগ। তবে পুলিশ সূত্রে খবর, রেস্তরাঁর দরজা বন্ধ কেবিন রাখা যাবে না। খোলামেলা জায়গায় রেস্তরাঁর খাবারের বন্দোবস্ত করতে হবে বলেও তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

     

    পিকক রেস্তোরার মালিক মুকুল মন্ডলএই প্রসঙ্গে বলেন, ” আমার রেস্টুরেন্টকে ঘিরে যে অভিযোগ উঠছে তার জন্য খুব খারাপ লাগছে, কিন্তু কেবিন সবজায়গায় রয়েছে আর আমরা প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে মেয়ে ছাড়া অনুমতি দি না, কেও বা কারা আমাদের রেস্টুরেন্টের নাম বদনাম করার জন্য এসব অভিযোগ তুলছে | ”

     

    মালদা জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক বুলবুল খান বলেন, ” পরশুদিন পুলিশের রেডের পর জানতে পারি রেস্তোরাগুলিতে কেবিনের আড়ালে অশালীন কাজকর্ম হচ্ছে, যা খুবই দুৰ্ভাগ্য জনক, প্রশাসনকে এই বিষয়ে নজর দিতে বলবো, আমরা নিজেরাও দেখছি ব্যাপারটা নিয়ে | ”

     

    চাঁচল-১ ব্লক কংগ্রেস সভাপতি আঞ্জারুল হক জনি বলেন, কেবিনের কুপন নিয়ে একেকজন বন্ধ কেবিনের ভিতরে থাকা অন্যজনকে তাড়া দিচ্ছে। এমনও হচ্ছে। একটি রেস্তরাঁরা মালিক আবার শিক্ষক। শিক্ষক হয়ে কীভাবে তিনি এমন কাজ করছেন তা ওকেও বলেছি। চোখের সামনে এসব দেখে আইসি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছি। অবিলম্বে রেস্তরাঁয়া অশালীন কাজ বন্ধ পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে হবে। নয়তো আমরা এর শেষ দেখে ছাড়ব।

     

    বিজেপির জেলা সম্পাদক, শহরের বাসিন্দা দীপঙ্কর রাম বলেন, সব জানি। এই সংস্কৃতি চলতে থাকলে পরিবেশ, সমাজ নষ্ট হয়ে যাবে। আমাদের ছেলেমেয়েরা চোখের সামনে এসব দেখলে কী শিখবে। এই সংস্কৃতি লজ্জার। অবিলম্বে বন্ধ হওয়া দরকার।

     

     

    চাঁচলের এসডিপিও সজলকান্তি বিশ্বাস বলেন, আইসিকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।

     

    কিছুদিন আগেই এই বিষয়টি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষই সরব হয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ, প্রশাসনের তেমন কোনো হেলদোল দেখা যায়নি । অনেক রেস্তোরার মালিক প্রভাবশালী হওয়াই বেঁচে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠছে। এবার প্রশাসন কি পদক্ষেপ নেই সেই দিকেই তাকিয়ে চাঁচলবাসী।