ঘোষনার পরেও চালু হয়নি চাঁচল পুরসভা,ভোটের মুখে ফের শুরু রাজনৈতিক তর্জা

উজির আলী,নতুনগতি চাঁচল:১২ ডিসেম্বর

    ঘোষনার পরেও মালদহের চাঁচলে পুরসভা চালু হয়নি!ভোট আসলেই শিরোনামে উঠে আসছে চাঁচলবাসীর সেই দাবি।এলাকায় তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক বা সাংসদ না থাকা অন্যতম কারণ সেটা আবারও স্পষ্ট করে দিল তৃণমূলের জেলা মূখপাত্র সুমলা আগরওয়াল। শুক্রবার সন্ধ্যায় মালদহের চাঁচল ১ নং ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস কমিটির দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠকে একথা বলেই ফেললেন তিনি। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন চাঁচল ১ নং ব্লক তৃণমুল কংগ্রেসের সভাপতি সচীদানন্দ চক্রবর্তী,জেলা পরিষদ সামিউল ইসলাম সহ ব্লক নেতৃত্ব।
    সাংবাদিকরা পুরসভা নিয়ে প্রশ্ন করলে,সেই বৈঠকে পুরসভা না হওয়ার জন্য ঘুরিয়ে তিনি চাঁচলের অধিবাসীদের উপরই দায় চাপিয়েছেন। ঘটনায় বিতর্ক জমেছে চাঁচলের রাজনৈতিক মহলে।

    উল্লেখ্য,২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে চাঁচলে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব‍্যানার্জী প্রকাশ্য জনসভায় বলেছিলেন, চাঁচল পুরসভা হবে। কিন্তু চাঁচল বাসীর কাছে অবশ‍্য জোড়া ফুল উপহার চেয়েছিল মুখ‍্যমন্ত্রী।তবে মিলেনি।
    চাঁচলের পুরসভার কাজ অনেকটাই এগিয়েছে।শীঘ্রই কাজ হবে।এমনভাবেই ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে মৌসম নুরের সমর্থনে চাঁচলে নির্বাচনী প্রচারে এসে প্রকাশ্য জনসভায় প্রাক্তন পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু চৌধুরীও বলেছিলেন, চাঁচলে পুরসভা চালুর ফাইল অনেকটাই এগিয়েছে। আপনারা তৃণমূল প্রার্থীকে শুধু জয়ী করুন। কিন্তু জেলায় কোনও তৃণমূল প্রার্থী জয়ী হননি। চাঁচলে পুরসভাও চালু হয়নি। শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠকে চাঁচলে পুরসভা চালু প্রসঙ্গে সুমলা বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য যে চাঁচলের জনগণ নিজেদের অধিকার পেতে সচেষ্ট নয়। তেমন হলে ওরা শাসকদলের সঙ্গে থাকত। তিনি বলেন, এখানে শাসকদলের কোনও বিধায়ক, সাংসদ নেই। থাকলে কাজ দ্রুত হয়ে যেত।
    জনপ্রতিনিধি না থাকায় শাসকদল পুরসভা চালু করছে না বলে শাসকদলের বিরুদ্ধে পক্ষপাতীত্বের অভিযোগ, বিমাতৃসুলভ আচরণের অভিযোগ বারেবারেই তুলেছেন তুলেছিলেন বিরোধীরা। এবার বিধানসভা নির্বাচনের আগে দলের হেভিওয়েটদের পথ ধরে তৃণমূল মুখপাত্রের বক্তব্যকে ঘিরে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। নির্বাচনে কোনও আসন না মেলাতেই ঘোষনার পরেও চাঁচলে পুরসভা চালু করতে এত টালবাহানা কি না সেই প্রশ্ন উঠেছে।
    ২০০১ সালের ১ এপ্রিল চাঁচল মহকুমা গঠনের পর থেকেই চাঁচলকে পুরসভা চালু করার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। তারপর ২০১০ সালের ১৬ জুলাই তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার ও পরে পালাবদলের পর ২০১৪ সালের ১১ জুন তৃণমূল সরকারের তরফে চাঁচলকে পুরসভা করা হল বলে ঘোষনা করা হয়।কিন্তু ঘোষনা হলেও পুরসভা চালু হয়নি।

    পুরসভা করতে কমপক্ষে ২০ হাজার জনসংখ্যা থাকা দরকার। সেখানে ১০টি মৌজা নিয়ে প্রস্তাবিত চাঁচল পুরসভায় ২০০১ সালের জনগণনা অনুসারে জনসংখ্যা ৪২৮৭৯। সেই সংখ্যা এখন কয়েকগুন বেড়েছে। কিন্তু চাঁচলকে দুবার পুরসভা হিসেবে ঘোষনা করা ছাড়া আর কিছুই হয়নি।ঘনিয়ে আসছে বিধানসভা নির্বাচন। ফের পুরসভার আশায় বুক বাঁধছেন চাঁচলবাসী।মিলবে কি পুরসভা।এই কথায় এখন প্রচলিত চাঁচলবাসীর মূখে।বিজেপির জেলা সম্পাদক দীপঙ্কর রাম বলেন, তৃণমূলের এই বক্তব্যের পর বিনিময়-প্রথা প্রচলিত কথা মনে করিয়ে দেওয়ার মতো। তৃণমূলের এমন মনোভাব হলে তা দুর্ভাগ্যের হয়ে উঠবে চাঁচলবাসীর মধ‍্যে। আর ওদের পুরসভা নিয়ে ভাবা উচিত না।মানুষই ওদের দুরে সরিয়ে দিবে।সাধারণ মানুষ তাদের উপর আস্থা রাখছে না এখন থেকেই।
    চাঁচলের বিধায়ক আসফি মেহেবুব বলেন,মানূষের সাথে তাদের লেনদেনের কথা ভোটের সময়ই প্রকাশ করে।

    সাংবাদিক বৈঠক মালদা জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র সুমলা আগরওয়াল(ছবি:উজির আলী)

    চাঁচল-১ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস কমিটির সভাপতি সচ্চিদানন্দ চক্রবর্তী অবশ‍্য বলেন,ঘোষনা যখন হয়েছে, সময়মতো পুরসভা অবশ্যই চালু হবে।তৃণমুলের আমলেই হবে।বিরোধীরা কিছু পারবে না। যা করবে তৃণমূলই করবে।ভোটের আগে অভিযোগ তুলছেন।চাঁচলের জন্য যা করেছেন তৃণমূলই করেছে বলে দাবী তৃণমূলের ব্লক সভাপতির।