|
---|
নতুন গতি নিউজ ডেস্ক। ঘটনা ২০১৭ সালের ২৮ শে আগস্ট সকালে নারকেলডাঙা থানায় একটি গুরুতর অভিযোগ জমা পড়ে।স্থানীয় একজন জানান, তাঁর নাবালিকা মেয়ে ও তার বান্ধবীকে অপহরণ করেছে জনৈক বিজয় সর্দার ও তার শাগরেদরা মিলে। অপহৃতা মেয়ে দুটির বয়স ১৪-১৫ বছর। অভিযোগকারীর আশঙ্কা ছিল,বিজয় ও তার শাগরেদরা মেয়ে দুটিকে দ্রুতই পাচার করে দেবে অন্যত্র। তারপর যৌন ব্যবসায় নামতে বাধ্য করবে।
অভিযোগ পেয়েই তদন্তে নেমে পড়ে নারকেলডাঙা থানার বিশেষ টিম। সোর্সদের খবর দেওয়া হয়। বিজয় ও তার শাগরেদদের খোঁজে প্রযুক্তিরও সাহায্য নেওয়া হয়।২৮ আগস্ট রাতেই শিয়ালদার কাছে একটি ডেরায় তল্লাশি চালায় নারকেলডাঙা থানার বিশেষ টিম। অপহৃতা দুই কিশোরীকেই উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার করা হয় বিজয় সর্দার এবং তার দুই শাগরেদ ধর্মেন্দ্র চৌধুরী ও আশা নাগকে।
বিজয় সর্দার বারুইপুরের এবং ধর্মেন্দ্র ও আশা কাঁচরাপাড়ার বাসিন্দা। এই ৩ জন দীর্ঘদিন ধরেই নাবালিকা পাচার-চক্রের সঙ্গে যুক্ত। পরিচয় বদলে নানা অছিলায় কিশোরী মেয়েদের সঙ্গে ভাব জমাত তারা। কখনও বিখ্যাত সব মিউজিকাল ব্যান্ডে নাচ-গানের সুযোগ করে দেওয়ার লোভও দেখাত। এইভাবে ক্রমে বিশ্বাস অর্জন করার পর নাবালিকা মেয়েগুলিকে তারা গোপনে ডেকে আনত বাড়ির বাইরে। কিছুদিন লুকিয়ে রাখত নিজেদের ডেরায়। তারপর সুযোগ বুঝে তাদের পাচার করে দিত নেপাল বর্ডারের কাছে উত্তরপ্রদেশের মহারাজগঞ্জে। সেখানে জোর করে যৌন ব্যবসায় নামতে বাধ্য করা হত সেইসব নাবালিকাদের।
ধৃতদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে উত্তরপ্রদেশ রওনা হয় এই কেসের তদন্তকারী অফিসার অ্যাডিশনাল ওসি, ইনস্পেকটর শরণ লামার নেতৃত্বে নারকেলডাঙা থানার বিশেষ টিম। সেখানে একাধিক ডেরায় তল্লাশি চালানো হয়। অবশেষে, ২০১৮ সালের ২৬ এপ্রিল, এই চক্রের অন্যতম চাঁই জিতেন্দ্র চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে নারকেলডাঙা থানার বিশেষ টিম। জিতেন্দ্রর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই বছরের ১৭ জানুয়ারি, উত্তরপ্রদেশ থেকেই গ্রেপ্তার করা হয় নাবালিকা পাচার-চক্রের মূল মাথা গণিকালয়ের মালিক আশরফি চৌধুরীকেও।
বিজয়, ধর্মেন্দ্র, আশা, জিতেন্দ্র ও আশরফি—৫ জনের বিরুদ্ধেই মামলা রুজু হয়। উপযুক্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ-সহ চার্জশিটও জমা দেওয়া হয় যথাসময়েই।
সেই কেসেরই রায় বেরিয়েছে। বিজয়, ধর্মেন্দ্র, জিতেন্দ্র ও আশরফির ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন মাননীয় বিচারক। আশা নাগ ওরফে প্রিয়াঙ্কা চৌধুরীর ক্ষেত্রে কারাদণ্ড বহাল থাকবে ৩ বছর। সেইসঙ্গে প্রত্যেকেরই ২০,০০০ টাকা জরিমানা। জরিমানা অনাদায়ে কারাদণ্ডের মেয়াদ বাড়বে আরও ৬ মাস। এছাড়াও, অপহৃতা কিশোরীদের মাথাপিছু ৪ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছেন মাননীয় বিচারক।
অপহৃতা কিশোরীদের উদ্ধারের পাশাপাশি অক্লান্ত পরিশ্রমে নাবালিকা পাচার-চক্রের সমস্ত চাঁইদেরই গ্রেপ্তার করেছেন এই কেসের তদন্তকারী অফিসার নারকেলডাঙা থানার তৎকালীন অ্যাডিশনাল ওসি, ইনস্পেকটর শরণ লামা। বর্তমানে তিনি নেতাজি নগর থানায় অ্যাডিশনাল ওসি-র দায়িত্ব সামলাচ্ছেন।