|
---|
নতুন গতি নিউজ ডেস্ক: তিনি মুখ্যমন্ত্রী, তিনিই রাজ্যের শাসক দলের সর্বময় নেত্রী। আর বাংলার ভোটে বিজেপিকে পর্যুদস্ত করতে তিনিই ছিলেন তুরুপের তাস। সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফের শুক্রবার বুঝিয়ে দিলেন দলের অন্যান্য নেতা-কর্মীর থেকে নিজেকে কোনও অংশে আলাদা ভাবেন না তিনি। কী ঘটল এদিন? সাড়ে তিন বছর পর মুকুল রায়ের তৃণমূলে প্রত্যাবর্তন নিয়ে এমনিতেই সাজো-সাজো ব্যাপার ছিল তৃণমূল ভবনে। দুপুর আড়াইটে নাগাদ মমতা ও মুকুল তৃণমূল ভবনে পৌঁছনোর পর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সহ বাকি তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক হয়। আর ঘণ্টা দুয়েকের সেই বৈঠকের পরই যোগদান মঞ্চে ওঠেন সকলে।
আর সেই যোগদান মঞ্চে শুরুতেই সকলের নজর কেড়ে নেন মমতা। সৌজন্যে একটি চেয়ার। বাকি নেতাদের জন্য প্লাস্টিকের চেয়ারে বসার ব্যবস্থা হলেও তৃণমূল নেত্রীর জন্য বিশেষ চেয়ার। কিন্তু সেই চেয়ারে বসতে অস্বীকার করেন নেত্রী। বাকিদের মতোই একই চেয়ার তাঁর জন্য ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দেন তিনি। শেষে মঞ্চে আনা হয় ওই একই চেয়ার।
রাজনৈতিক মঞ্চে, তাও আবার মুকুলের যোগদান মঞ্চে এই ঘটনা বিরাট কিছু নয়। কিন্তু ঘটনার অভিমুখ ও দলের সামনে মমতার নিজেকে তুলে ধরার জন্য এই চিত্রটি অত্যন্ত অর্থবহ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। বাকিদের মতো একই চেয়ারে বসতে চাওয়ার মধ্যে দিয়ে গোটা দলকে আসলে তিনি এই বার্তাই দিলেন, দলে সবাই সমান। তাঁর দলে কর্মীরাই যে সম্পদ, সে কথা বারবার বলেছেন মমতা। কিন্তু শুধু কথা নয়, বাস্তবে বারবার কাজেও তা করে দেখান নেত্রী। এদিন তারই পুনরাবৃত্তি হল আবার।
এ যদি হয় মমতার ‘সৌজন্য’, পিছিয়ে নেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর থেকে দলের সমস্ত প্রবীণ নেতাদের বাড়িতে গিয়ে প্রণাম করেছিলেন অভিষেক। যা অনেকের প্রশংসা কুড়িয়েছিল। এদিন যেন তারই আরেকটি রূপ দেখা গেল। যে মুকুল রায়ের সঙ্গে তাঁর সংঘাত বলে এতদিন শোনা যেত, সেই মুকুলকেই এদিন মঞ্চে ওঠার আগে নিজে এগিয়ে দেন অভিষেক। মুকুল ও শুভ্রাংশুর গলায় তিনিই পরিয়ে দেন উত্তরীয়।
এদিনও মুকুলকেও বলতে শোনা যায়, ‘‘অভিষেকের সঙ্গে আমার কোনও মতবিরোধ ছিল না।’’ একইসঙ্গে মমতাও তাতে যুক্ত করে দেন, ‘‘অভিষেকের সঙ্গে কখনওই মুকুলের মতবিরোধ ছিল না। কারও সঙ্গেই ছিল না।’’ অর্থাৎ, দলের অন্দরেই নীরবে সাম্যবাদের বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন তৃণমূল নেত্রী। আর এখানেই রাজ্য বিজেপিকে মাত দিচ্ছে তৃণমূল। অপরদিকে, এদিন সন্ধ্যায় অভিষেকও ট্যুইটে লেখেন, ‘মুকুল রায় ও শুভ্রাংশু রায়কে স্বাগত জানাচ্ছি। বিজেপিতে তাঁর কষ্টকর অধ্যায় কেটেছে। আর তা নয়। এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্ব ভারতবাসীকে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দিতে আমরা এক টিম হয়ে কাজ করব।’
এমনিতেই ‘লবিবাজি’তে ভুগছে বিজেপি। মুকুল দল ছাড়ার পর তা আরও বড়ভাবে প্রকাশ্যে এসেছে। ভোট পর্বে তা নানাভাবে সামনে এসেছিল। আসলে দলের মধ্যে মমতা যে ‘সাম্যবাদ’ ভাবনা ছড়িয়ে দিতে চাইছেন, তা বিজেপির পক্ষে এ রাজ্যে অন্তত সম্ভব হচ্ছে না। আর সেই কারণেই বাংলায় কার্যত কার্পেট বোম্বিং করেও মমতাকে মসনদ থেকে ব্যর্থ বিজেপি।