কেষ্টকে মধ্যমণি করেই বীরভূমে কোর কমিটির বৈঠক

 

     

     

    খান আরশাদ, বীরভূম:

    কেষ্টকে মধ্যমনি করেই বীরভূমের বোলপুরে কোর কমিটির বৈঠক হল। শনিবার রাজনৈতিক মহলের নজর ছিল বীরভূমের দিকে। কারণ কেষ্ট-কাজলের ঠান্ডা লড়াই সারা রাজ্যে রাজনৈতিক মহলে চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আজ সেই ঠান্ডা লড়াইয়ের যবনিকা হলো বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
    কেষ্ট কাজলের ঠান্ডা লড়াই দীর্ঘদিন চর্চায় থাকলেও উভয়ের কেউই এটা মেনে নিতে চাননি যে, তাদের মধ্যে কোন বিভেদ আছে। জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর জেলার বিভিন্ন অংশে সভা সম্মেলনী করেছেন অপরদিকে জেলা পরিষদ সভাধিপতি কাজল সেখও সভা সম্মেলন করেছেন কিন্তু এতদিন পর্যন্ত কেউই মুখোমুখি হননি। এ বিষয়ে কেউই মুখ খোলেননি এবং যা নিয়ে রীতিমত চর্চায় ছিল বীরভূমের রাজনৈতিক মহল।
    একটা সময় ছিল অনুব্রত মণ্ডল মানেই শেষ কথা। তিনি যে সিদ্ধান্ত নিতেন সেটাতেই শেষপর্যন্ত সিলমোহর পড়ত। জেলার দক্ষ সংগঠক হিসেবে অনুব্রত মণ্ডল বহু তরী পার করেছেন।
    অপরদিকে অনুব্রত মণ্ডল জেলে যাওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী বীরভূমে কোর কমিটি তৈরি করে দেন এবং সেই কোর কমিটির প্রধান ভূমিকায় অবতীর্ণ হন কাজল শেখ। এই কোর কমিটিই বীরভূমে নির্বাচনে জয় এনে দিয়েছে এবং তা আগের নির্বাচনের চেয়েও ভালো ফল করেছে। স্বভাবতই এই কোর কমিটি এখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সু-নজরে এসেছে।
    কিন্তু অনুব্রত মণ্ডল ওরফে কেষ্ট জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর জেলায় ফিরে এলে এই দুই নেতাকে একসঙ্গে কখনো মুখোমুখি হতে দেখা যায়নি।
    অবশেষে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে শনিবার বোলপুরে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে তৃণমূলের কোর কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয় এবং এই বৈঠকে কোর কমিটির সব সদস্যকেই উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকেও এই বৈঠকে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপরই রাজনৈতিক মহল চরম উৎসুক হয়ে নজর দেয় এই বৈঠকের দিকে।
    অবশেষে এই বৈঠকে অন্যান্য সদস্যদের পাশাপাশি উপস্থিত হন জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল ও জেলা পরিষদ সভাধিপতি কাজল শেখ।
    রুদ্ধদার একঘন্টা বৈঠকের পর তাঁরা বের হন। সিদ্ধান্ত হয় কোর কমিটির সকল সদস্যরা একসাথে মিলে কাজ করবেন। জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে এই কমিটির নতুন সদস্য হিসেবে গ্রহণ করা হয় এবং বীরভূমের কোর কমিটির সদস্য সংখ্যা ৬ থেকে ৭ এ দাঁড়ালো।
    কাজল শেখ বলেন বলেন অনুব্রত মণ্ডল আমার অভিভাবক, একথা আমি আগেও বলেছি এখনও বলছি। বাকি যে ঠান্ডা লড়াই এর গল্প, সেটা ফাঁদা হয়েছিল। এর মধ্যে কোন সত্যতা নেই।
    মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং যুবরাজ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যে নির্দেশ দেবেন, কোর কমিটি সেই ভাবেই আগামী দিনে কাজ করে যাবে। বিধায়ক তথা কোর কমিটির আহবায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী বলেন কোর কমিটির সদস্যদের মধ্যে কোন ভেদাভেদ নেই। সকলে মিলে একসাথে কাজ করে যাব। অনুব্রত মণ্ডল আমাদের সিনিয়র নেতা ও অভিভাবক। তাঁকে আমিও শ্রদ্ধা করি, কাজল শেখও শ্রদ্ধা করে।
    শনিবারের কোর কমিটির এই বৈঠকে সমস্ত সদস্যরাই খুশি বলে জানান কাজল শেখ ও বিকাশ রায় চৌধুরী।
    জানা গিয়েছে এই বৈঠকে কাজল শেখ বেশ কয়েকটি প্রস্তাব দেন এবং সে প্রস্তাবগুলি কোর কমিটির সমস্ত সদস্যরা মেনে নিয়েছেন।
    প্রতিমাসে কোর কমিটির একটি করে বৈঠক হবে। আগামী বৈঠক ডেপুটি স্পিকার আসিস ব্যানার্জীর দায়িত্বে রামপুরহাটে আগামী ১৫ই ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে।
    অনুব্রত মন্ডলের সভাপতিত্বেই কোর কমিটি কাজ করে যাবে বলে জানা গিয়েছে।