লকডাউনে হামের টিকা থেকে বঞ্চিত হয়েছে অসংখ্য শিশু, তাই করোনার মধ্যে বড় আকার ধারণ করতে পারে হাম

নতুন গতি, ওয়েব ডেস্ক : একে করোনায় রক্ষে নেই, তার উপর দোসর হয়ে বসেছে হাম (Measles)। সম্প্রতি একাধিক দেশে হাম ছড়িয়ে পড়ায় তৈরি হয়েছে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি। লকডাউনের (Lockdown) জেরে কার্যত গোটা বিশ্বজুড়ে অসংখ্য শিশু হামের টিকাকরণ (Measles Vaccine) থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আর এর ফলেই মাত্রা ছাড়িয়ে হাম আক্রান্তের সংখ্যা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমান, কোভিড পরিস্থিতিতেই মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে এই রোগ। এই রিপোর্ট কার্যত কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে চিকিৎসকদের।

     

    উল্লেখ্য, কোভিড পূর্ববর্তী বিশ্বে ক্রমশই নিম্নমুখী ছিল হাম রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। ভারত থেকেও কার্যত মুছে যেতে বসেছিল এই রোগ। কিন্তু, বিপত্তি ঘটাল মারণরোগ কোভিড। ২০২০ সালে লকডাউনের জেরে স্তব্ধ হয়ে পড়েছিল শিশুদের টিকাকরণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ইউ এস সেন্টার ফর ডিসিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের একটি যৌথ সাম্প্রতিক গবেষণা জানাচ্ছে, ২০২০ সালে ২২ মিলিয়ন শিশু হামের টিকার প্রথম ডোজ নেয়নি। যা ২০১৯ সালের পরিসংখ্যানের থেকে তিন মিলিয়ন বেশি। যা বিশ্বে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।

     

    ২০২০ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, ৮০ শতাংশ হাম কমে গিয়েছিল। কিন্তু, লকডাউন পর্বে ফের মারাত্মক ভাবে ছড়াতে শুরু করে এই রোগ। এদিকে, WHO-এর রিপোর্টে আরও জানাচ্ছে, গত প্রায় এক যুগ ধরে কমে গিয়েছে হামের পরীক্ষা। কম পরিমাণ টেস্ট এবং সচেতনতার অভাবে ফের নতুন করে ২৬টি দেশে মাথাচারা দিয়েছে এই রোগ। ফলে ২০২০ সালেই শুধুমাত্র ৮৪ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে হাম আক্রান্তের সংখ্যা। মার্কিন গবেষক কেভিন কেইন, যিনি এই গবেষণার সঙ্গে প্রথম থেকেই জড়িত, তাঁর কথায়, ‘কোভিড নিয়ে প্রতিনিয়ত কাজ করছেন চিকিৎসকরা। ফলে হাম নিয়ে ভাবনাচিন্তায় গাফিলতি এসেছে। অসংখ্য শিশু বিশ্বজুড়ে হামের টিকা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তবে আমাদের ভাবতে হবে আগামী প্রজন্মের জন্য। নতুন করে যাতে আরও শিশু আক্রান্ত না হয়, তার জন্য আমাদের দ্রুত হাম চিকিৎসার উপর নজর দিতে হবে। টেস্টিং বাড়াতে হবে।’

     

    হাম দূরীকরণে প্রত্যেক ঘরে ঘরে শিশুদের দুটি করো টিকার প্রয়োজন রয়েছে বলেই মনে করছেন গবেষকরা। কোভিড মহামারীর জেরে বিশ্বের ২৩টি দেশে অসংখ্য হাম চিকিৎসা সংক্রান্ত ক্যাম্প বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল বলে জানা যাচ্ছে। যার জেরে টিকা থেকে বঞ্চিত হয়েছে ৯৩ মিলিয়ন মানুষ। আবার নতুন করে সেই সচেতনতামূলক ক্যাম্পগুলি গড়ে তোলা প্রয়োজন বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

     

     

    বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইমিউনাইজেশন বিভাগের ডিরেক্টর কেট ও’ব্রায়েন মনে করেন, ‘২০২০ সালের শুরুতে সন্তোষজনক রিপোর্ট আসলে ছিল ঝড়ের আগের পূর্বাভাস। কোভিড ভ্যাকসিনের টার্গেট পূরণ করা প্রতিটি দেশের জন্যই খুব কঠিন। কিন্তু, তার জন্য যেন অন্য রোগের টিকাকরণে কোনও আপোস না করা হয়। নচেৎ ভয়ানক আকার ধারণ করতে পারে সাধারণ রোগগুলিও।