|
---|
বিমল মণ্ডল :পশ্চিমবঙ্গে করোনা রোগের প্রতিরোধে যেভাবে টেস্টিং হচ্ছে সেটা যথেষ্ট নয়। কমপক্ষে ৩/৪ গুণ বাড়াতে হবে।নইলে শুধু লক ডাউন করে সুফল পাওয়া যাবে না। গ্রিন জোন বলে সেখানে কোনো ঢিলেমি দেওয়া যাবে না।তাহলে ভয়ানক বিপদ হতে পারে।এই কথাগুলি বলেন জনস্বাস্থ্য আন্দোলনের চেনামুখ ডাঃ সিদ্ধর্থ গুপ্ত ও ডাঃ পুণ্যব্রত গুণ। ডক্টরস ডায়লগ নামে চিকিৎসকদের নিজস্ব ব্লগে শ্রমজীবী স্বাস্থ্য সংগঠনের পক্ষে এই দুই চিকিৎসক বলেন, যেভাবে শ্রমজীবী মানুষদের এই লক ডাউন এ বিপন্ন করে রাখা হয়েছে তা চরম অমানবিক। একই সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ সরকার যেভাবে চিকিৎসকদের হাত থেকে মৃতদের সার্টিফিকেট দেওয়ার অধিকার কেড়ে নিয়ে বিশেষ অডিট কমিটির মারফত দেওয়ার জন্য জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা দিয়েছেন তাতে চিকিৎসক সমাজ কি অপমান করা হয়েছে। আমাদের রাজ্যে জনপ্রতিনিধিরা চিকিৎসকদের দায়িত্ব দিতে না চেয়ে নিজেদের হাতে নিচ্ছেন।সারা পৃথিবী যখন এই মহামারী বিরুদ্ধে চিকিৎসক সমাজের উপর নির্ভর করছে, তখন এই রাজ্য চিকিৎসক সমাজের কাছ থেকে দায়িত্ব কেড়ে নিচ্ছে।
বর্তমান সারা পৃথিবী জুড়ে যে কোভিড-১৯ এর মারণ বাসা। তার জেরে লকডাউন এবং করোনার অতিমারি। এই দুই অভিজ্ঞতাসম্পন্ন চিকিৎসক সাধারণ মানুষ কিংবা সমস্ত চিকিৎসকদের সতর্ক থাকতে বলেছেন।
ডাঃ সিদ্ধার্থ গুপ্ত জানান যে- করোনা নিয়ে লকডাউন আর এই লকডাউনের ফলে অসংগঠিত শ্রমিক কিংবা সাধারণ মানুষজনের চরম দুর্গতি হচ্ছে । সরকার কিংবা কোনো স্বেচ্ছাসেবী দল এই বিপদে ত্রাণ কিংবা বিভিন্ন অসুবিধা দূর করে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনিই আরও জানান যে এই করোনা রোগ ধরা পড়লে তিন ভাবে পরীক্ষা করে নিতে হবে যেমন- ১.ব্যাকটেরিয়া কিংবা ভাইরাস শরীর থেকে ডিডেকশন করতে হবে। আসলে যে কোনো ইনফেকশন ডিজিজই হলো ভাইরাস। তাই এই পদ্ধতিতে প্রথম পরীক্ষা করতে হবে।
২.অ্যান্টিজেন যে বিপ্রতীপে থাকে অর্থাৎ ইউনিটি সিস্টেম এর মাধ্যমে যে প্রোটিন তৈরি হয় তার মধ্যে যে অ্যান্টিবডি থাকে সেটা ডিলিট করতে হবে।এই পরীক্ষার মাধ্যমেও করোনা নির্ণয় করা যেতে পারে।
৩.ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া মানে DNA ও RNA থাকবে। ভাইরাস যেহেতু জীবিত, সেহেতু DNA ও RNA আছে। ভাইরাসের কোনো কোষ থাকে না। তাই করোনা ভাইরাসেও RNA আছে। আর সেই RNA কে যদি বের করে আনা যায় তাহলে সংক্রমণ হওয়ার আশা কম।
ডাঃগুপ্ত আরও জানান যে আরটিপিসিআর এর সঙ্গে প্রি টেস্ট প্রোবাবিলিটি টেস্ট করলে তবে সঠিক ফল আসার সম্ভাবনা। প্রি টেস্ট প্রোবাবিলিটি অর্থাৎ রোগীর শারীরিক উপসর্গ, রেডিয়োলজিক্যাল পরীক্ষার রিপোর্ট, রক্তে লিম্ফোপেনিয়ার সংখ্যা এই সব কিছুর সঙ্গে আরটিপিসিআর কে মেলাতে হবে। তা না হলে রিপোর্ট ভুল আসতে পারে। তাঁর আরও জানান যে- কারও দেহে কোভিডের মতো উপসর্গ দেখা গেলে ৪/৫ দিনের মাথায় লালা রসের নমুনা সংগ্রহ করা উচিৎ। তা ঠিকঠাক কোল্ড চেন রক্ষা করে পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া ও চার ঘণ্টার মধ্যে ল্যাব পরীক্ষা করাটাও জরুরি।
ডাঃ পুণ্যব্রত গুণও বলেন যে পুলীন পদ্ধতিতে করোনা টেস্টিং করা যেতে পারে। এই পদ্ধতিতে জার্মানি বহু ভাইরাস থেকে সাফল্য পেয়েছে। ডঃ গুপ্ত জানান যে- পুলীনের ক্ষেত্রে একসঙ্গে ৫টি পরীক্ষা করা যেতে পারে। এলাকাভিত্তিক যে তিনটি জোন ভাগ করা হয় তা হলো অরেঞ্জ জোন, রেড জোন, গ্রীনজোন। এখানে অরেঞ্জ ও গ্রীনজোনের ক্ষেত্রে পুলীন পদ্ধতি ব্যবহার করা যায়। রেড জোনের ক্ষেত্রে তা করা হয় না। তবে খেয়াল রাখতে হবে যে আমাদের দেশে কিংবা রাজ্যে যে হারে পরীক্ষা করা হচ্ছে তা যথাযথ নয় আরও এই টেস্টিং বাড়াতে হবে শুধু লকডাউন করে লাভ হবে না। যদি না স্বাস্থ্য ভবন থেকে এই ভাবে ৩/৪ গুণ এই রোগের টেস্ট না করা যায়। এতে সাধারণ মানুষের ভীষণ ভাবে ক্ষতি হবে এই লকডাউন অবস্থায়।
২৪শা মে থেকে আজ পর্যন্ত দেশে যে লকডাউন চলছে তাতে সাধারণ মানুষ ভালো নেই। মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের অবস্থাও সংকটজনক।এই লকডাউনে বয়স্করা সারাদিন বাড়িতে থেকে টিভি দেখে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একটানা করোনার খবর তাতে এই ধরনের লোকেরা ভয় পায়, আতঙ্কে নানান অসুখও দেখা যায়।
আর যারা দিন আনে দিন খায় তাদের অবস্থাও ভয়াবহ। অর্ধেকদিন তারা অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। সাধারণ মানুষের জন্য যে রেশন ব্যবস্থা তা সেখানেও দুর্নীতি। অনেকে রেশন পাচ্ছেন অনেকে পাচ্ছেন না সেটা শহর কিংবা গ্রামে প্রতিটি জায়গায় একই ছবি দেখা যায়। তবে শহরের কাছাকাছি বস্তি এলাকা কিংবা ঘেঞ্জি এলাকায় কিছু সেচ্ছাসেবী সংস্থা রাস্তায় নেমেছে বিভিন্ন ভাবে তারা গরীব মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। কেউ কেউ রান্না তৈরি করে নিয়ে এসে দিচ্ছেন। আবার কেউ শুকনো খাওয়ারের প্যাকেট দিচ্ছেন। এই ভাবে এই বিপদের সময় মানুষ কিন্তু মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তবে জেলার গ্রামগুলোতে এইরকম সাহায্য পাচ্ছে না ফলে তারা খুব বিপদের মধ্যে আছে। সত্যি কথা বলতে মানুষ কিন্তু ভালো নেই এই লকডাউনের বাজারে।
ডঃ গুপ্ত ও ডঃ গুণ জানান যে ভাবে চিকিৎসকদের হাত থেকে মৃত সার্টিফিকেট দেওয়ার অধিকার কেড়ে নিয়ে অডিট কমিটি গঠন করেছেন জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে। এটা চিকিৎসকদের অপমান বলে মনে হয়েছে। এখানে একটা প্রশ্ন বারবার আসে যে এই কমিটি গঠন করে সরকার কী মৃত্যুর সংখ্যা কম দেখাতে চাইছেন? তবে কেন?
এর জন্য তো সরকারকে কেউই দায়ী করছেন না । তাহলে কেন এই চিকিৎসকদের হাত থেকে এই দায়িত্ব কেড়ে নিচ্ছেন?
সমস্ত চিকিৎসা মহলে চাপা গুঞ্জন তৈরি হয়েছে তাই রাজ্যে ৮টি ডাক্তার সংগঠন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ১২ দফা দাবি জানিয়ে তাদের দায়িত্ব ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলেছেন। তবে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী এ বিষয় নিয়ে কোনো রকম প্রতিক্রিয়া দেখান নি। সবশেষে ডাঃ গুপ্ত এবং ডাঃ গুণ বলেন যে যাঁরা প্রাইভেট প্রাক্টিস করেন তাদের আজ চেম্বার বন্ধ সাধারণ রোগীদের ক্ষেত্রে হাসপাতাল কিংবা নার্সিংহোমে জায়গা নেই কারণ সেখানে শুধু করোনা রোগী। তাই অন্যান্য রোগীরাও ভারী বিপদে আছেন। তবে শহরে ৯ টি হেলথকেয়ারের মধ্যে ৩টি খোলা আছে। সেখানে মধ্যবিত্তরা ফোন করে মোটামুটি চিকিৎসার সুযোগ পাচ্ছেন। কিন্তু গ্রামের ক্ষেত্রে তেমন সুযোগ নেই । তবে তারা গ্রামের হাতুড়ি ডাক্তারের দ্বারা উপকৃত হচ্ছে।
তবে যে সমস্ত ডাক্তার শুধু প্রাইভেট চেম্বার করেন তাঁরা এই লকডাউনে ভীষণ বিপদের মধ্যে আছেন। কারণ এই সময়ে তাদের চেম্বার বন্ধ রুজিরোজগারও নেই। তাই তাঁদের কথাও সরকারের এই মুহূর্তে ভাবা উচিৎ।
ডাঃ গুপ্ত ও ডাঃ গুণ এও বলেন যে সমস্ত চিকিৎসকদের যে কমিটি আছে তাতে সরকার যাতে হস্তক্ষেপ না করে তাঁদের মতো করে চিকিৎসা করার সুযোগ দেন। তাতে অনেক বেশি মানুষ উপকৃত হবে। যেখানে চীন, আমেরিকা, ফ্রান্স, ইতালি চিকিৎসকদের সম্পূর্ণ দায়িত্ব দিয়েছেন। আর আমাদের রাজ্যে তা না করে জনপ্রতিনিধিরা চিকিৎসকদের দায়িত্ব কেড়ে নিচ্ছেন। ফলে চিকিৎসকদের মধ্যে অভিমানের সুর লক্ষ্য করা যায়। বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠন এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
ডাঃ গুণ আর ডাঃ গুপ্ত আরও জানান আরোগ্য সেতু ও আয়ুধ গাইড লাইনের মধ্য দিয়ে এই করোনা রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা করার উপায় কেন্দ্রীয় সরকার দেখিয়েছেন । তাই আরোগ্য সেতুর মধ্য দিয়ে তা বোঝা যায় যে কাকে, কি ভাবে, কোথায় রাখলে করোনা চিকিৎসা করা যাবে।
তথ্যসূত্র- বার্তা সাম্প্রতিক