|
---|
লেখক:মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ, চাঁচল, মালদা
পৃথিবী তার বুকে সেই আবহমান কাল ধরে বিভিন্ন জাতি, গোষ্ঠী,ধর্ম, বর্ন,ভাষা প্রভৃতি কে স্বমহিমায় স্থান দিয়েছে।প্রত্যেক ধর্মালম্বীদের নিজস্ব আচার,ব্যাবহার, আইন-কানুন,রিতি-নীতি আছে।প্রতিটি জাতির নিজস্ব সংস্কৃতি আছে।পৃথিবীর প্রতিটি জাতি নিজ সংস্কৃতি কে ভালোবাসে এবং তা উচ্চ আসনে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। মুসলিম বিশ্বের নিজ সংস্কৃতির উপর অনীহা অধঃপতনের ইঙ্গিতবাহক । সংস্কৃতি মানুষ কে আদর্শবান করে তুলতে পারে আবার আদর্শহীন বা নিকৃষ্ট ও বানাতে পারে।
পৃথিবীর ইতিহাসে উঁকিমারলে পরিলক্ষিত হয় যে খুব কম সংখ্যক জাতি তার নিজস্ব সংস্কৃতি ভুলে অন্যের সংস্কৃতি কে নির্লজ্জের মতো গ্রহণ করেছে।কিন্তু মুসলিম জাতি কি আজ তার সমস্ত সংস্কৃতি প্রায় ভুলতে বসেনি?মুসলিম জাতি কি নির্লজ্জের মতো খ্রিস্টান, ইহুদি ও হিন্দুদের সংস্কৃতিতে দিন দিন ক্রমশ ঝুঁকে পড়ছে না। সহজাত সংস্কৃতির মূল্য না দিয়ে মুসলিম বিশ্ব কি আজ মেরুদন্ডহীন অনাথ জাতি’তে পরিণত হচ্ছে না?
মনীষীগন সংস্কৃতির সংজ্ঞা বিভিন্ন ভাবে দিয়েছেন যেমন কেউ বলেছেন “All The Arts,Beliefs, Characteristics , social institution of a community or race etc,” আবার কেউ বলছেন “culture is what man has created material and non-material”
বিভিন্ন ধর্মের ঠিকাদাররা নিজ ধর্মের সংস্কৃতি -কে তুলে ধরতে নানান ধরনের আচার অনুষ্ঠান শুরু করেছেন ।ফলস্বরূপ পাচ্ছেন অনেক অন্ধ-অনুকরণীয় মানুষকে, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই মুসলিম নামধারী বুদ্ধিজীবীদের অংশ। বিশেষ করে খ্রিস্টান, হিন্দু এবং ইহুদী সম্প্রদাযের আচার-অনুষ্ঠান দেখা গেলে তাতে নামধারী কিছু অশিক্ষিত মুসলিম যুবকের উপস্থিতি বিশেষ পরিলক্ষিত হয়।
“ধর্ম যার যার ,উৎসব সবার ” নামের উক্তিকে হাতিয়ার করে কিছু শিক্ষিত মুসলিমদেরও দেখা যায় তাদের ভিড়ে। তাঁরা নিজেদেরকে ধন্য মনে করেন প্রগতি-প্রোন্থীদের অনুসরণ করে। প্রগতিশীল চিন্তাবিদ,নাস্তিক, মার্ক্সবাদী, সমাজবাদী, উচ্চ পদস্থ তথা মুসলিম নামধারী প্রগতিপন্থীরাই আজ সমাজের আদর্শের অন্যতম উৎস। এদের অন্ধ অনুসারীরা নির্দ্বিধায় এদের অনুসরণ করে এবং নিজ সংস্কৃতিকে কুরবানী করতে পিছপা হয় না।
প্রগতি-পন্থীরা আজ মুসলিম বিশ্বে নতুন বান ডেকে এনেছেন। পৃথিবীর প্রতিটি জাতির নিজস্ব সালাম, আদাব, শিষ্টতা, সম্ভাষণ, সম্মান প্রদর্শন দেখা যায় নিজ ভাষাতে । আজ মুসলিম বিশ্বের প্রগতি-পন্থীরা পশ্চিমা সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী।তাই একে অপরের সাক্ষাৎ কালে নির্দিধায় বলে উঠে – Good morning, Good night, Good day,Tata, bye bye etc.। Good Morning শব্দ কে ভাঙলে পাওয়া যায় Good অর্থাৎ ভালো এবং morning অর্থাৎ সকাল শব্দ দুটির সমন্বয় করলে মানে দাঁড়ায় সু প্রভাত বা ভালো সকাল ।নামধারী মুসলিম প্রগতি-পন্থীরা একটু ভেবে দেখেছেন কি এর অর্থ দাড়াচ্ছে? বিশেষ উল্লেখ্য যে আরবের আইয়ামে জাহেলিয়াত যুগে good morning -এর স্বরূপ অর্থাৎ “সাব্বাল খায়ের” বলা হত।
“সাব্বাল খায়ের” বা good morning এর এক সুদীর্ঘ ইতিহাস পরিলক্ষিত হয়।সংক্ষেপে বললে বলা যায় যে মহান আল্লাহ তার পাপী অবাধ্য বান্দাদের উপর বিভিন্ন স্থানে এবং সময়ে রাত্রিকালীন আজাব অর্থাৎ ঝড়, শিলাবৃষ্টি,সাইক্লোন, ভূমিকম্প,রক্ত বৃষ্টি ইত্যাদি দিয়ে তাদের বিলীন করতেন। রাত্রে বিপদ থেকে যাঁরা বেঁচে যেত তারা সকালে উঠে একে অপরকে”সাব্বাল খায়ের” অর্থাৎ “Good Morning” বলে সম্ভাষণ করতো।অর্থাৎ অর্থ করলে এই দাঁড়ায় যে সকাল টা খুবই ভালো। আরবি “সাব্বাল খায়ের” এবং ইংরেজি good morning শব্দ দুটির অর্থ একই তবে কেন নিজ সংস্কৃতি ভুলে “সাব্বাল খায়ের”না বলে good morning বলা, তা আজও বোধগম্য হল না। কিছু মুর্খ মুসলিম প্রগতিশীল আবার বলবে good morning বললে মুসলিম সংস্কৃতি নষ্ট হয় কিভাবে? বিশেষ উল্লেখ্য যে আরবি ভাষা কে ইসলামে মর্যাদা দিয়েছে তা অমান্য করা মূর্খতা ছাড়া আর কি? নামাজ, রোজা ,কালেমা ইত্যাদি কাজ কি আরবি ছাড়া হয়? তবে কেন সংস্কৃতিতে আরবির পরিবর্তে ইংরেজির উপস্থিতি? এটা কি মুসলিম সম্প্রদায়ের লজ্জার বিষয় নয়?
তবে মুসলিম প্রগতি-পন্থীদের মনে প্রশ্ন জগতে পারে যে পশ্চিমা প্রগতি-পন্থীদের good morning, good night, good noon, tata, bye bye এর পরিবর্তে তাদের করনীয় কি? এ বিষয়ে বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ হাদিসের কথা উল্লেখ্য যে উত্তম ব্যক্তি তাঁরাই যাঁরা একে অপরকে দেখে সালাম দেবে অর্থাৎ good morning, night, evening না বলে “আসসালামু ওয়ালাইকুম সালাম” অর্থাৎ আপনার উপর সালাম অর্থাৎ শান্তি বর্ষিত হোক।প্রতিটি মুসলিম যুবক-যুবতি কে এগিয়ে আসতে হবে নির্ভেজাল সংস্কৃতির উপর। জীবনের প্রতিটি অঙ্গনে মুসলিম সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে হবে। পশ্চিমারা নিজেদের ভেজাল মিশ্রিত সংস্কৃতির ব্যাধি ছড়াতে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে। এই ব্যাধি থেকে বাঁচার উপায় হল মুসলিমদের নিজ নির্ভেজাল সংস্কৃতির উপর বিশ্বাস স্থাপন ও মান্যকরা আবশ্যিক।