আনা হল না মেয়ের জন্মদিনের গিফট, মনিপুর জঙ্গি হানায় শহিদ হয়ে মুর্শিদাবাদের গ্রামে ফিরছেন শ্যামল

জৈদুল সেখ, খড়গ্রাম: বাড়িতে আট বছরের মেয়েকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে স্ত্রীর সুপর্ণা দাস কে শেষ ফোন করেছিল শ্যামল দাস। বলেছিল মেয়ের জন্মদিনের গিফট নিয়ে খুব কিছুদিনের মধ্যেই বাড়ি ফিরবেন। কিন্তু
শনিবার সকালে মণিপুরের জঙ্গি হানায় নিহত বাংলার শ্যামল দাস।

    মুর্শিদাবাদের কান্দি মহকুমার খড়গ্রাম ব্লকের কীর্তিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের নগর গ্রামের বাসিন্দা শ্যামল দাস ছিলেন অসম রাইফেলসেরই কর্মী। মণিপুরের চূড়াচাঁদপুরে জঙ্গি হামলার সময় শ্যামল ছিলেন কমান্ডিং অফিসার বিপ্লব ত্রিপাঠীর গাড়িতে। বিপ্লব জঙ্গিদের গুলিতে নিহত হন। পরে গাড়িতে থাকা বিপ্লবের স্ত্রী এবং সন্তানকেও গুলি করে খুন করে জঙ্গিরা। শ্যামল ছিলেন ওই গাড়ির চালকের আসনে। জঙ্গিরা তাকেও গুলি করে মারে। শনিবার রাতে কীর্তিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের নগরে শ্যামল দাসের বাড়িতে খবর পৌছতেই গ্রামজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে।

    রবিবার কীর্তিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের নগর গ্রামে শ্যামল দাসের বাড়িতে দেখা যায় চারিদিকে শুধু কান্নার আওয়াজ। স্বামীর দু’দিন আগেকার ফোনের বার্তালাপ বারবার মনে পড়ছে শহিদের স্ত্রী সূপর্ণা দাসের। তিনি জানিয়েছেন, দু’দিন আগেই একমাত্র মেয়ে দিয়া দাসের জন্মদিন ছিল। মেয়েকে হ্যাপি বার্থডে জানিয়ে শেষ ফোন করেছিল ওর বাবা। জানিয়েছিলেন, খুব শিগগির হ্যাপি বার্থ ডের গিফট নিয়ে ফিরবেন গ্রামে। কিন্তু শনিবার রাতে জঙ্গি হানায় শ্যামলের মৃত্যুর খবর আসে গ্রামে হতবাক স্ত্রী সহ পরিবার।

    শ্যামল দাসের বাবা ধীরেন দাস জানিয়েছেন, আমরা খুবই দুস্থ পরিবারের। আমার দুই ছেলে। ছোট ছেলে কিছুদিন আগেই মারা গেছে। বড় ছেলে দেশরক্ষায় আসাম রাইফেলে কর্মরত ছিল মণিপুরে। ২০০৯ সালের নভেম্বর মাসে বড় ছেলে শ্যামল যোগদান করে অসম রাইফেলসে দীর্ঘ ১১ বছর রয়েছেন সেনাবাহিনীতে। ছেলের মূল লক্ষ্য ছিল বড় হওয়া। জঙ্গিদের সাথে বহুবার মুকাবিলা হয়েছে, যখনই ছেলে এসেছে বাড়ি, তখনি শুনিয়েছেন সেইসব কথা। কিন্তু এবার ওই জঙ্গিদের হাতে সব শেষ হয়ে গেল। তবে বৃদ্ধ বাবা বলছেন, “ছেলের এই মৃত্যুতে আমি শোকাহত নয়। কারণ আমি মনে করি আমার ছেলে শহীদ হয়েছেন। আর শহিদের প্রান সকলের ঊর্ধ্বে। জঙ্গিরা কাপুরুষ। সরকারের কাছে অনুরোধ যেন ওদের খুঁজে বের করে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়।”

    গতকাল সন্ধের পর থেকেই থমথমে মুর্শিদাবাদের খড়গ্রামে শ্যামল দাসের গ্রাম। এদিন সকালে স্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছিল। সূপর্ণাকে বলেছিলেন কাজ থেকে ফিরে ফোন করবেন। সেই সুযোগ আর আসেনি। স্বামীর মৃত্যু সংবাদ শুনে একেবারে নিশ্চুপ হয়ে গিয়েছেন সূপর্ণা।

    এদিন সকাল থেকেই মণিপুরের জঙ্গি হামলায় নিহত শ্যামল দাসের বাড়িতে সমবেদনা জানাতে কাতারে কাতারে গ্রামবাসী ভিড় জমিয়েছিলেন। সকলকে শহিদ শ্যামল দাসের মা বলেন – ছেলের রেখে যাওয়া স্মৃতির কথা। তিনি জানিয়েছেন, পুজোর আগেই ছেলে বাড়ি ফিরে ছিল। কিন্তু দুর্গাপুজোর পঞ্চমীর দিন কর্মস্থলে ফিরে যান। তখন বলে গেছিলেন, অঘ্রান মাসে জমির নতুন ধানের নবান্ন উৎসবে অবশ্যই ফিরবেন। কিন্তু তার আগেই ছেলের শহিদের খবর মেলে। শ্যামল দাসের অকাল মৃত্যুর খবর পৌঁছাতে এলাকা তথা মুর্শিদাবাদ জুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। পরিবারকে সমবেদনা জানাতে উপস্থিত হয়েছেন সমাজসেবী থেকে বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গ।