|
---|
ফারুক আহমেদ: চলে গেলেন কথা সাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহ রবিবার রাত ১১টা ২৫ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন৷ মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর ৷ দীর্ঘ দিন তিনি অসুস্থ ছিলেন। কিছুদিন আগেই কোরানাকে জয় করে ঘরে ফিরেছিলেন। রবিবার একটি বেসরকারি হাসপাতালে বুদ্ধদেব গুহ প্রয়াত হলেন।
বুদ্ধদেব গুহ একজন ভারতীয় বাঙালি লেখক। তিনি মূলত বন, অরণ্য এবং প্রকৃতি বিষয়ক লেখার জন্য পরিচিত। তার স্ত্রী প্রখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত গায়িকা ঋতু গুহ। বহু বিচিত্রতায় ভরপুর এবং অভিজ্ঞতাময় তার জীবন। ইংল্যান্ড, ইউরোপের প্রায় সমস্ত দেশ, কানাডা, আমেরিকা, হাওয়াই, জাপান, থাইল্যান্ড ও পূর্বআফ্রিকা তার দেখা। পূর্বভারতের বন-জঙ্গল, পশুপাখি ও বনের মানুষের সঙ্গেও তার সুদীর্ঘকালের নিবিড় ও অন্তরংগ পরিচয়।
১৯৭৭ সালে আনন্দ পুরস্কারে সম্মানিত হন বুদ্ধদেব গুহ। তার প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থের নাম ‘জঙ্গলমহল’। তাঁর সৃষ্টি ‘বাবলি’, ‘মাধুকরী’, ‘কোজাগর’, ‘হলুদ বসন্ত’, ‘একটু উষ্ণতার জন্য’,’কুমুদিনী’, ‘খেলা যখ’ এবং ‘ঋজুদা’ বাংলা কথাসাহিত্যের জগতকে সমৃদ্ধ করেছে তুলনারহিত আঙ্গিকে। তাঁর রচিত ‘বাবা হওয়া’ এবং ‘স্বামী হওয়া’- এ দুইয়ের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছে পুরস্কারজয়ী বাংলা চলচ্চিত্র ‘ডিকশনারি’। শিশু সাহিত্যিক হিসেবেও তিনি ছিলেন জনপ্রিয়। তার নানা রচনার দুই জনপ্রিয় চরিত্র হলো ঋজুদা এবং ঋজুদা’র সহযোগী রুদ্র।
বাংলার উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু তাঁর ফেসবুকে ওয়ালে লিখেছেন “বুদ্ধদেব গুহ
জন্ম : ২৯ জুন, ১৯৩৬
মৃত্যু : ৩০ আগষ্ট, ২০২১
বিশিষ্ট সাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহ-র প্রয়াণে আমি গভীরভাবে শোকাহত। সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের ছাত্র প্রয়াত বুদ্ধদেব গুহর অনবদ্য লেখনী মননশীল পাঠকদের হৃদয়ে চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে। তিনি পেশাগত ভাবে একজন সফল চ্যাটার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট হলেও সাহিত্যই ছিলো তাঁর প্রিয় বিষয়। সমকালীন বাংলা সাহিত্যে নিজের জায়গা গড়ে নিয়েছিলেন বুদ্ধদেব। প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ ‘জঙ্গল মহল’-এর পর থেকে ‘মাধুকরী’, ‘অববাহিকা’, ‘বাবলি’ – একের পর এক উপন্যাস উপহার দিয়েছেন পাঠকদের। কিশোর সাহিত্যেও ছিল তাঁর অবাধ বিচরণ। তাঁর সৃষ্ট ‘ঋজুদা’ বা ‘ঋভু’র মতো চরিত্র আকৃষ্ট করে রেখেছে কয়েক প্রজন্মের বহু কিশোর-কিশোরীর মনকে। ‘সবিনয়ে-নিবেদন’, ‘চাপরাশ’ প্রভৃতি তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনা। আমার সাম্প্রতিকতম ছবি ‘ডিকশনারি’ ওনার ‘বাবা হওয়া’ এবং ‘স্বামী হওয়া’ দুটি ছোট গল্পর আধারে তৈরি, ইতিমধ্যেই সমাজের বিভিন্ন স্তরে বহুল চর্চিত। ১৯৭৬ সালে তিনি ‘আনন্দ-পুরস্কার’ পান, এবং পরবর্তীকালে ‘শিরোমনি-পুরস্কার’ এবং ‘শরৎ-পুরস্কার’ সম্মানে ভূষিত হন। পরবর্তী প্রজন্মের সাহিত্যিকদের কাছে তিনি ছিলেন অগ্রজপ্রতিম।
তাঁর প্রয়াণ বাংলার সাংস্কৃতিক জগতে এক অপূরণীয় ক্ষতি। তাঁর আত্মীয়-পরিজন ও অনুরাগীদের আন্তরিকg সমবেদনা জানাই।”
কবি সুবোধ সরকার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন ” লালাদা আর নেই ভাবতে পারছি না।
নক্ষত্রের জন্ম হয় কম। নক্ষত্রের মৃত্যু হয় বেশী।
তিনি যেভাবে নারী , নীহারিকা ও অরণ্যকে অক্ষর দিয়েছিলেন সেভাবে কেউ দেননি। ম্যাকল্যাক্সিগঞ্জ বিহারে ছিল না।ছিল আমাদের হৃদয়ে।
নক্ষত্র নক্ষত্রকে সম্মান করে, ঈর্ষা করে। তিনি দুটোই পেয়েছেন। লেখক বুদ্ধদেব গুহর তুমুল জনপ্রিয়তাকে ক্লিষ্ট করে লাভ নেই,আতরের গন্ধ কমানো যায় না।
আমার প্রণাম।”