কার হাতে গনতন্ত্র সুরক্ষিত ? কাকে করবেন প্রধানমন্ত্রী : ইমতিয়াজ আহমেদ মোল্লা।

সাকিব হাসান,দঃ ২8 পরগনা: চারিদিকে যখন গণতন্ত্রের লড়াই,কাকে করবেন প্রধানমন্ত্রী ?এমনই এক বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল পার্টির সভাপতি ইমতিয়াজ আহমেদ মোল্লা। তিনি বলেন বিহারে মিমের ৫ টা বিধায়ক।
তেলেঙ্গানায় মিমের ৭ টা বিধায়ক।
মহারাষ্ট্রে মিমের ২ টি বিধায়ক।
কেরালায় মুসলিম লিগের ১৫ টা বিধায়ক। তামিলনাড়ুতে মুসলিম লিগের ৪ টি বিধায়ক। আসামে ইউ ডি এফ এর ১৬ টা বিধায়ক।
মিমের লোকসভায় ২ টি সাংসদ।
মুসলিম লিগের লোকসভায় ৩ টি সাংসদ।
মুসলিম লিগের রাজ্যসভায় ১ টি সাংসদ।
ইউ ডি এফের লোকসভায় ১ টি সাংসদ। এছাড়াও আরো অনেক ছোট্ট ছোট্ট দল বিভিন্ন ভাবে রাজনীতি করছে বিভিন্ন রাজ্যে। তাদের উপর সেই রাজ্যগুলিতে শাসকদলের দ্বারা নির্মম অত্যাচার হচ্ছে এমন খবর আমার কাছে নেই।
আমাদের রাজ্যের নাম পশ্চিমবঙ্গ।স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত এরাজ্যে সিপিএম কংগ্রেস তৃনমূল এর নামে উচ্চবর্গের লোকেদেরই রাজত্ব চলেছে। এখন বিজেপি নামক যে ভয়ঙ্কর শক্তিটি উঠে এসেছে শাসক দলের কৃপায়, সেটিও উচ্চবর্গের। স্বাধীনতার পর দলিত মুসলিম আদিবাসীদের নেতৃত্বে তেমন কোনো দল বাংলায় মাথাচাড়া দিতে পারেনি। মাঝে ১৯৭১ সালে হটাৎ মুসলিম লিগ ৭ টা বিধায়ক নিয়ে অজয় মুখার্জির যুক্তফ্রন্ট সরকারে তিনটি মন্ত্রী ছিনিয়ে নিয়ে চমক সৃষ্টি করেছিল। এখানেই শুরু আর এখানেই শেষ।
তারপর তাদের নেতাদের মিশা আইনে গ্রেফতার করে বা লোভ দেখিয়ে কিনে নিয়ে, মুসলিম লিগকে শেষ করে দেওয়া হল। মরহুম হাসানুজ্জামান সাহেব মারা যাবার পর মুসলিম লিগের শেষ প্রদীপটিও চিরতরে নিভে গেল। তারপর আর কেউই দলিত মুসলিম আদিবাসীর কথা বলার জন্য বিধানসভায় পৌঁছাতে পারেনি।
অনেক বছর পর এবার দলিত মুসলিম আদিবাসীর কথা বলে আব্বাস সিদ্দিকী ঝড় তুললেও, শেষ পর্যন্ত নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না। যারা ৩৪ বছর ধরে বাংলার মানুষের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছিল তাদের উদ্ধার করার দায়ীত্ব নিয়ে,নিজেই নিজেকে নিজের সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে নিল। তবুও একটা প্রদীপ জ্বালতে সফল হয়েছে যার নাম নৌসাদ সিদ্দিকী দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ভাঙড়ের বিধায়ক।
রাজ্যে তৃনমূল আর বিজেপি ছাড়া আর কিছু নেই,যদি এই নৌসাদ সিদ্দিকীকে বাদ দিই। রাজ্যে মূল লড়াই ছিল বিজেপির বিরুদ্ধে। যেটা কেবলই মুখের কথা। বিজেপি করাটা এই রাজ্যে সবথেকে সুবিধাজনক নিরাপদ কাজ। পয়সা প্রচুর প্রশাসনেরও কোনো চাপ নেই। আজ স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী বিজেপি নেতাদের বাড়ি ফেরাতে উদ্দ্যোগী হয়েছেন। আর উল্টোদিকে আই এস এফ নেতা কর্মিদের বাড়িছাড়া করার দায়িত্ব দিয়েছেন সওকাত মোল্লার মত মুসলিম গুন্ডাদের।
রাজ্যের একমাত্র বিধায়ক নৌসাদ সিদ্দীকি বঞ্চিত সমাজের প্রতিনিধিত্ব করবে বলে দাবী করছে, তাকে তার নির্বাচনি ক্ষেত্রেই খুন করতে তাড়া করা হচ্ছে পুলিশের সামনে। রাজ্য সরকার বা তার পুলিশ তাকে সুরক্ষা দিতে অক্ষম। এনার হাতেই পুরো রাজ্য, এনাকেই অনেকের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দেখতে চান। এই লজ্জা কোথায় লুকাবো ? এনিই নাকি একমাত্র মোদীর বিকল্প। ইনিই মোদীর শুন্য স্থান পুরন করতে পারেন। এক্সেলেন্ট চয়েজ,এক্কেবারে ম্যাচিং পেয়ার।
ক্যানিং পূর্বের অত্যাচারের কথা রোজ শুনছি কিন্তু কিছু করার নেই। মানুষ থানায় অভিযোগ করতে গেলে পুলিশ তাকেই ফোন করে বলে, তোমার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে এসেছে কি করবো ? বেচারা বাড়ি ফেরার আগেই বাড়িতে ভাংচুর শুরু হয়ে যায় অনেকে ডি এম, এস পির কাছে জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি। বরঞ্চ অত্যাচারের সীমা আরও ছাড়িয়ে যায়। কার হুকুমে এত অত্যাচার হচ্ছে সকলের ভাবতে হবে।
এখন তো সব দোষ আব্বাসের ঘাড়ে চাপানো হচ্ছে, যে যত গন্ডোগোল সব আব্বাসের জন্য হচ্ছে। হ্যা অত্যাচার সহ্য না করতে পেরে অনেকেরই আব্বাসের প্রতি ক্ষোভ বাড়ছে, ভালোবাসা কমছে, তারা হয়তো মনে মনে ভাবছে বা বলছে আর আব্বাসের কথায় থাকা যাবে না। ঠিক এটাই চায় শাসক দল,যাতে আগামী প্রজন্মও রাজনীতির কথা মনে না আনে। আচ্ছা প্রধানশত্রু বিজেপিকে মুছে দিতে এমন কিছু করা হচ্ছে কি ?
সময় পাল্টাবে, কথা কিছুই চাপা থাকবে না। কানে কানে ফোনে ফোনে সব কথাই মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে। মানুষের উপর যে অমানবিক অত্যাচার হচ্ছে তার জন্য সত্যিই কি আব্বাস দায়ী, নাকি রাজনীতির কথা বলাটাই তার অপরাধ ছিল। আর যারা অত্যাচার চালালো তারা সব সাধুপুরুষ বুঝি।
বাংলার একমাত্র বঞ্চিত সমাজের প্রতিনিধি তার জেতা কেন্দ্রে ডুকতে পারছে না। এটাই বুঝি গনতন্ত্র ? সে শুধু একজন বিধায়ক নয়, ফুরফুরার শরিফের দাদাহুজুরের পোতা, বাংলায় যাদের দল এবার আট লাখের উপর ভোট পেয়েছে, যাদের রাজনীতির বাইরেও অন্তত ৫০ লাখ একনিষ্ঠ ভক্ত আছে। এহেনো নৌসাদ সিদ্দীকির যদি এই দশা হয় তাহলে বাংলায় গনতন্ত্র কতটুকু সুরক্ষিত ভেবে দেখুন। একদিন এরা প্রশ্ন তুলবে এত অত্যাচার কেন ? তিন কোটি মুসলমান দেরিতে হলেও বুঝবে এই অত্যাচারের আসল উদ্দেশ্য কি ? দলিত মুসলিম আদিবাসী মতুয়ারাও একদিন বুঝতে পারবে এটা কি শুধুই আব্বাস আর নৌসাদের বিরুদ্ধে লড়াই, নাকি সমগ্র পিছিয়ে পড়া সমাজকেই পিছিয়ে রাখার পরিকল্পনা।
এর আগে মিমকে কিভাবে ধ্বংস করা হয়েছে তা নিশ্চয়ই সকলের ভোলার কথা না। মিথ্যা গাঁজা কেস, রেপ মার্ডার কিছু বাকি ছিল না। পরে পুলিশের তাড়াকরা মিমের নেতাদের তৃনমূল ভবনে সম্ভর্ধনা নিশ্চয়ই মনে আছে ? মৌলানা সিদ্দিকুল্লাকে কেনা হয়েছিল ঠিক একই কারনে ইউ ডি এফকে ধ্বংস করার জন্য। ঠিক একই ভাবে রাজ্যের সমস্ত গনতান্ত্রিক শক্তিকে একে একে ধ্বংস করা হয়েছে। আপনার জন্য শুধু একটাই অপশান পড়ে আছে, যদি বি জে পি করতে চান,যেটা আপনি করবেন না, উনি খুব ভালো করে জানেন।
সময় কাউকেই ক্ষমা করে না।বামফ্রন্টের মত দুর্ধর্ষ শক্তিকেও শুন্য করে দিল। কেউই চিরজীবন ক্ষমতায় থাকে না। যারা মানুষের জন্য কিছু করে যায়,ইতিহাস তাদের মনে রাখে। আর যারা মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, ইতিহাস তাদের মুছে দেয়। তাও মানুষ যখন সুযোগ পায় তখন কেন মানুষের জন্য ভালো কিছু না করে, চিরজীবন ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য মানুষের উপর অত্যাচার করে ? মুখ্যমন্তীর কাছে এখনও সুযোগ আছে, তার দলের অত্যাচারী শয়তান গুলিকে বহিষ্কার করে, মানুষের ভালোবাসা ও বিশ্বাসের মর্যাদা রাখুন। ভালোবাসায় যে শক্তি আছে বন্দুকের নলে তা নেই।