|
---|
শতবর্ষেও বঞ্চনার শিকার প্রথম সোনা জয়ী বাঙালি সাঁতারু
নিজস্ব সংবাদদাতা- এশিয়াডে ভারতের প্রথম সোনা জয়ী সাঁতারু শচীন নাগ। কিন্তু হয়তো আজকের মানুষের কাছে নামটা অচেনা। আরও একটা বছর চলে গেল কিন্তু ভারতের সর্বকালের সেরা প্রয়াত সাঁতারুর ভাগ্যে জুটল না কোনও রাষ্ট্রীয় ক্রীড়া সম্মান। প্রধানমন্ত্রীর দফতরে আবেদন জানিয়েও কোন সম্মান জুটলো না তার ঝুলিতে।
১৯৫১ সালে দিল্লিতে প্রথম এশিয়াডে ১০০ মিটার ফ্রি স্টাইলে সোনা পেয়েছিলেন শচীন নাগ। সেটাই ছিল এশিয়ান গেমসের ইতিহাসে ভারতের প্রথম সোনা। তারপর ১৯৫১ সাল থেকে ২০১৮ সালের এশিয়াড পর্যন্ত ৬৭ বছরে সাঁতারে ভারত কখনও সোনা জেতেনি। খাজান সিং, বীরদয়াল খাদেরা এশিয়াডে পদক পেলেও তার রং সোনালি ছিল না। খাজান রুপো আর বীরদয়াল ব্রোঞ্জ পেয়েছিলেন। অথচ এই দু’জনেই ‘অর্জুন’ পুরস্কার পেয়ে গিয়েছেন সাফল্যের সঙ্গে সঙ্গে। অথচ বাদ রয়ে গিয়েছেন শচীন নাগ। যিনি দিল্লি এশিয়াডে শুধু একটা সোনা নয়, দুটো ব্রোঞ্জও পেয়েছিলেন রিলেতে। দুটি অলিম্পিকে দেশের প্রতিনিধিত্বও করেছিলেন সাঁতারু কাম ওয়াটারপোলো খেলোয়াড় হিসেবে। ১৯৪৮ সালে লন্ডন অলিম্পিকে ভারত ওয়াটারপোলোয় ৭-৪ গোলে চিলিকে হারিয়ে হইচই ফেলেছিল। ভারতের সাত গোলের চারটে একাই করেছিলেন কিংবদন্তি শচীন। অথচ ১৯৮৭ সালে তিনি মারা যাওয়ার আগে তো নয়ই, মৃত্যুর ৩২ বছর পরেও পেলেন না রাষ্ট্রীয় পুরস্কারের সম্মান।
শচীন নাগের হাতেই তৈরি ইংলিশ চ্যানেল বিজয়িনী আরতি সাহা-ও পদ্মশ্রী পেয়েছিলেন। কিন্তু শচীন নাগের কোনও স্বীকৃতি জোটেনি।’
১৯৮৭ সালে হাওড়ায় ডুমুরজলায় নিজের ফ্ল্যাটে ৬৭ বছর বয়সে মারা গিয়েছিলেন শচীন নাগ। তখন থেকেই বিভিন্ন মহলে দাবি উঠেছিল শচীন নাগকে মরণোত্তর ‘অর্জুন’ বা ‘পদ্মশ্রী’ দেওয়া হোক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কেউই এ নিয়ে তদ্বির করেননি। শচীনবাবুর ছেলে অশোকই শুধু গত তিরিশ বছরে দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে চলেছেন। চিঠিচাপাটির পাহাড় জমিয়ে ফেলেছেন। এশিয়ান সুইমিং ফেডারেশন থেকে কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রক। রাজ্যের ক্রীড়াদপ্তর থেকে প্রভাবশালী মন্ত্রী-আমলা সকলের কাছে আর্জি জানিয়েছেন। কিন্তু কেউই কথা রাখেনি। ষাটোর্ধ্ব অশোক বললেন, ‘এখনকার মন্ত্রী-আমলাদের কাছে গেলে শুনতে হয়, শচীন নাগ কোন সময়ে সাঁতার কাটতেন? সব শুনেও কেউ বাবার নাম সুপারিশই করেননি। এ সব দেখেই এ বার আমি সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে চিঠি লিখি। যাবতীয় তথ্যপ্রমাণ দিয়ে। তারপর দু’বার ওই মন্ত্রকে যোগাযোগ করলে শুনি ব্যাপারটা প্রসেসের মধ্যে আছে। আশা করেছিলাম এ বার হয় তো সুসংবাদ আসবে। কিন্তু এল না।’
বর্তমানে ‘অর্জুন’ পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে শুধু জীবিত ক্রীড়াবিদদেরই। আর যাঁরা ‘অর্জুন’ থেকে বঞ্চিত তাঁদের দেওয়া হচ্ছে ‘ধ্যানচাঁদ’ পুরস্কার। অশোকের কথায়, ‘সব থেকে কষ্টের কী জানেন, কয়েক বছর আগে ধ্যানচাঁদ পুরস্কার বাছাই কমিটিতে ছিলেন খাজান সিং। কিন্তু সাঁতারু হয়েও খাজান বাবা-র নাম সুপারিশ করেনি। এ বারও আমি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে যে চিঠি লিখেছিলাম তাতে বাবাকে মরণোত্তর ‘ধ্যানচাঁদ’ পুরস্কার দেওয়ারই দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু সেটাও মিলল না।’ অশোক অবশ্য আশা ছাড়েননি অনলাইনে ‘পদ্মশ্রী’ দেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। অশোকের মন্তব্য, ‘যত দিন বাঁচব, বাবার সম্মানের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাব। জানি না কোনও দিন সুসংবাদ আসবে কিনা?’
অশোকের গলায় আকুতি-আর্তি-যন্ত্রণা মিলেমিশে একাকার।