কাজে ‘নিজের লোক’ নিয়োগের তত্ত্বে কি এ বার সিলমোহর দিল কলকাতা পুরসভাও?

নিজস্ব সংবাদদাতা : কাজে ‘নিজের লোক’ নিয়োগের তত্ত্বে কি এ বার সিলমোহর দিল কলকাতা পুরসভাও? নিয়োগ-দুর্নীতি নিয়ে রাজ্য রাজনীতি যখন তোলপাড়, তারই মধ্যে পুরসভার সাম্প্রতিক এক সিদ্ধান্ত ঘিরে এই বিতর্ক শুরু হয়েছে।পুরসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, উপযুক্ত কারণ ছাড়া ১০০ দিন প্রকল্পের কর্মীকে ইচ্ছে মতো বদল করা যাবে না। কারণ, কাউন্সিলরদের একাংশ কর্মরত ব্যক্তির পরিবর্তে অনেক জায়গাতেই নিজের লোক ঢোকাচ্ছেন বলে পুর প্রশাসন জানতে পেরেছে। পুরকর্তাদের একাংশের বক্তব্য, এমনিতে ১০০ দিন প্রকল্পে নিজের লোক নিয়োগের রেওয়াজ বরাবরই রয়েছে। কাউন্সিলরেরা বরাবরই সেটা করে থাকেন। কিন্তু সাম্প্রতিক কালের মতো এত বেআব্রু ভাবে তা আগে হয়নি। গত পুর নির্বাচনে শাসকদলের অনেকে নতুন কাউন্সিলর হয়েছেন। আবার অনেক জায়গায় বিরোধীদের ওয়ার্ড শাসকদলের দখলে এসেছে। এমন সব ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলরদের একাংশ পুরনো কাউন্সিলরের নিয়োগ করা কর্মী বাতিল করে সেখানে নিজের লোক নিয়োগ করছেন বলে অভিযোগ। সে কারণেই তড়িঘড়ি পুর কর্তৃপক্ষকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে।মেয়র ফিরহাদ হাকিম ইতিমধ্যেই কাউন্সিলরদের উদ্দেশে বার্তা দিয়েছেন, নিতান্ত প্রয়োজন না হলে, যেমন ১০০ দিনের কোনও কর্মীর শারীরিক অসুস্থতা, সেই কর্মীর ধারাবাহিক ভাবে ঠিক সময়ে কাজে না আসা অথবা কাজ ঠিক মতো না করা কিংবা তাঁর অন্যত্র চাকরি পেয়ে যাওয়া—এমন সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া সংশ্লিষ্ট কর্মীর পরিবর্তে নিজের লোককে সেখানে নিয়োগ করা যাবে না। ফিরহাদের কথায়, ‘‘১০০ দিনের কাজ শহরের দরিদ্র মানুষের জন্য। সেখানে রাজনীতি বা অন্য কারণ দেখা উচিত নয়। তবু অনেক জায়গাতেই পুরনো কর্মীদের বাতিল করে কাউন্সিলরেরা নিজের লোক নিয়োগ করছেন। এটা গরিব মানুষদের প্রতি অন্যায়। এটা করা যাবে না।’’

    বিরোধীদের একাংশের অবশ্য বক্তব্য, শাসকদলের নেত্রীই তো চাকরিতে ‘নিজের লোক’ নিয়োগ তত্ত্বকে পরোক্ষে সমর্থন করেছিলেন। ফলে তাঁর দেখানো পথেই দলের কাউন্সিলরেরা হেঁটেছেন। উল্লেখ্য, গত সোমবার এক অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, কোন চাকরির ক্ষেত্রে ১০০ জনকে চাকরি দিতে গেলে একটা নিজের লোককে কেউ দেয় না? মুখ্যমন্ত্রীর সেই বক্তব্য ঘিরে বিতর্কও শুরু হয়েছে।তবে বিরোধীদের যুক্তি উড়িয়ে দিয়েছেন পুর কর্তৃপক্ষ। তাঁদের বক্তব্য, এই যুক্তির সারবত্তা নেই। তেমনটা হলে বিষয়টি নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্যই করা হত না। কিন্তু, তা হয়নি। বরং বিষয়টি জানতে পারা মাত্র কাউন্সিলরদের এই কাজটি করতে বারণ করা হয়েছে এবং গরিব মানুষদের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হয়েছে। কাউন্সিলরদের এ-ও বলা হয়েছে, ১০০ দিন প্রকল্পে কোনও কর্মী বদলের প্রস্তাব আগে পাঠাতে হবে ওই প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ রাম পেয়ারে রামের কাছে। তিনি প্রস্তাবটি অনুমোদন করলে তবেই নতুন কর্মী নিয়োগ করা যাবে। মেয়র পারিষদ এ বিষয়ে বলছেন, ‘‘বরো কমিটির মাধ্যমে আগে আমার কাছে ফাইল আসবে। ফাইলে অনুমোদন দিলে তবেই বর্তমান কর্মীর জায়গায় অন্য কর্মীকে নিয়োগ করা যাবে। নিজের পছন্দ মতো সেই কাজ করা যাবে না।’’তবে পুর কর্তৃপক্ষ পদক্ষেপ করলেও কাজে ‘নিজের লোক’ নিয়োগ বিতর্ক এত তাড়াতাড়ি থামবে কি? তা অবশ্য মনে করছেন না কেউই!