জানেন কি এই দেশীয় ভাষায় সংবাদপত্রের সূচনা কোথায় হয়েছিল? প্রথম কোন ভারতীয় ভাষায় সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়েছিল?

নিজস্ব সংবাদদাতা : প্রতিদিন সংবাদপত্রের মাধ্যমে দেশ-বিদেশের খুঁটিনাটি খবরা খবর পৌঁছে যায় জনগণের কাছে তাদের পছন্দের ভাষায়। হাজারো সাংবাদিক প্রতিদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলে শুধুমাত্র সংবাদ গুলি কে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। তবে জানেন কি এই দেশীয় ভাষায় সংবাদপত্রের সূচনা কোথায় হয়েছিল? প্রথম কোন ভারতীয় ভাষায় সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়েছিল? এর উত্তর- প্রথম ভারতীয় ভাষায় সংবাদপত্রের জন্মস্থান হল হুগলির শ্রীরামপুর। প্রথম যে ভারতীয় ভাষায় সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়েছিল সেটি হল বাংলা। সংবাদপত্রের নাম সমাচার দর্পণ।

    ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুর ব্যাপ্টিস্ট মিশনারিতে প্রথম বাষ্প চালিত ছাপার যন্ত্র নিয়ে আসা হয়। পঞ্চানন কর্মকার তৈরি করেন প্রথম বাংলা হরফের ব্লক । তার পর থেকে বাংলা ভাষাতে প্রকাশিত হতে শুরু হয় বাইবেল, রামায়ণ, মহাভারত থেকে শুরু করে অন্যান্য পৌরাণিক গ্রন্থ গুলিও। পরবর্তীতে ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে জন ক্লার্ক মার্শম্যানের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় প্রথম বাংলা ভাষায় প্রকাশিত সংবাদপত্র যার নাম ছিল সমাচার দর্পণ।মাসিক এক টাকা মূল্যের এই পত্রিকার মধ্যে স্থান পেতো ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক মতবাদ, বিজ্ঞানভিত্তিক প্রতিবেদন ও অন্যান্য। এই পত্রিকাটি ছিল সাপ্তাহিক। ১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ মে তারিখে প্রথম প্রকাশিত হয় এই পত্রিকা। সম্পাদক ছিলেন জন ক্লার্ক মার্শম্যান। কিন্তু তিনি ছিলেন নামেমাত্র সম্পাদক। বাঙালি পণ্ডিতরাই আসলে সমাচারদর্পণ সম্পাদনা করতেন। পত্রিকাটি ধর্মীয় বির্তকে না জড়িয়ে খ্রিস্টান মতবাদের প্রতি পক্ষপাত দেখাতো।পরবর্তীকালে এই পত্রিকাটি সপ্তাহে দুবার করে প্রকাশিত হতে থাকে। জয়গোপাল তর্কালঙ্কার বাংলা সংবাদ রচনা ও সঙ্কলনে সম্পাদকের সহায়ক ছিলেন বলে তা উন্নতমানের সংবাদপত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে সমর্থ হয়েছিল। সে আমলে প্রগতিশীল পত্রিকা হিসেবে এর বিশেষ গুরুত্ব ছিল। মূলত ১৮৪১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই পত্রিকা সাপ্তাহিক রূপে প্রকাশিত হতে থাকে। তবে পরেও কয়েকবার এই পত্রিকা পুনঃপ্রকাশিত হয়েছিল।

    সমাচার দর্পণের মত সাময়িকপত্রের মধ্যে দিয়ে শিক্ষিত বাঙালি প্রথম গদ্যরচনার রস গ্রহণ করতে শেখে। তখনকার বাংলা সাহিত্য বলতে সবই পদ্য রচনা ছিল। সমাচারদর্পনের প্রকাশ হবার ফলে পাঠকের সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং আরও সাময়িকপত্রের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। এর ফলে বাংলা গদ্য সাহিত্যের ভবিষ্যৎ উন্নতির পথও প্রশস্থ হয়।