বছরে 360 দিন রোজা রাখেন ডঃ মুনকির হোসেন

মহম্মদ রিপন, মুরারই: কথাটা শুনে হয়তো চমকে উঠলেন কিন্তু এটাই ঠিক। রসায়ন বিজ্ঞানের অনুঘটক নিয়ে দীর্ঘদিনের গবেষক ডক্টর মুনকির হোসেন 365 দিনের মধ্যে 360 দিনই রোজা রাখেন। 24 বছর তিনি টানা এভাবেই রোজা রেখে যাচ্ছেন। এক বছরে মাত্র পাঁচটি দিন রোজা রাখা ইসলাম ধর্মে মানা আছে ঈদুল ফিতর ,ঈদুল আজহা ও ঈদুল আযহার ঈদের পরের 3 দিন এই পাঁচটি দিন বাদে তিনি সবগুলো রোজাই রাখেন।ডক্টর মুনকির হোসেন বীরভূম জেলার পাইকর থানার খুঁটকাইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন 1954 সালের 20 সেপ্টেম্বর। ছোটবেলা থেকেই তিনি মানুষ হয়েছেন ভীমপুরে নানি সাহেবা বিবি ও নানা মাজেদ সেখের কাছে। মুনকির সাহেব সাক্ষাৎকারে জানান তার ছোট বেলার দিন গুলো এতই কষ্ট করেছিল যে সেগুলো মনে পড়লেই চোখে জল চলে আসে। দারিদ্রতা ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী, এক বেলা খেয়ে আর এক বেলা না খেয়ে কাটিয়ে দিতে হয়েছে। বাবা ফায়েজ শেখ একজন দিনমজুর ছিলেন মা রাজিয়া বিবি ছিলেন গৃহবধূ। তাদের পুঁথিগত বিদ্যা বলতে কিছুই ছিলনা। তিনি বলেন আমার খুব মনে পড়ে দারিদ্রতার তাড়নায় পড়ে একবার মায়ের গয়না বিক্রি করে আব্বা পাকুড় থেকে চাল কিনে এনেছিল বলেই আমাদের বাড়িতে রান্নার হয়েছিল। ছোটবেলায় মক্তবে তিনি পড়াশোনা করেন,পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত নয়াগ্রাম জুনিয়র হাই মাদ্রাসাতে, তারপর পাইকর উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা। 1972 সালে হায়ার সেকেন্ডারি পাস করে হেতমপুর কলেজে কেমিস্ট্রি অনার্স নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। তারপর 1985 সালের দিকে কিছুদিন মুরারাই কবি নজরুল কলেজে অধ্যাপনা করেন। 1986 থেকে 90 সাল পর্যন্ত বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণায় নিযুক্ত হন। সেখান থেকে গবেষণা ডিগ্রী হাসিল করে যান মুম্বাই আই আই টিতে। তারপর সেখান থেকে ফেলোশিপ নিয়ে সরাসরি তাইওয়ান সেখানে তিনি 16 বছর টানা কাজ করেছেন। তাইওয়ান থেকে ডাক পান জাপানে সেখানে তিনি 28 মাস গবেষণার কাজে যুক্ত ছিলেন।

    সাক্ষাৎকারে মুনকির হোসেন সাহেবকে তার দৈনন্দিন জীবনযাত্রা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন-আমি সবসময় কাজের মধ্যেই ব্যস্ত থাকতে পছন্দ করি, বিদেশে যখন থাকতাম তখনও সে নিয়ম মেনে চলেছি, তাই বলে নামাজ রোজা কখনোই বাদ দিই নি। আমার স্বপ্ন ছিল একটা বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করার। সেটা অবশ্য সম্ভব হয়েছে । 60 বিঘা জমির ওপর পাইকর থানার ভীমপুরে দারুল হোদা ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। কেরালা, ঝাড়খন্ড, বিহার, বাংলা ইত্যাদি রাজ্যগুলো থেকে বর্তমানে বেশ কিছু ছাত্র ছাত্রী পঠন পাঠন করছে।তবে আমার আরেকটি স্বপ্ন সেখানে মাতৃসেবার জন্য একটি প্রসূতি বিভাগের হাসপাতাল তৈরি করা। ডক্টর মুনকির হোসেন বাংলা তথা সারা ভারতবর্ষের বুকে চির উজ্জ্বল হয়ে থাকবেন সর্বদা। তার সমাজ সেবা মূলক কাজ, বিপদে আপদে মানুষ থাকে সব সময় পাশে পেয়েছে। সারা জীবনে তিনি যা উপার্জন করেছেন তার 90% ব্যয় করেছেন সমাজসেবামূলক কাজের জন্য।